নিজস্ব প্রতিবেদক:
পুলিশি নিরাপত্তায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বগুড়ায় শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার কিশোরী এবং তার মা। চিকিৎসায় তাদের শরীরের ক্ষত সেরে উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু মনের ক্ষত এখনও দগদগে। তুফানের শ্যালিকা কাউন্সিলর মার্জিয়া আক্তার রুমকি ও অন্যদের নির্যাতনের কথা মনে পড়লেই আঁতকে ওঠেন ওই কিশোরী।
মেয়ের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ওই কিশোরীর মা বলেন, ‘আমার মেয়ে এখনও প্রায়ই ঘুমের মধ্যে কেঁপে ওঠে, কান্নাকাটি করে।’ তিনি বলেন, ‘রাতে সে একদমই ঘুমাতে চায় না, সকাল পর্যন্ত জেগে বিছানায় কাতরাতে থাকে।’ হাসপাতালে মা-মেয়ের আলোচনাতে দিনভর ওই বর্বর নির্যাতনের কথায় ঘুরেফিরে আসে। যদিও তারা দুঃসহ্য এই স্মৃতি ভুলে যেতে চান।
নির্যাতিত কিশোরীর মা জানান, তার স্বামী আগে ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। বর্তমানে তার হোটেল ব্যবসা রয়েছে। একমাত্র সন্তান মেয়ের লেখাপড়ার জন্যই তিন মাস আগে শহরের চকসূত্রাপুর এলাকায় তুফান সরকারের বাড়ির কাছে বাসা ভাড়া নেন তারা।
কথা বলতে বলতে কান্না চেপে কিশোরীর মা বলেন, ‘বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার কথা বলে তুফান সরকার আমার মেয়ের সর্বনাশ করেছে।’
তিনি জানান, এলাকায় তুফান সরকারের প্রভাব জেনে মেয়ের মতো আমিও চুপ ছিলাম। কিন্তু ২৮ জুলাই তার স্ত্রী আশা ও শ্যালিকা কাউন্সিলর মার্জিয়া আক্তার রুমকি সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে বাড়ি থেকে আমাদের তুলে নিয়ে যায়। নিজেদের বাড়িতে আটকে রেখে পাঁচ মিনিট পরপর লোহার পাইপ দিয়ে মা-মেয়েকে পেটাতে থাকে। দু’জনেরই শরীরে অসংখ্য জখম রয়েছে। চিকিৎসায় এখনও সে জখম পুরোপুরি ঠিক হয়নি। তারা ওঠা-বসাও ঠিকমতো করতে পারছেন না।
নির্যাতিত কিশোরীর মা জানান, সেই দিনের নির্যাতনের কথা মনে পড়লেই মা-মেয়ে আঁতকে উঠি। কষ্ট ভুলতে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করি। কিন্তু কিছুতেই পারছি না। তিনি আরো বলেন, ‘মেয়ের মুখের দিকে আমি চাইতে পারি না, বুক ভেঙে যায়। মা হয়ে আমি কিছুই করতে পারিনি। এই কষ্টের শেষ কবে হবে তা আল্লাহই ভালো জানেন।’
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই বিকেলে ভালো কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার কথা বলে এক ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকার। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তিনি ও তার সহযোগীরা এবং স্ত্রীর বোন নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া আক্তার রুমকিকে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পেছনে লেলিয়ে দেন।
ঘটনার ১০ দিন পর গত ২৮ জুলাই নির্যাতিতা কিশোরী ও তার মাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে চার ঘণ্টা ধরে তারা নির্যাতন চালায়। এরপর নাপিত ডেকে এনে দু’জনেরই মাথা ন্যাড়া করে দেন।
এ ঘটনায় কিশোরীর মা বাদী হয়ে ওইদিন রাতেই শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশা সরকার, আশা সরকারের বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া আক্তার রুমকিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে দুটি মামলা করেন।
এর মধ্যে এজাহারভুক্ত নয়জনসহ মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কয়েক দফায় তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
এছাড়া তুফান সরকারকে শ্রমিক লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যে বড় ভাইয়ের হাত ধরে এতো প্রভাব তুফান সরকারের; তার বড় ভাই আব্দুল মতিন সরকারকেও শহর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ