২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১১:২৪

দুই সপ্তাহে দুই বার লাফ দিয়েছে পেঁয়াজের দাম

অর্থ ও বানিজ্য ডেস্ক:

দুই সপ্তাহে দুই বার লাফ দিয়েছে পেঁয়াজ। এরই ফাঁকে দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। প্রথম লাফে ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা। আর দ্বিতীয় লাফে পৌঁছেছে ৬০ টাকায়। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে ৩০ টাকার পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকায় পৌঁছে যাওয়ার ঘটনাকে ক্রেতাদের কাছে অস্বাভাবিক মনে হলেও সরকার এবং বিক্রেতারা দেখছেন স্বাভাবিক হিসেবে। তাদের যুক্তি, পেঁয়াজ আমদানির প্রধান উৎস ভারতে দাম বেড়ে যাওয়ায় এ দেশেও বাড়ছে। তবে দেশী পেঁয়াজের দাম কেন বাড়ছে? এর সহজ উত্তর, ভারতীয়টার দাম বাড়ায় দেশীটার দামও বাড়ছে। উভয় পক্ষই বলছে, কোরবানির ঈদের আগে পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা নেই।

গতকাল রাজধানী ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে দেশী পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। আগের সপ্তাহে দাম বেড়েছিল ২০ টাকা। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ গত সপ্তাহে ১২ টাকা বৃদ্ধির পর গতকাল আবারো বেড়েছে ১৫ টাকা। গত সপ্তাহে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ গতকাল বিক্রি হয় ৫৫ টাকা দরে। দুই সপ্তাহ আগেও আকারে কিছুটা বড় ভারতীয় এ পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২২ থেকে ২৫ টাকায়। সরবরাহ ঘাটতির কারণে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বৃদ্ধির সাথে সাথে দাম বাড়িয়ে দেয়া হয় দেশের বাজারে। তাল মিলিয়ে বাড়ানো হয় দেশী পেঁয়াজের দামও।

পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরিভিত্তিতে ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বৈঠক থেকে কোনো সুসংবাদ আসা তো দূরের কথা, উল্টো সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, পেঁয়াজের দাম সহসা কমছে না। তবে রসুনের দাম কিছুটা কমেছে বলে জানান বিক্রেতারা। খুচরা বাজারে গতকাল দেশী রসুন ৯০ থেকে ১০০ টাকা এবং ভারতীয় রসুন ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।

মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এক কেজি গুঁড়া চিংড়ির দাম হাঁকা হচ্ছে ৫৬০ টাকা। মাঝারি আকারের চিংড়ির কেজি ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়ার কথা বলা হলেও বাজারে ইলিশের দাম কমেনি। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকাদরে।

গুইলশা মাছের কেজি হাঁকা হচ্ছে ৭০০ টাকা। রূপচাঁদা, বাইম, বেলে, পাবদা, কোরাল প্রভৃতি তো কেবলই বড়দের খাবার। দাম ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। চাষের রুই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিদরে। কমের মধ্যে পাংগাশের কেজি ১৪০ থেকে ১৬০, মৃগেল ১৫০ থেকে ১৮০, তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা এবং চাষের কৈ পাওয়া যাচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিদরে।

এ দিকে বন্যার অজুহাতে বেড়ে যাওয়া সবজির দাম কমার কোনো নামই নেই। উল্টো সুযোগ বুঝেই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বিক্রেতারা। গতকাল রাজধানী ঢাকার কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, শাক-সবজির সরবরাহ স্বাভাবিকই আছে। তবে দাম অস্বাভাবিক।

বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে করল্লা-ঢেঁড়শ। ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কাকরোল, পটোল প্রভৃতি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। বাজারে গতকাল প্রতিটি লাউ ৫০ থেকে ৭০ টাকা, জালি কুমড়া ৩০ থেকে ৪৫ টাকা, কলার হালি ২৪ থেকে ৩০ টাকা, বরবটির কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কচুর লতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৭০ টাকা এবং কচুমুখি ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিদরে বিক্রি করতে দেখা যায়। আলুর কেজি ২ টাকা বেড়ে হয়েছে ২৪ থেকে ২৫ টাকা।

সবজির দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার কথা উল্লেখ করে মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা সোলায়মান বলেন, বন্যার কারণে সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সবজির আমদানি কম।

তিনি বলেন, আমরা কম দামে কিনতে পারলে কম দামে বিক্রি করি। বেশি দামে কিনলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়। পাইকারি বাজারে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক খুচরা বিক্রেতা দোকান খুলতেই সাহস পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেয়ার কারণে পাইকারিতে সবধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকা কমলেও খুচরা বাজারে এর তেমন প্রভাব পড়েনি। খুচরা বিক্রেতারা এখনো মোটা চাল ৫৪ থেকে ৫৬ এবং সরু চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজিদরে বিক্রি করছেন।

খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেটের চাল বিক্রেতা আবুল হোসেন গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, শুনেছি পাইকারিতে দাম কিছুটা কমেছে। কিন্তু আমার দোকানে এখন যে চাল আছে এগুলো আগের কেনা। বেশি দামে কিনতে হয়েছে বলে কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই। তবে নতুন দামে কেনার পর তিনিও দাম কমাবেন বলে জানান আবুল হোসেন।

দৈনিকদেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :আগস্ট ১২, ২০১৭ ৮:০০ অপরাহ্ণ