২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:১৪

গাজীপুরে সরকারি গাছ কাটল চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গাজীপুরের কালীগঞ্জে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের বিরুদ্ধে সামাজিক বনায়নের প্রায় অর্ধশতাধিক সরকারি গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানেও মিলেছে অভিযোগের সত্যতা। আর সামাজিক গাছ কেটে নেওয়ায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে বন বিভাগের আইনি ব্যবস্থা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর আঞ্চলিক বন মামলা পরিচালক মো. আবু জাফর। এ ঘটনা ঢাকতে চেয়ারম্যান-মেম্বার আর গাছ ব্যাপারী করছে লুকোচুরি।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সামাজিক বনায়নের কর্মসূচী হিসেবে ১৯৭৫ সালে উপজেলার দোলন বাজার-জাঙ্গালীয়া ও চান্দেরবাগ-নারগানা সড়ক এলাকার দুই পাশে তৎকালীন স্থানীয় সাংসদ, বর্তমান মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপি’র বাবা, ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ ময়েজউদ্দিন আহমেদ কিছু গাছের চারা রোপন করেন। তারই অংশ হিসেবে পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে ওই এলাকায় আরো কিছু গাছের চারা রোপন করেন সে সময়কার সাংসদ আখতারউজ্জমান। আর সামাজিক বনায়নের প্রায় অর্ধশতাধিক সরকারি গাছ কেটে নেন জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান খান ফারুক মাস্টার এবং ওই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মেম্বার ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম নুরী।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জামালপুর ইউনিয়নের জামালপুর-জাঙ্গালীয়া ও চান্দেরবাগ-নারগানা সড়ক এলাকার দুই পাশের শিশু, মেহগনি, আকাশী ও নিমসহ বিভিন্ন প্রজাতের প্রায় অর্ধশতাধিক গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে অনুসন্ধান চালানো হয়। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ঘটনার সত্যতা। এ ব্যাপারে জান্নাতুল ফেরদৌস স মিলের সত্ত্বাধিকারী মো.নাছির উদ্দিন জানান, তিনি হজ্বে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হাবু ব্যাপারী তার ছ মিলে ওই গাছগুলো কাটার জন্য নিয়ে আসে। কিন্তু সরকারি গাছ হওয়ায় তিনি সে গাছ কাটেননি। কিন্তু শনিবার তার অনুপস্থিতিতে বৃষ্টির মধ্যে পিকআপ ভ্যানে করে সে গাছ সরিয়ে নেন।  কোথা থেকে আনা হয়েছে এ গাছ এমন এক প্রশ্নের জবাবে নাছির জানান, গাছগুলো চান্দেরবাগ এলাকার রাস্তার পাশের। তবে তিনি লোকমুখে শুনেছেন হাবু ব্যাপারী স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক মাস্টারের কাছ থেকে কিনেছেন। হাবু ব্যাপারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তা বন্ধ থাকায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. নুরুল ইসলাম নুরী মোবাইলে বলেন, এসে জেনে জান, বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান খান ফারুক মাস্টার জানান, দোলান বাজার-জাঙ্গালীয়া সড়কে নুরুল ইসলাম মেম্বার একটি ঘরের উপর ঝড়ে পড়ে যাওয়া দুইটি গাছ কেটেছেন লাগড়ির জন্য। পরে তিনি শুনতে পান কাপাইশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পার্শ্বে ৪টি গাছ কে বা কারা কেটে নিয়ে গেছে।

তিনি আরো জানান, ওই গাছগুলো ইলেকট্রিক লাইনের নিচ দিয়ে যাওয়ার ফলে বিদ্যুৎ অফিসের লোকেরা দুর্ঘটনা এড়াতে প্রায় অর্ধেক কেটে রেখে ছিল। এ ব্যাপারে লোকজন লাগানো হয়েছে কিন্তু কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান ছ মিলে গাছ দেখার সত্যতা স্বীকার করে জানান, অভিযুক্তদের খবর দিয়ে তার অফিসে আনা হয়েছিল। তারা ঝড়ে পড়ে যাওয়া ৪-৫টি শুকনো গাছ লাকড়ির জন্য কেটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে স্বীকার করেছে। পরে তিনি বিষয়টি স্থানীয় বন বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন।

গাজীপুর আঞ্চলিক বন মামলা পরিচালক মো. আবু জাফর বলেন, বিষয়টি তাকে ইউএনও সাহেব অবহিত করেছেন। গাছগুলো এলজিইডির বলেও তিনি জানান। তাছাড়া গাছ কাটার বিষয়টি তিনি সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানেন। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সামাজিক বিধি মালার আওতায় মামলা করা হবে।

দৈনিকদেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :আগস্ট ১৫, ২০১৭ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ