আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতীয় কৃষকরা কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের ‘গো-রক্ষা’ নীতি মানতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ভারতীয় গণমাধ্যম দেশটির সরকারি সমীক্ষায় এবার তা উঠে এসেছে বলে খবর দিয়েছে। আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এত দিন এই আশঙ্কার কথা বলছিল কৃষক সংগঠনগুলি। তাতে অর্থনীতিবিদরাও সায় দিচ্ছিলেন । এবার খোদ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকেই সেই সতর্কবার্তা দেয়া হল।
ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শুক্রবার যে আর্থিক সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে সুকৌশলে বলা হয়েছে, গবাদি পশু জবাইয়ে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা টানা হলে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকরাই। সমীক্ষার কোথাও সরাসরি গবাদি পশু জবাইয়ে নিষেধাজ্ঞা বা গোরক্ষক বাহিনীর উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু বলা হয়েছে, কর্মক্ষমতা হারানোর পরে পশুপালকদের রুটিরুজি নির্ভর করে গবাদি পশুর দামের উপরেও । এমনিতেই কৃষি থেকে আয় কমে যাচ্ছে। কোনও ‘সামাজিক নীতি’র জেরে পশুর মাংস বেচে আয় বন্ধ হলে এবং বুড়ো গবাদি পশুকে বসিয়ে খাওয়াতে হলে, কৃষক-পশুপালকদের আয় আরও কমবে। এই সব ‘সামাজিক নীতির’ ফলে সমাজের ক্ষতিই হবে।
আর্থিক সমীক্ষা তৈরি করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তা সংসদে পেশ করেছেন। আনন্দবাজার বলছে- মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এই ‘সামাজিক নীতি’ কি গবাদি পশু জবাইয়ে নিষেধাজ্ঞা? জবাব তিনি বলেন, ‘‘ আমাকে এই সব প্রশ্ন করে বিপদে ফেলবেন না।’’ কিন্তু আর্থিক সমীক্ষায় গরু-জবাই বন্ধ ঘিরে বিপদের কথা উল্লেখ করায় অনেকেরই বক্তব্য, সঙ্ঘ-পরিবারের উগ্রহিন্দুত্ব নিয়ে মোদী সরকারের মধ্যেই আপত্তি রয়েছে।
মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাড়াবাড়ি শুরু গোমাংস নিয়ে। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলিমদের একের পর এক পিটিয়ে হত্যা হয় এক দিকে গোমাংস রাখার অভিযোগে। অন্য দিকে গোমাংসে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা টানার চেষ্টা। অভিযোগ ওঠে, সরকার মানুষের খাদ্যাভাস নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কিন্তু তাতেও না থেমে হাটেবাজারে কোনও গবাদি পশুই জবাইয়ের উদ্দেশ্যে কেনাবেচা করা যাবে না বলে নিয়ম জারি করে। যদিও দেশটির সুপ্রিমকোর্ট সরকারের এ সিদ্ধান্তের ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর আগেই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল কৃষক, পশুপালক, মাংস রফতানি ও চামড়া শিল্পমহল থেকে। এ বার আপত্তি উঠল সরকারের ভেতর থেকেই ।
সিপিএমের কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘কৃষকদের আয়ের ৭০ ভাগ আসে জমি থেকে। বাকিটা পশুপালন থেকে। কৃষকরা আত্মহত্যা করছেন চাষের ক্ষতি সামলাতে না পেরে। দুধ দেয়া বা মাঠে হাল টানা বন্ধ করার গরু-মোষ পালন করতে হলে তার খাওয়া খরচ কোথা থেকে আসবে?’’
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক বিকাশ রাওয়াল বলেছেন, ‘‘বছরে ৩.৭ কোটি পুরুষ গরু-মোষ জন্ম হয়। জবাই বন্ধ হলে এদের খাবারের পিছনে বছরে ৫.৪ লাখ কোটি টাকা খরচ হবে।’’ রাওয়ালের প্রশ্ন, এই আর্থিক দায়ভার কি সরকার বইতে রাজি? এমন পরিস্থিতিতে তাহলে কি ভারত গো-রক্ষার নীতিতে পরিবর্তন আনছে যাচ্ছে ? তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট হয়নি। তবে সেটাই চাচ্ছেন দেশটির কৃষক ও মুসলিমসহ অর্থনীতিবিদরা।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি