নিজস্ব প্রতিবেদক:
টাঙ্গাইলের বাসাইলে গত এক সপ্তাহে ঝিনাই নদীর ভাঙনে প্রায় চার শতাধিক ভিটাবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও আরো প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। এ বছর উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও বিরামহীন বর্ষণে ঝিনাই নদীতে প্রবল স্রোত সৃষ্টি হয়। এতে নদী তীরবর্তী উপজেলার কাশিল, কাঞ্চনপুর, ফুলকি ও হাবলা ইউনিয়নের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়।
স্থানীয়রা জানায়, কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কাজিরাপাড়া, বিলপাড়া, মানিকচর ও আদাজান গ্রামে প্রায় ৭০টি, হাবলা ইউনিয়নের বিলপাড়ায় ১০টি, কাশিল ইউনিয়নের দাপনাজোর, দেউলী, কামুটিয়া, নথখোলা, কাশিল, থুপিয়া, নাকাছিম ও বিয়ালা এলাকায় দুই শতাধিক, ফুলকি ইউনিয়নের দোহার, হাকিমপুর, জশিহাটি পশ্চিমপাড়া এবং একঢালা এলাকায় ৪০টিসহ নদী তীরবর্তী এলাকায় প্রায় চার শতাধিক ভিটাবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর ব্যাপক ভাঙন দেখে তীরবর্তী অনেক বাসিন্দা ভয়ে ঘর সরিয়ে নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন। কেউ কেউ রাস্তার পাশে অস্থায়ীভাবে ঘর তৈরি করে বাস করছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় তিন বছর আগে ঝিনাই নদীতে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড বালু উত্তোলনের পর থেকে এ এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। তারপর থেকে প্রতি বছরই অনেক আবাদি জমিসহ ভিটাবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত বছরও এ এলাকার প্রায় দুই শতাধিক ভিটাবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙন কবলিত এলাকা কাঞ্চনপুরের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার আশরাফুজ্জামান বলেন, কাঞ্চনপুর কাজিরাপাড়া, কাঞ্চনপুর বিলপাড়া, মানিকচর এলাকায় প্রায় শতাধিক ভিটাবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছরও এসব এলাকার অর্ধশতাধিক ভিটাবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতি বছর সরকারিভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এদের তালিকা নিলেও কোনো প্রকার অনুদান দেয়নি।
কাশিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা রাজিক বলেন, কাশিল ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত ঝিনাই নদীর তীরবর্তী এলাকা দাপনাজোর, দেউলী, কামুটিয়া, নথখোলা, কাশিল, থুপিয়া, নাকাছিম ও বিয়ালা গ্রামের প্রায় ২ শতাধিক বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বসতভিটা হারিয়ে অনেকে দিশেহারা হয়ে পড়ছে। এই মুহূর্তে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। ফুলকি ইউনিয়নেও একই অবস্থা বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবুল।
কাঞ্চনপুর কাজিরাপাড়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত খুসরু খান বলেন, আমার ভিটেবাড়ি যেটুকু ছিল, সবই নদীতে চলে গেছে। এখন পরিবার নিয়ে বসবাস করার মতো জায়গাটুকুও নেই। অস্থায়ীভাবে রাস্তার পাশে ঘর বানিয়ে রয়েছি।
বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল ইসলাম পরির্বতন ডটকমকে বলেন, ভাঙনের বিষয়ে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে বার বার জানানোর পরও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ঝিনাই নদী থেকে একটি মহল অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে প্রতি বছর ভাঙনের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সম্প্রতি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সায়মা আক্তার। ভাঙনের বিষয়টি টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ বলেন, বাজেট বরাদ্দ না থাকায় আমরা কোনোকিছু করতে পারি না। তবে আশা করছি দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ