নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিভিন্ন কারণেই টাঙ্গাইলের সুনাম ছড়িয়ে আছে সারাদেশে। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও বেশ সমৃদ্ধ এই জেলা। তাছাড়া টাঙ্গাইল এমন একটি জেলা যেখানে বাংলাদেশের বাকি ৬৩টি জেলার শিক্ষার্থীরা এসে লেখাপড়া করেন। এজন্য টাঙ্গাইল শহরকে শিক্ষানগরীও বলা হয়ে থাকে।
কিন্তু সনামধন্য এই টাঙ্গাইল শহরে প্রবেশ করতে হয় দুর্গন্ধের রাজ্য পেরিয়ে। কারণ শহরের প্রবেশ পথেই গড়ে তোলা হয়েছে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। আর এই ময়লা-আবর্জনার অসহনীয় দুর্গন্ধের কারণে টাঙ্গাইলের সম্মান এখন ম্লান হওয়ার পথে। এটি টাঙ্গাইলবাসীর জন্য যেমন লজ্জার তেমন অসম্মানেরও। এই পচা ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে সৃষ্ট অসহনীয় দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন শহরে যাতায়াতকারী অসংখ্য মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইল শহরের প্রবেশ পথ রাবনা বাইপাস এলাকায় শহরের সব ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এই প্রবেশ পথটির অবস্থা এখন খুবই শোচনীয়। ময়লা-আবর্জনার পাশাপাশি এখন সেখানে মৃত জীবজন্তুও ফেলা হচ্ছে। এজন্য দুর্ভোগ আরো বেড়েছে।
মহাসড়ক থেকে রাবনা বাইপাস মোড় পার হয়ে একটু সামনে এগুলেই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় সবাইকে। প্রধান সড়কের পূর্বপাশেই পঁচা ময়লা-আবর্জনার বিশাল ভাগাড়। শহরের প্রায় সব বর্জ্য ফেলা হয় সড়ক সংলগ্ন এই খোলা জায়গায়। যা রীতিমত দুর্গন্ধ ছড়িয়ে মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ করছে। এছাড়া বর্জ পোড়ানোর বিষাক্ত ধোঁয়ায়ও পরিবেশ দূষণসহ মানবদেহের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
টাঙ্গাইলকে বলা হয় শিক্ষা নগরী। কারণ টাঙ্গাইল এমন একটি জেলা যেখানে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার শিক্ষার্থীরা এসে লেখাপড়া করছে। শহর পেরিয়েই যেতে হয় দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
নামী-দামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও এই শহরে রয়েছে একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। শহরের ডিস্ট্রিক্ট এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে জেলার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র ‘ডিসি লেক’। এমন গুরুত্বপূর্ণ শহরের প্রবেশ মুখে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় কেউ মেনে নিতে পারছেন না।
টাঙ্গাইল শহর থেকে ঢাকা ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন অঞ্চলের যানবাহন চলাচল করে রাবনা বাইপাস হয়ে। রাস্তা সংলগ্ন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় অতিক্রমের সময় গাড়ির যাত্রীরা বাধ্য হয়ে নাকে রুমাল চেপে ধরেন। এতটা সময় দম বন্ধ করেও রাখা যায় না। স্বল্প গতির যানবাহনের যাত্রীদের দুর্ভোগ আরো বেশি। ওই দুর্গন্ধময় রাস্তাটুকু অতিক্রম করতে তারা নাকে রুমাল চেপে ধরেও কুল পান না।
যাত্রীসাধারণের পাশাপাশি চালকেরাও চরম দুর্ভোগের শিকার হন। নানা কারণে টাঙ্গাইল সম্পর্কে যাদের ইতিবাচক ধারণা রয়েছে, এই অসহনীয় দুর্গন্ধ পেরিয়ে শহরে প্রবেশ করায় টাঙ্গাইল সম্পর্কে তাদের নেতিবাচক মনোভাবের তৈরি হচ্ছে।
আরেক সমস্যা হচ্ছেÑ ময়লা-আবর্জনাগুলো সড়কের পাশে রাস্তার উপর স্তুপ করে রাখা হয়। এতে বৃষ্টি হলেই ময়লা-আবর্জনা একেবারে রাস্তার ওপর চলে আসে। তখন যানবাহন ও পথচারীদের চলতে হয় সেই ময়লা-আবর্জনার ওপর দিয়েই।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচলকারী ধলেশ্বরী পরিবহনের একটি বাসের চালক বাবু খান বলেন, ‘ভাই ওই স্থানে ভয়ানক দুর্গন্ধ। শহরে ঢোকার সময় এবং বের হওয়ার সময় খুবই কষ্ট হয়। মাঝে-মধ্যেই ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে যানজট হলে রাবনা বাইপাস থেকে শহেরর রাস্তায়ও যানজটের সৃষ্টি হয়। আর ওই ময়লার ভাগাড়ের কাছে যানজটে পড়লে এমন খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হয় যেন পেটের ভিতর থেকে সবকিছু বের হয়ে আসতে চায়।’
আরেক বাস চালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ওই এলাকায় দুর্গন্ধে চালকদেরও কষ্ট, যাত্রীদেরও কষ্ট। ময়লা-আবর্জনা ফালানো দরকার ছিল এমন এলাকায় যেখানে লোকজনের চলাচল কম।’ ভুক্তভোগীরা বলেন, ‘দুর্গন্ধের কারণে টাঙ্গাইল শহরে ঢোকা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি শহরের প্রবেশ পথে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় থাকা সত্যিই খুব দুঃখজনক।’ এই দুর্গন্ধময় জায়গাটি অতিক্রমের সময় এক বাসযাত্রী আক্ষেপ করে বলে উঠেন, ‘এইতো, জাহান্নামে চলে এসেছি!’
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাইফুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘জানি দুর্গন্ধে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কষ্ট আমাদেরও হচ্ছে। আমাদের নাকেও গন্ধ লাগে। কিন্তু কী করব? ময়লা কোথায় ফেলব? সেরকম জায়গাতো নেই। এজন্য আপাতত এখানেই ফেলা হচ্ছে। তবে দুর্গন্ধ যাতে না ছড়ায় এজন্য সেখানে নিয়মিত ব্লিচিং পাওডার দেওয়া হবে। আর কেউ যেন সেখানে মৃত প্রাণি না ফেলে সেদিকেও খেয়াল রাখা হবে। এছাড়া ময়লা-আবর্জনাগুলো যাতে রাস্তায় চলে না আসে সে ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। ’
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ