নিজস্ব প্রতিবেদক:
বন্ধ হয়ে যেতে পারে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ২৫৭টি কলেজ ও মাদ্রাসা। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮৫টিতে এবার কোনো ছাত্রছাত্রী ভর্তির আবেদন করেনি। বাকি ৭২টি থেকে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি। এছাড়া আরও ৮৭৮ কলেজ অস্তিত্ব সংকটে আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৯৭টিতে সর্বনিন্ম ৫ জন থেকে সর্বোচ্চ ২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। আর ১৮১টি প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বনিন্ম ৫ জন থেকে সর্বোচ্চ ২০ জন পাস করেছে।
যে ১৮৫টি কলেজে ভর্তির জন্য কেউ নির্বাচিত হয়নি, তার মধ্যে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ২৯টি, যশোর বোর্ডের ৯টি, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বোর্ডের একটি করে, বরিশাল বোর্ডের ৮টি, সিলেট বোর্ডে ২টি, দিনাজপুর বোর্ডের ৯০টি, রাজশাহী বোর্ডের ৩৮টি এবং মাদ্রাসা বোর্ডের ৭টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে কারিগরি বোর্ডে আরও শতাধিক প্রতিষ্ঠান আছে। তবে সেগুলোর সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পরপর দু’বছর শূন্য পাস এবং কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি এমন কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোর বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে গত ১৭ এপ্রিল ৭৯টি কলেজ বন্ধের নোটিশ দিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডকেও একই ধরনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে হিসেবে এ বছর একই ধরনের অপরাধে চিহ্নিত প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে।
সারা দেশে ভালো মানের কলেজের সংখ্যা কম থাকায় এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ভালো ফল পেয়েও একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির প্রথম তালিকায় স্থান পায়নি ৬১ হাজার ৯৯ জন শিক্ষার্থী। এমনকি জিপিএ-৫ পেয়েও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে তিন হাজার ৮৯১ জন শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়নি। দশ বোর্ডে মোট পাঁচ হাজার ৯৪৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েও ভর্তির প্রথম মেধা তালিকায় স্থান পায়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবার একাদশ শ্রেণীতে সারা দেশে ভর্তি নেয়া হয় এমন কলেজ-মাদ্রাসা রয়েছে ৯ হাজার ১৫৮টি। এর মধ্যে ১৮৫টি কলেজে কেউ ভর্তির আবেদনই করেনি। এছাড়া ৬৩টি প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ ৫ জন করে, ১৩০টিতে ১০ জন, ২১৬টিতে ১৫ জন এবং ২৮৮টিতে সর্বনিন্ম ২০ জন আবেদন করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে সরকারের দেয়া এমপিও একেবারেই গচ্চা যাবে।
এদিকে ৯১৫৮টি কলেজ-মাদ্রাসায় আসন রয়েছে ২৮ লাখ ৬২ হাজার ৯টি। আর এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২২ জন। এর মধ্যে কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে ১৩ লাখ দশ হাজার ৯৪৭ জন। সেই হিসেবে ১৫ লাখ আসনই খালি থাকছে। নির্বিচারে কলেজ-মাদ্রাসা খোলার অনুমতি দেয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান এভাবে ছাত্রশূন্য থাকছে জানান সংশ্লিষ্টরা। এসব প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের পেছনে রাজনৈতিক বিবেচনাসহ মন্ত্রণালয় এবং বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ঘুষ বাণিজ্য আছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান মঙ্গলবার বলেন, এ ধরনের কলেজের ব্যাপারে সরকার আগে থেকেই কঠোর অবস্থানে আছে। একই ধরনের সমস্যার কারণে সরকারের নির্দেশে আমরা সম্প্রতি কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছি। এ বছরের তথ্য কয়েকদিন আগে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনামতো আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।
দৈনিকদেশজনতা/এন এইচ