আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতের অন্যতম বিখ্যাত শিল্পপতি ডা: বিজয়পৎ সিংহানিয়া। যিনি গত দু’দশকের বেশি সময় ধরে পুরুষদের আভিজাত্য বাড়াতে পোষাক সরবরাহ করেছেন। কিন্তু আজ তিনি চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন৷ কেউ তার এখন খোঁজও রাখেন না৷ তিনিই রেমন্ড গ্রুপের প্রকৃত মালিক। কিন্তু ছেলেকে বিশ্বাস করে সব সম্পত্তি দিয়ে শূন্য হাতে জীবনের বাকি দিনগুলো কাটাচ্ছেন।
দেশের অন্যতম প্রধান শিল্পগোষ্ঠী পরিবারের এমন করুণ কাহিনী উঠে এসেছে ভারতীয় গণমাধ্যমে৷ ভারতের বিখ্যাত পোষাক উৎপাদনকারী সংস্থা রেমন্ড লিমিটেড’এর প্রতিষ্ঠাতা এখন মুম্বাইয়ে ভাড়া বাড়িতে বাস করছেন। যে কিনা এক সময় মুম্বাইয়ের শেরিফও হয়েছিলেন৷
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, ছেলে গৌতম সিংহানিয়াকে সম্পত্তি দিয়ে দেওয়ার পরই চরম দুরাবস্থায় পড়েন তিনি৷ বর্তমানে তার একসময়ের বাসস্থান মালাবার হিলে’র জে কে হাউসকে নতুন করে ৩৬ তলা ভবন হিসেবে নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানে একটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের দখল চেয়ে তিনি বোম্বে হাই কোর্টে আবেদন করেছেন৷
আদালতেও সিংহানিয়ার আইনজীবী শিল্পপতির বর্তমান আর্থিক দুর্দশার কথা জানিয়েছেন৷ এর আগে ১৯৬০ সালে যখন গড়া হয়েছিল তখন জেকে হাউস ছিল ১৪ তলা ভবন৷ সেখানকার ৪টি ডুপ্লেক্স পরে হাত বদল হয়েছিল রেমন্ডের অধীনস্ত পসমিনা হোল্ডিংস লিমিটেডের কাছে৷ এরপর ২০০৭ সালে ওই বাড়িটি নতুন করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়৷ সেই সময় ঠিক হয়েছিল বিজয়পৎ ও গৌতম, বিজয়ের ভাই অজয়পত সিংহানিয়ার বিধবা স্ত্রী বীণাদেবী ও তার ছেলে অনন্ত এবং অক্ষয়পৎ প্রত্যেকে নতুন বাড়িতে ৫ হাজার ১৮৫ বর্গফুটের ডুপ্লেক্স পাবে বর্গফুট প্রতি ৯ হাজার রুপি দিয়ে৷
ইতিমধ্যেই বীণা দেবী এবং অনন্ত একসঙ্গে এবং অক্ষয়পৎ আলাদা ভাবে তাদের অ্যাপার্টমেন্টের দাবি জানিয়ে বোম্বে হাই কোর্টে আবেদন করেছেন৷ আর বিজয়পতের আইনজীবী দিনওয়ার ম্যাডন আদালতকে জানিয়েছেন, যেখানে ৭৮ বছরে বৃদ্ধ তার সমস্ত সম্পত্তি ছেলেকে দিয়ে দিয়েছেন সেখানে সেই ছেলেই তাকে সব কিছু থেকে বঞ্চিত করেছে৷
আইনজীবী আরও জানিয়েছেন বিজয়পৎ তার সংস্থার পুরো শেয়ারই ছেলে গৌতমকে বিশ্বাস করে দিয়ে দেন। যার বাজার মূল্য প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা৷ এখন সেই ছেলেই তার বাবার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এমনকি বাবার জন্য ছেলে কোনও গাড়ি, ড্রাইভার, অর্থ.. কিছুই বরাদ্দ করছে না।
যদিও রেমন্ড সংস্থার প্রতিনিধি আইনজীবী জনক দ্বারকাদাস এবং বিরাগ তুলজাপুরকার ও আইনজীবীদের সংস্থা ওয়াদিয়া ঘান্দি অ্যান্ড কোম্পানি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই বিষয়ে গৌতম আদৌ কোনও কারণ নন৷ এটি পুরোটাই রেমন্ড এবং পসমিনা হোল্ডিংস’এর মধ্যকার ব্যাপার৷
নতুন করে নির্মাণ হওয়া জে কে টাওয়ারের ২৭ এবং ২৮ তলার ডুপ্লেক্সে কোম্পানি কোন ভাবে যাতে অধিকার না পায় সেজন্য বিজয়পতের আইনজীবী দিনওয়ার ম্যাডন স্থগিতাদেশ চেয়েছেন৷ বাসস্থান চাওয়ার পাশাপাশি প্রতি মাসে ৭ লাখ টাকা সংস্থার কাছ থেকে বিজয়পৎ প্রাপ্য বলেও আর্জি জানিয়েছেন ম্যাডন৷
এদিকে বিষয়টির জবাব দেওয়ার জন্য ছেলে আদালতের কাছে সময় চেয়েছেন। জানিয়েছেন, এই বছরের জুনে সংস্থার বার্ষিক সাধারণ সভায় বিজয়পৎকে সংস্থার পক্ষ থেকে বাড়ি ভাড়া বাবদ অর্থ এবং ডুপ্লেক্স দেওয়ার প্রস্তাবটি শেয়ারহোল্ডাররা প্রত্যাখ্যান করেছেন৷ ফলে তৃতীয় কোনও পক্ষ যাতে ভবনের অধিকার না পায় তার জন্যে শেয়ারহোল্ডাররা স্থগিতাদেশ চেয়েছে। সেই সঙ্গে বিজয়পৎ সিংহানিয়ার বাড়ি ভাড়া চাওয়ারও বিরোধিতা করা হয়েছে৷
অন্যদিকে ম্যাডনের অভিযোগ, সংস্থার সিএমডি হওয়ার সুবাদে ঘুর পথে গৌতম ৪টি ডুপ্লেক্সই দখল করে বসে আছে। যেখানে চতুর্থ ফ্ল্যাটটিই শুধু গৌতমের৷ দু’পক্ষের কথা শোনার পর বিচারপতি গিরিশ কুলকার্নি উভয়পক্ষকেই বলেছেন নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে। কারণ এই ধরনের বিষয় আদালত পর্যন্ত আসা ঠিক নয়৷
ফলে দু’পক্ষের উকিল আলোচনায় বসবেন বলে সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে৷ তবে আদালত বিজয়পতের ডুপ্লেক্স দাবি সাপেক্ষে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে আগামী ১৮ আগস্টের মধ্যে রেমন্ডকে তাদের জবাব দিতেও বলা হয়েছে৷ আগামী ২২ অগস্ট আদালত পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে৷
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ