২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১:০৪

খায়রুল হকের প্রতিক্রিয়া সরকারের নির্দেশেই : রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক এবং সরকারের খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের দেয়া বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছে বিএনপি।

দলের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকারের নির্দেশেই আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক ষোড়শ সংশোধনীর আপিল বিভাগের রায়ের সমালোচনা করেছেন। একই বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের বক্তব্যও চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতি হুমকি বলে মন্তব্য করেন রিজভী।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

এসময় সারাদেশে দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযানের কর্মসূচিতে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা বাধা দিচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সারা দেশে সদস্য সংগ্রহ অভিযান ব্যাপকভাবে বাধা দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র ক্যাডাররা। বৃহস্পতিবারও যশোর, ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলাতে তিন শতাধিক গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একইসাথে অবিলম্বে গণগ্রেফতার বন্ধের আহবানও জানান রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, হারুনুর রশীদ, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, মীর সরাফত আলী সপু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আযম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রুহুল কবির রিজভী প্রশ্ন রাখেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় সম্পর্কে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হকের বক্তব্য নিয়ে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। আমাদের দলের পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়েছে। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তিনি সর্বোচ্চ আদালতের রায় নিয়ে যে তিক্ত ও প্রতিহিংসামূলক সমালোচনা করেছেন সেটা তার চাকরির আচরণ বিধির পরিপন্থী। তিনি চিফ জাস্টিস থাকা অবস্থায় একটি রায়ে বলেছিলেন, সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকের অবসরের পরে লাভজনক কোনো পদে চাকরি করতে পারবে না। তিনি কত বড় ভণ্ড হলে নিজের রায়ের কথা নিজেই ভঙ্গ করেছেন।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে এ বি এম খায়রুল হক দেশকে চূড়ান্তভাবে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। গণতন্ত্রকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং সংঘাতময় পরিস্থিতির জন্য খায়রুল হকই দায়ী।

তিনি বলেছেন ‘ষোড়শ সংশোধনীর রায় আগে থেকেই লিখে রাখা হয়েছে, ‘বিচার বিভাগ অপরিপক্ক’-এ ধরনের কথাবার্তা তার মুখ থেকে শোভা পায় না। আপনি কী ভুলে গেছেন, মুন সিনেমার রায়কে আপনি বিচার্য বিষয়ের বাইরে টেনে নিয়ে গিয়ে একদলীয় শাসন তথা দ্বিতীয় বাকশালী শাসনের পথ সুগম করেছেন। আপনি প্রধান বিচারপতি থাকাকালে সরকারের সাথে একের পর এক গোপন কারসাজিতে লিপ্ত থেকে শেখ হাসিনার মনোবাসনা পূরণ করতে সংবিধানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন। মূলত: আপনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে নির্বাচনহীন এক ব্যক্তির দু:শাসন চালু রাখতে সহায়তা করে দেশের স্থিতিশীলতা ধ্বংস করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দেশের মানুষের আশা-ভরসার জায়গা ছিল। এ ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক দেশের গণতন্ত্রের জন্য সর্বোচ্চ খারাপ নজির স্থাপন করে গেছেন। আবার তিনিই ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় যখন আদালতে প্রকাশ্যে পড়ে শোনান তখন তিনি বলেছিলেন আরো দুই মেয়াদের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। অথচ এর ১৬ মাস পর যখন তিনি পূর্ণাঙ্গ রায় লিখিতভাবে প্রকাশ করলেন তাতে এ কথাটাই বাদ দিয়ে জাতির সাথে প্রতারণা করেছিলেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি যে তা করেছিলেন তার বর্তমান বক্তব্যে সেটি আবারো প্রমাণিত হলো। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে তিনি যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন সেটিও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই করেছেন। পরে এর পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হয়ে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে পুরস্কার হিসেবে ১০ লাখ টাকাও নিয়েছেন চিকিৎসার কথা বলে, যা সেসময় গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল। একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির সরকারের এধরনের চাকরি গ্রহণ করা নজীরবিহীন এবং আত্মবিক্রয়ের এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। ভবিষ্যতে হয়তো আরো বড় কোনো পুরস্কারের আশায় ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে তিনি মনগড়া কথা বলেছেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক আইনের শাসন, গণতন্ত্র, মানুষের ভোটের অধিকার তথা জনগণের শত্রু ও বর্তমান এক ব্যক্তির ভয়াবহ দু:শাসনের ঘৃন্য সেবক। এই সাবেক প্রধান বিচারপতি যুক্তি, বিবেকবর্জিত ও চাকরি লোভী বিচারপতি হিসেবে তার ঠাঁই হবে ইতিহাসের আস্তকুঁড়ে।

খাদ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অপসারণ দাবি করে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, ‘তার যদি নৈতিকতা থাকে তাহলে স্বেচ্ছায় চলে যাবেন। না হলে আইনজীবীরা তার বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবেন।’

এ প্রসঙ্গে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল আপনি কোন নৈতিকতা নিয়ে কথা বলছেন? আপনি কি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন? নিজের দিকে তাকালে লজ্জা করে না আপনার? আপনিতো সর্বোচ্চ আদালতে দোষী ও দণ্ডিত অপরাধী। আপনি সংবিধান রক্ষার শপথ ভঙ্গ করে এখনো মন্ত্রী হিসেবে বহাল রয়েছেন। বিশ্বের ইতিহাসে এমন নজির কি কোথাও আছে, সর্বোচ্চ আদালতে দণ্ডিত ব্যক্তি মন্ত্রী হিসেবে বহাল থাকতে পারে? দণ্ডিত মন্ত্রীদের নিয়ে যে মন্ত্রীসভা অনুষ্ঠিত হয় তাদের মুখে বিচার বিভাগের সমালোচনা করাটাও জাতির জন্য লজ্জাস্কর। এটাই স্বাভাবিক যে, দণ্ডিত অপরাধীরা সত্য ও ন্যায় বিচার সহ্য করবে না। তারা আইনের শাসনের কথা শুনলেই আঁতকে উঠবে। খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য চরম ঔদ্বত্যপূর্ণ ও স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতি হুমকি।

রিজভী আরো বলেন, সমালোচনামুক্ত রাষ্ট্র থাকলে কিছু মানুষের সুবিধা। তাদের পার্মানেন্ট চাকরির ব্যবস্থা হয়। খায়রুল হক তো সুশাসন-দুর্নীতিমুক্ত দেশ চাইবেন না, তিনি একদলীয় হয়ে কাজ করেন। আর প্রধানমন্ত্রীসহ তার দলের সবার মধ্যে আমিত্বের প্রভাব, শুধু তারাই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। এ দেশের মুক্তিযুদ্ধে তো তার পরিবারের কেউ অংশগ্রহণই করেনি, যুদ্ধের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর স্বামী ঢাকায় চাকরি করতেন। তিনিও তো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। আর যারা সশস্ত্র অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের অস্বীকার করছেন। তারা এ দেশকে জনগণের দেশ মনে করে না।

দৈনিক দেশজনতা/এন আর

 

প্রকাশ :আগস্ট ১১, ২০১৭ ৯:০৫ অপরাহ্ণ