নিজস্ব প্রতিবেদক:
বনানীর আবাসিক হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। গতকাল বুধবার রাতে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বনানী থানার পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় ৬ মে নিয়মিত মামলা নেয়।
তবে ধর্ষণ মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার না করা নিয়ে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ভেতরই সমালোচনা শুরু হয়েছে। একাধিক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, গত মঙ্গলবার পুলিশের মাসিক অপরাধ সম্মেলনে বনানীর ধর্ষণ নিয়ে কোনো আলোচনা না হওয়ায় তাঁরা বিস্মিত হয়েছেন। এই সম্মেলনে গত মাসের অপরাধ পরিস্থিতি ছাড়াও চলতি মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে।
একটি সূত্র জানায়, এই মামলার এক আসামির বাবার সঙ্গে একজন রাজনৈতিক নেতার ঘনিষ্ঠতা আছে। তাঁর প্রভাবেই পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার না করে ‘ধীর কদমে’ চলছে। এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁরা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। রাতে কমিশনার একই বিবৃতিতে বলেন, সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ অব্যাহত আছে।
এদিকে বনানীতে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় আসামিদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করা না হলে শাহবাগ থেকে বনানী থানার দিকে ‘অভিযাত্রার’ ঘোষণা দিয়েছেন ‘ছাত্র-শিক্ষক লেখক-শিল্পী, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীবৃন্দ’। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সমাবেশ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
৬ মে বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে একটি ধর্ষণ মামলা করেন ধর্ষণের স্বীকার হওয়া একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, এক পরিচিত ব্যক্তির জন্মদিনের পার্টিতে অংশ নিতে গিয়ে ধর্ষণের স্বীকার হন তাঁরা। বনানীর রেইনট্রি হোটেলের দুটি কক্ষে আটকে রেখে তাঁদের ধর্ষণ করা হয়।
মামলার এক আসামি শাফাত আহমেদ, যাঁর বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ। অন্য আসামিরা হলেন নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, শাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও তাঁর দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ।
মামলা নিতে পুলিশ প্রথমে অসহযোগিতা করে বলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলেও, পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তবে মামলার পর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও, এখনো অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাউকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। মামলা করার পাঁচ দিন পর পুলিশ এখন বলছে, ২৮ মার্চ রেইনট্রি হোটেলে ‘একটি ঘটনা’ ঘটেছিল। এ ব্যাপারে তাঁরা মোটামুটি নিশ্চিত। ওই রাতে রেইনট্রিতে শাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফের নামে একটি স্যুইট ও একটি সাধারণ কক্ষ ভাড়া নেওয়া হয়েছিল।
তদন্তে যুক্ত পুলিশ সদস্যরা বলেন, তাঁরা এখন পর্যন্ত যে তথ্য পেয়েছেন, তাতে মনে করছেন, শিক্ষার্থী দুজন নিরুপায় হয়েই থানায় এসেছিলেন। ওই রাতে হোটেলের ৭০১ ও ৭০২ নম্বর কক্ষটি শাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ভাড়া নিয়েছিলেন। পরদিন সকালে তাঁরা বেরিয়ে যান। পুলিশ বলছে, এই মুহূর্তে তাঁদের মূল উদ্দেশ্য শাফাত আহমেদকে গ্রেপ্তার করা। শাফাতকে গ্রেপ্তার করা গেলেই মূল রহস্য উন্মোচিত হবে।
গতকাল সকাল পর্যন্ত নাঈম আশরাফ সম্পর্কে পুলিশের কাছে তেমন কোনো তথ্য ছিল না। তিনি ইমেকার্স নামের একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মের প্রধান নির্বাহী, এমন খবর পেলেও অন্য কোনো তথ্য তাদের হাতে ছিল না। পরে তারা জানতে পারে, নাঈম আশরাফের প্রকৃত নাম আবদুল হালিম। তিনি নিজের বিষয়ে যেসব তথ্য দিয়েছেন পরিচিত ব্যক্তিদের, তার প্রায় সবই ভুয়া। তাঁর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার গান্দাইল গ্রামে। তাঁর বাবা একজন পোশাকশ্রমিক।
M/H