নিজস্ব প্রতিবেদক:
অল্প জায়গায় স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় রাজবাড়ীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ড্রাগন ফলের চাষ। স্বল্প পরিসরে বাগানে, ফসলি জমিতে, এমনকি বাড়ির ছাদে টবে ড্রাগন রোপন করে অর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন এখন অনেকে। রাজবাড়ীতে এই ড্রাগন ফল মানুষের কাছে নতুন। গত ২-৩ বছর ধরে এটি পরিচিতি পাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ভেষজ গুণ থাকায় রাজবাড়ীতে প্রায় প্রতিটি বাসা বাড়ির আঙ্গিনায় ও ছাদে ব্যাপক ভাবে শুরু হয়েছে ড্রাগন ফলের চাষ।
রাসায়নিক সার ও কিটনাশক ছাড়াই ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। শুধু একটু পরিচর্যা করলেই ড্রাগন গাছে ফল ধরে। তাই অনেক গৃহবধূ ও চাষিরা ড্রাগন ফলের চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
দেখতে সুন্দর সুস্বাদু ও অধিক পুষ্টিগুণ থাকায় রাজবাড়ী জেলার মানুষের মাঝে দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ ড্রাগন ফলের চাষ। ড্রাগন ফলের গাছ দেখতে ক্যাকটাসের মতো। পাতাবিহীন এ গাছ দেখে অনেকেই একে ক্যাকটাস বলে মনে করেন। ডিম্বাকৃতির উজ্জ্বল গোলাপি রঙের এ ফলের নাম শুনলে কেমন জানি অদ্ভুত মনে হয়।
২০১১ সালে রাজবাড়ী হর্টিকালচার সেন্টারে পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষের জন্য প্রয়োজন দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। বছরে একটি ড্রাগন গাছ থেকে প্রায় ১৪০টি ফল পাওয়া যায়। এসব ফল আকার ভেদে ৪৫০-৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়ে থাকে।
জেলা সদরের শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নের রূপপুর গ্রামের ড্রাগন ফলের বাণিজ্যিক চাষি গফুর কাজী জানান, তিনি ১০ শতাংশ ফসলি জমিতে ৪০টির অধিক ড্রাগন গাছের চাষ করেছেন। প্রত্যেকটি গাছই এখন ফুলে ফলে ভরা। ইতোমধ্যে তিনি প্রায় এক মণের বেশি ড্রাগন ফল ঢাকায় প্রতি কেজি তিনশ’ টাকা থেকে চারশ’ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এতে তার ১০-১২ হাজার টাকার মত বিক্রি হয়েছে। আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত গাছগুলো ফল দেবে বলে আশা করা যাচ্ছে। অন্য ফসলের পাশাপাশি ড্রাগন চাষ অধিক লাভজনক।
জেলা শহরের ১ নম্বর বেড়াডাঙ্গা সড়কের সৌখিন ড্রাগন ফলচাষি কলেজছাত্রী ফারজানা মিম জানান, প্রথমে ঢাকার একটি ফলের দোকান থেকে ড্রাগন ফল কিনে খাওয়ার পর রাজবাড়ীর হর্টিকালচার থেকে এর গাছ সংগ্রহ করে বাড়ির ছাদে টবে রোপন করা হয়। এ বছরও বেশ কিছু ড্রাগন ফল গাছে ধরেছে। ড্রাগন ফল দেখতে সুন্দর খেতেও বেশ সুস্বাদু।
বাড়ির ছাদে বেশ কয়েকটি ড্রাগন ফল গাছ রোপন করেছেন শৌখিন ফলচাষি মো. আল আমিন জানান, বাড়ির ছাদে টবে বা ড্রামের মধ্যে জৈব সারের মাটি ফেলে তাতে ড্রাগন চারা পুতে দিলেই গাছ জন্ম নেয়। ড্রাগন গাছ তিন ফিট উঁচু হলেই একটি শক্ত চিকন খুঁটির সঙ্গে সাইকেলের পুরাতন টায়ার ঝুঁলিয়ে দিলেই ড্রাগন ডালপালা বিস্তার করে। কয়েক মাস পরে ফল আসে। ড্রাগন ফল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি।
জেলা সদরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রকিব উদ্দিন জানান, অল্প জায়গায় স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক ও নানা ধরনের ভেষজগুণ সম্পন্ন হওয়ায় রাজবাড়ীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ড্রাগন ফলের চাষ। স্বল্প পরিসরে এটি বাগানে, ফসলি জমিতে, এমনকি বাড়ির ছাদে টবে ড্রাগন রোপন করে অর্থিক ভাবে লাভবান হওয়া যায়। প্রায় সব ধরনের মাটিতেই ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থসমৃদ্ধ বেলে-দোঁআশ মাটিই ড্রাগন চাষের জন্য উত্তম।
রাজবাড়ী হটির্কালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক নিরুত্তম কুমার জানান, ২০১৫ সালে যুব উন্নয়নের আর্থিক সহায়তায় ড্রাগন চাষে আগ্রহী ২০০ জন কৃষাণ-কৃষাণীকে প্রশিক্ষণ দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। তাদের মধ্যে প্রায় ২ হাজার ড্রাগন চারা বিতরণ করা হয়। বর্তমানে সেই চারাগুলো এখন ফলবান হয়েছে। কৃষক-কৃষাণীদের মুখে হাসি ফুটেছে। তবে এবার অতি বৃষ্টিতে ড্রাগন গাছের বেশ ফুল নষ্ট হয়েছে। আগামীতে যেন এভাবে ফুল নষ্ট না হয় সে জন্য বাগানের ওপর সেড নির্মাণ অথবা প্রতিটি ফুল পলি ব্যাগ দিয়ে মুড়িয়ে দিয়ে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ