নিজস্ব প্রতিবেদক:
যশোরে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে সিআইডি কর্মকর্তা আজিজুল হক সবুজের ফাঁসির দাবি জানিয়েছে নিহতের পরিবার।বৃহস্পতিবার প্রেসক্লাব যশোর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে নিহত মরিয়ম আক্তার পারুলের পরিবার এই দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, নিহতের বাবা আজিজুল হক, মা রোকেয়া বেগম, ছেলে রাহাতুল হক, মেয়ে লাবিবা হক লাবণ্য। স্বজনদের দাবি, গত ২০ জুলাই ঢাকায় কর্মরত সিআইডি কর্মকর্তা আজিজুল হক সবুজ তার স্ত্রীকে যশোরের বাসায় পিটিয়ে হত্যা করে লাশ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায়। তবে ওই কর্মকর্তার দাবি তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে সেই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আজিজুল- পারুল দম্পতির মেয়ে স্কুল পড়ুয়া লাবিবা হক লাবণ্য বলেন, ‘স্কুলে যাওয়ার সময় দেখি আব্বু ও আম্মুর মধ্যে ঝগড়া চলছিল। আম্মুকে চলে আসতে বললে, আব্বু পেছন থেকে আম্মুকে মারপিট করে। আমি ঠেকাতে গেলে আমাকে আলাদা ঘরে আটকে রাখে। পরে আব্বু আবার আম্মুকে মারপিট করে। তখন আম্মু আমাকে দুই বার ডাকে। আর আল্লাহ গো, আল্লাহ গো করে। পরে দেখি পাশের ঘরে জানালা ভাঙা, আর উপরে দড়ি ঝুলছে। এইটুকু জানি, আর কিছু জানি না।’
ছেলে রাহাতুল হক বলেন, ‘দেখি আম্মু নিচে পড়ে আছে। আর আব্বু আমাকে বলছে, তোমার আম্মুকে হসপিটালে নিতে হবে। তারপর তাড়াতাড়ি আব্বুর গাড়িতে করে আম্মুকে হসপিটালে নিয়ে যাই।’
এ সময় তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সঙ্গে তাদের নানী রোকেয়া বেগমও সন্তান হত্যার বিচার দাবিতে আর্তনাদ করেন। স্বজনহারা মানুষের কান্নায় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মরিয়ম আক্তার পারুলের ভাই জিয়াউর রহমান অভিযোগ করেন, গত ২০ জুলাই আমার ছোট বোন মরিয়ম আক্তার পারুলকে খুন করেছে তার স্বামী সিআইডি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজিজুল হক সবুজ। বর্তমানে তিনি হেড অফিসের কন্ট্রোল রুমে কর্মরত আছেন। পুলিশে কর্মরত থাকায় আমাদেরকে নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। একই সঙ্গে খুনের ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেতে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহারের চেষ্টা করছেন। পুলিশও তাকে গ্রেফতার করছে না। আজিজুল হক সবুজের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমার বোন খুন হওয়ার আগের দিন মোবাইল ফোনে নির্যাতনের কথা জানায়। বিষয়টি জানতে পেরে আমরা ২০ জুলাই সকালে বোনের বাসায় যাই। আমাদের সেখানে যাওয়ার কথা শুনে ক্ষেপে যায় সবুজ। এরপর আমার বোনকে বলে, তোর বাপ ভাইসহ তোকে জীবনে মেরে ফেলবো। বোনের বাসায় গিয়ে দেখতে পাই বাসার রুমের মধ্যে বালিশ দিয়ে পারুলের নাক মুখ চেয়ে ধরেছে। চোখ মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা। গলায় ওড়না শক্তভাবে পেঁচানো অবস্থায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। তখন আমাদের দেখে আজিজুল হক সবুজ উত্তেজিত হয়ে বলে, তোরা কেমন আমার সামনে এসেছিস। তোদের তো সাহস কম না। তোর বোন অজ্ঞান হয়ে গেছে। তাকে হাসপাতালে নিতে হবে।’
এরপর প্রাইভেট কারে করে লাশ নিয়ে হাসপাতালে রওনা হয়। আমরা হাসপাতালে গিয়ে দেখি বোনের লাশ জরুরি বিভাগে ফেলে রেখে পালিয়েছে সবুজ। পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসক পারুলকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত ২৬ জুলাই সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী (ক) অঞ্চল যশোর পিটিশন মামলা দায়ের করি। আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার জন্য কোতয়ালী থানাকে নির্দেশ দিয়েছে। মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য নানা অপচেষ্টা করছেন আসামি আজিজুল হক সবুজ। তাকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ