নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর ও রাজারবাগ সড়কের দীর্ঘসময়ের ভোগান্তির অবসান ঘটতে চলেছে। রাস্তা জুড়ে থাকা খানা-খন্দে প্রলেপ পড়ছে। তিন সপ্তাহ ধরে তাতে প্রায় ছয় ইঞ্চি পুরু কংক্রিটের ঢালাই দেয়ার কাজ চলছে পুরোদমে।
এই পথ ধরে নিয়মিত চলাচলকারী পথচারী, যাত্রী, চালক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর মুখে মৃদু হাসি ফুটতে শুরু করেছে।
এরই মধ্যে মৌচাক-শান্তিনগর ও রাজারবাগ সড়কের দক্ষিণ-পশ্চিম ও পূর্ব অংশের বড় বড় ক্ষত শুকিয়ে গেছে বলা চলে। এখন সড়কটির উত্তর অংশের ক্ষতে চলছে কংক্রিটের প্রলেপের কাজ।
দীর্ঘ চার বছরের ভাঙা সড়কের দুঃসহ ভোগান্তিকে পেছনে ফেলে এরই মধ্যে উত্তর পশ্চিম অংশ ধরে চলতে শুরু করেছে ভারী যানবাহন।
তবে দীর্ঘ যানজট এড়াতে এখনই মৌচাক সড়কটি ধরে ভারী গাড়ি নিয়ে প্রবেশ না করাটাই ভালো। মগবাজর থেকে মৌচাক হয়ে শান্তিনগর-রাজারবাগের দক্ষিণ অংশটি মেরামত করা শেষে এখন উত্তর অংশের মেরামতকাজ চলছে। তাই আউটার সার্কুলার সড়কের উত্তর পাশের অগ্রণী ব্যাংকের ঠিক সামনে থেকে মৌচাকমুখী গাড়িগুলো উল্টো পথ ধরে যেতে হচ্ছে। মৌচাক থেকে রাজারবাগ পর্যন্ত বাকি অংশের ঢালাই কাজ শেষ হতে আরো সপ্তাহ খানেক লাগতে পারে বলে ধারণা দিচ্ছেন দায়িত্বরত কর্মীরা।
ট্রাফিক পুলিশ ও বেশ কয়েকজন বাসচালক জানান, উভয় অংশ মিলিয়ে চার লেনের এই ব্যস্ত সড়কটি গাড়ির চাপ সামলানোর উপযুক্ত হয়নি এখনো। ফলে এক মিনিটের এই সড়কটিতে যানজট লেগেই থাকছে।
মালিবাগ-মৌচাক উড়াল সেতু নির্মাণকাজের কারণে চার বছর ধরে মূল সড়কটিতে কোনো ধরনের মেরামত করেনি সিটি করপোরেশন বা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এতে সড়কটিতে খানাখন্দের পরিমাণ বিপজ্জনক অবস্থানে গিয়ে ঠেকে। এ সময় ডিএসসিসি পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার কাজ হাতে নেয়ায় গত প্রায় চার মাস ধরে কিছু অংশের ফুটপাতের হাঁটার অংশও পথচারীদের হাতছাড়া হয়ে যায়।
দেশের মূলধারার প্রায় সব গণমাধ্যমে গত এপ্রিলে নিয়মিত প্রতিবেদনের বিষয় হয়েছে মালিবাগ-মৌচাক সড়কের পরিস্থিতি। আর এত দিন গা না করলেও এবার জনভোগান্তির অবসানে উদ্যোগী হয়েছে কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অবশেষে মূল সড়কটিতে সংস্কারকাজে হাত দেয়ায় ভোগান্তির অবসান হওয়ার আশা দেখছে মানুষ।
মৌচাক থেকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন কলেজ পর্যন্ত সড়কের দক্ষিণ অংশ ধরে এবং মালিবাগ থেকে শান্তিনগর ব্যাংক এশিয়া পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের খানাখন্দ এরই মধ্যে কংক্রিটের ঢালাইয়ের মেরামত হয়েছে। বাকি আছে কেবল পিচ ঢালাইয়ের কাজ। অন্য দিকে মৌচাক মোড় থেকে সড়কের উত্তর অংশেও কাজ শুরু হবে যেকোনো সময়।
মৌচাক মোড় থেকে মালিবাগ রেলগেট যেতে ডিআইটি সড়কটির পশ্চিম পাশের অংশে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পয়োনিষ্কাশন পাইপ বসানের কাজ চলছে। সেই অংশ মেরামতে আরো এক দেড় মাস লাগতে পারে বলে জানান ডিএসসিসি থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সার্ভেয়ার ডিপ্লোমা ইঞ্চিনিয়ার মো. নাজমুল। সড়কটির ফুটপাতের পাশ ধরে বড়সড় ড্রেনের খানাখন্দ এরই মধ্যে ভরাট করতে শুরু করেছে ডিএসিসির ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। পশ্চিম অংশের সড়কটির বিভিন্ন খানাখন্দ বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। একই সাথে সড়কটিতে বিছানোর জন্য ইটের সুড়কিও তৈরি করা হচ্ছে।
তবে বুধবার সকালে সাফেনা ডেন্টাল হাসপাতাল সংলগ্ন সড়কটির পূর্ব পাশের সড়কের ভালো অংশ নতুন করে খোঁড়াখুঁড়ি করতে দেখা গেছে ঢাকা ওয়াসাকে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে দায়িত্বরত সাব কন্ট্রাক্টর মিলন বলেন, ‘এখানে থাকা ওয়াসার আগের পাইপটা ভেঙে গেছে। তাই রাস্তা খুঁড়ে আজকের মধ্যেই মেরামত শেষ করব।’
এদিকে মালিবাগ রেলগেট থেকে রামপুরার দিকে যেতে আবুল হোটেলের কিছুটা আগ পর্যন্ত সড়কে বড় বড় খানাখন্দে পড়েছে কংক্রিটের মলম প্রলেপ। তবে মিটার বিশেক পথ এখনো সংস্কার বাকি থাকলেও এই সমতল রাস্তাটি ধরে নির্বিঘ্নে গাড়ি টেনে যাচ্ছেন পরিবহন চালকরা। মালিবাগ রেলগেট-মৌচাক-শান্তিনগর ও রাজারবাগের সদ্য মসৃণ হওয়া সড়কটি ধরে এখন আর হেলেদুলে চলতে হচ্ছে না যানবাহনকে। তবে এলাকার দুর্বল পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে এখনো মূল সড়কে কিছুটা পানি জমে থাকতে দেখা যায়।
মৌচাক এলাকার বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘রাস্তা মেরামতকাজ দেখার পর আগের ভোগান্তির কথা এখন আর মনে পড়ে না। কিন্তু মেরামতে কাজের মানটা কতটুকু ভালো সেটা এখন দেখার বিষয়।’
এদিকে মূল সড়কের পাশাপাশি ফুটপাতগুলোও খবু দ্রুত সংস্কার করার দাবি জানাচ্ছে এই পথে যাতায়াত করা যাত্রী ও পথচারীরা। পথচারী সোলায়মান ভূঁইয়া বলেন, ‘মূল রাস্তা ঠিক করার কারণে এখান দিয়ে এখন গাড়ির চাপ বাড়বে। এতে রাস্তা দিয়ে আমাদের চলাচলও কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে।’ সিটি করপোরেশন শিগগির ফুটপাত মেরামতের ব্যবস্থা নেবে বলে এই পথচারী আশা প্রকাশ করেন।
M/H