নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাশকতার মাধ্যমে বিদ্যুৎ লাইনের ক্ষতি করলে বা ক্ষতির চেষ্টা করলে সাত বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রেখে ‘বিদ্যুৎ আইন ২০১৭’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার সকালে সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই খসড়ায় অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম এ তথ্য জানান।
এই অনুমোদনের ফলে আইনের খড়সাটি বিল আকারে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে। সেখানে পাসের পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদন শেষে তা আইনে পরিণত হবে।
সচিব বলেন, ‘আইনের ৩৯ নম্বর ধারায় বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, বিদ্যুৎ লাইন, খুঁটি বা অন্যান্য যন্ত্র নাশকতার মাধ্যমে ভেঙে ফেললে বা ক্ষতিগ্রস্ত করলে বা বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন বা যন্ত্রাংশের ওপর কোনো বস্তু নিক্ষেপ করলে বা রাখলে তা হবে একটি অপরাধ। এজন্য কমপক্ষে ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে হামলা করে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এত উপকেন্দ্রটি বলতে গেলে ধ্বংস হয়ে যায়। পরে এই ঘটনায় বিস্তীর্ণ এলাকায় দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ ছিল না।
বর্তমান সরকারের এক বছর পূর্তিতে সরকার পতনের আন্দোলনের সময়ও সিলেটে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলার চেষ্টা হয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান এক শিবির নেতা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এ আইনটি ১৯১০ সালের আইন। এতদিন পুরোনো আইন দিয়েই চলছে। সেটাকে আপডেট করার একটা বিষয় ছিল। এজন্য এটাকে একটু পরিমার্জন করে বাংলায় আনা হয়েছে। ৩৯ নম্বর ধারাও নতুনভাবে আনা হয়েছে।’
সচিব বলেন, ‘এ আইনের ৩৭ ধারায় প্রস্তাব রাখা হয়েছে, বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা কর্মচারী যদি কোন বিধান লঙ্ঘন করে সরবরাহ এলাকার বাইরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বা যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখে, বা ত্রুটিযুক্ত বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করে, তাহলে তারও সাজা হবে। এ ক্ষেত্রে অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড বা ১ লক্ষ টাকার অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
বিদ্যুৎ চুরির সাজা
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এই আইনে বিদ্যুৎ চুরি করলে যতটুকু বিদ্যুৎ চুরি হয়েছে, তার দ্বিগুণ জরিমানা আদায় করা হবে। পাশাপাশি থাকছে কারাদণ্ডের বিধান।
শফিউল আলম বলেন, খসড়া আইনের ৩২ নম্বর ধারায় বিদ্যুৎ চুরির জন্য অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা চুরি করা বিদ্যুতের মূল্যের দ্বিগুণ অথবা ৫০ হাজার টাকার অর্থদণ্ড এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও চুরি করা বিদ্যুতের মূল্যের দ্বিগুণ অথবা পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
অন্য যেসব সিদ্ধান্ত
বৈঠকে ‘প্রতিরক্ষা-বাহিনীসমূহের প্রধানদের (নিয়োগ, বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধা) আইন ২০১৭’, ‘হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ২০১৭’, ‘বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ২০১৭’ এবং ‘খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ২০১৭’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ