২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৭:৩৬

সেই অন্তঃসত্ত্বা নারী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর কোলনঝাড় গ্রামে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধু শেফালী বেগমকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় অপহৃত গৃহবধু বর্তমানে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। তিনি বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মহিলা বিভাগে ভর্তি রয়েছেন।
অন্তঃসত্ত্বার এখন প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তার পেটের অপরিণত শিশুটি এখন তার ভাগ্যেরর উপর রয়েছে বলে চিকিৎসকগণ জানিয়েছেন।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার স্বামী রফিকুলের সাথে ছোট বোন আকলিমার ঝগড়া হলে শেফালির বাড়িতে আসে আকলিমা। পরদিন শুক্রবার সকালে তিনজন মিলে আকলিমাকে রাখতে গেলে রফিকুলের বাড়িতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হন শেফালি। একপর্যায়ে বাড়ি থেকে বের করে দিলে পথিমধ্যে রফিকুলের মামা দবির উদ্দিনের উঠানে মিমাংসার জন্য বসলে সেখানে রফিকুল ও তার মা অপিয়া বেগম নির্যাতন শুরু করেন। একপর্যায়ে গাছে বেঁধে রেখে নির্যাতন চালানো হয় বিকেল পর্যন্ত অন্তঃসত্ত্বা শেফালিকে। প্রথমে তাকে জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলেও অবস্থার সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে স্থানান্তর করা হয় রংপুর মেডিকের কলেজ হাসপাতালে। সেদিনের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী নির্যাতিত শেফালি বেগমের ছোট বোন শিউলি আক্তার মুন বলেন, যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবার কথা নয়। গাছে বেঁধে লাথি, ঘুষি, কিল মারা হলো। স্থানীয় আ’লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের ওরফে নারিয়া কাদেরও অকথ্যভাবে নির্যাতন চালান আমার বোনের উপর।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সেলিমুর রহমান জানান, ঘটনাস্থলে কেউ এগিয়ে আসেনি শেফালীকে বাঁচানোর জন্য। সকাল ১০টা হতে বিকাল ৪টা পর্যন্ত গাছে বেঁধে রাখা হয়েছিলো শেফালীকে। পুলিশ আসার আগে গাছ থেকে দড়ি খুলে দেয়া হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তামজিদার রহমান, ইউনিয়নের শ্রমিক লীগের সাধারন সম্পাদক শিমুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা মোসলেম উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল ও সামছুলের ছেলে মজনুর রহমান মঞ্জু। তারা শেফালীকে গরু চুরির ঘটনা সাজিয়ে পুলিশকে ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। ভয় আর হুমকির কারণে মামলা করতে না পারলেও রোবার রাতে ভাই সহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন ডিমলা থানায়।
গত রোববার ৬ আগস্ট গভীর রাতে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে (মামলা নম্বর ০৬/১৭)। মামলার বাদী হয়েছে নির্যাতনের শিকার শেফালীর মামা সহিদুল ইসলাম। মামলার ১৯ জন নামীয় ও অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন রয়েছে। আসামিদের মধ্যে পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের গতকাল সোমবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন রফিকুল ইসলাম, অপিয়া বেগম ও গ্রাম পুলিশ রশিদুল ইসলাম।
এদিকে নির্যাতনের ঘটনার সাথে জড়িত নন বলে জানিয়েছেন অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। তবে তিনি সেখানে ছিলেন বলে জানিয়েছেন। এলাকায় দেখা গেছে স্থানীয়দের আড়ালের চিত্র। কেউ সহসা মুখ না খুললেও নির্যাতন করা হয়েছে এটি বলতে পারছেন অনেকে। তবে কারা নির্যাতন করেছে সেটি জেনেও যেন না জানার ভান করছেন স্থানীয়রা।
নির্যাতনের শিকার শেফালির খালা নাজমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ওমরা হামাক ভয়ভীতি দেখায় ছে, কিছুই বলে হইবে না। পুলিশ বলে কিছুই করিবার পাইবে ওমার। হামরা এ্যালা কি করিমো। দ্যাশোত কি আইন নাই? প্রশ্ন তুলেন নাজমা খাতুন।
এদিকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনাটি কোনভাবে করা ঠিক হয়নি মন্তব্য করে নীলফামারী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান । তিনি জানান, পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। মামলা নেওয়া হয়েছে। তিনজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। যারাই জড়িত থাকুন না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা আতিকুর রহমান।
উল্লেখ্য, উক্ত গ্রামে জমিজমা সংক্রান্ত এক বিবাদে শেফালীর বাবা মবিয়ার রহমানকে ২০১২ সালের ২৯ জুলাই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে প্রতিপক্ষরা হত্যা করেছিল। মামলায় এলাকার ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে পুলিশ চার্জশীট প্রদান করেন। মামলাটি বর্তমানে নীলফামারী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আগামী ২২ আগস্ট হত্যা মামলার সাক্ষ্য রয়েছে। প্রভাবশালীরা ওই মামলা মীমাংসার জন্য চাপ দিয়ে আসছে। তারা পিতার হত্যা মামলা আপোষ না করায় প্রতিপক্ষরা সম্প্রতি ডিমলা থানায় একটি মিথ্যা মামলা করেছে । ফলে শেফালীর একমাত্র ভাই রমজান পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এলাকায় কোনো ঘটনা ঘটলেই শেফালী ও তার ভাইয়ের উপর নির্যাতনে খড়গ নেমে আসে। শেফালী ওই গ্রামের লালন মিয়ার স্ত্রী। তার স্বামী ঢাকায় রিকশা চালায়।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :আগস্ট ৮, ২০১৭ ১২:১০ অপরাহ্ণ