২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:৫৮

চলছে না ফুট ওভারব্রিজের চলন্ত সিঁড়ি

Vision  ad on bangla Tribune

দেশজনতা ডেস্ক :

দুই ফুট ওভারব্রিজের চার চলন্ত সিঁড়ি (এস্কেলেটর) নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ঢাকা উত্তরা সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। কয়েক দফায় মেরামতের পরও অকেজো হয়ে পড়েছে দু’টি চলন্ত সিঁড়ি। সেগুলো মেরামতের জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দিলেও তাতে সাড়া দিচ্ছেনা ডিএনসিসি। তাই প্রায় একমাস ধরে বন্ধ রয়েছে সিড়ি দু’টি। কবে নাগাদ চালু হবে, তাও বলতে পারে না কেউ।

রবিবার (৭ মে) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনের ফুটওভার ব্রিজের পশ্চিম পাশের চলন্ত সিঁড়িটি বন্ধ দেখা গেছে। ব্রিজের নিচে থাকা হকাররা জানান, গত একমাস ধরে সিঁড়িটি বন্ধ। তালা দিয়ে রাখা হয়েছে। সিঁড়িতে ময়লা জমে আছে।

সিঁড়ির নিচে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি কক্ষের ভেতরে তিন যুবক বসে আছে। তাদের মধ্যে দু’জন বর্তমানে এই সিঁড়িটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। এদের একজনের নাম সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখানে প্রচুর মানুষ। আমরা প্রথমে ধারণা করতে পারিনি এত মানুষ হবে। সার্ভিসিং করে ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।’

এই চলন্ত সিঁড়ির সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হরাইজন টেকনো লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আহসান হাবীব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিমানবন্দরের চলন্ত সিঁড়িটির এক বছরের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শেষ হবে আগস্ট মাসে। আমরা আগস্ট পর্যন্তই দেখভাল করব। এই সময়ের মধ্যে কোনও সমস্যা হলে তা আমরা দেখব, সার্ভিসিং করব।’

আহসান হাবীব বলেন, ‘চলন্ত সিঁড়িতে বাড়তি লোড পড়ছে। প্রতিঘণ্টায় এই সিঁড়িতে সাড়ে ছয় হাজারের কিছু বেশি মানুষ চলাচল করতে পারে। কিন্তু বিমানবন্দর এলাকায় প্রতিঘণ্টায় সিঁড়ি ব্যবহার করে ১২ থেকে ১৫ হাজার মানুষ। এই বাড়তি লোড নিয়ে আমরাও বিপদে আছি। ২৫ দিন ধরে এর একটি বেল্ট ড্যামেজ হয়েছে। সেটার জন্য মালয়েশিয়ায় অর্ডার করা হয়েছে। সেটা আসার আগ পর্যন্ত এক পাশের সিঁড়ি বন্ধ থাকবে।’

আপনারা এই সিঁড়ির দেখভাল করছেন কেন— এ প্রশ্নের জবাবে আহসান হাবীব বলেন, ‘এই কাজটা আমাদের করার কথা না। বিমানবন্দরের এই সিঁড়ি দেখভালের জন্য আমাদের মাসে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। দু’জন অপারেটর সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া মাসে পাঁচ বার সার্ভিসিং করতে হয়, পাঁচ বার পরিষ্কার করতে হয়, পাঁচ বার অ্যাডজাস্ট করতে হয়। এসব ঝামেলার কারণেই আমরা মাঝখানে দেখভাল বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু আটলান্টিক মেরিন, ডিএনসিসি ও নেভি ডকইয়ার্ড আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিচালনা চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছে। এর জন্য মাসে ৩০ হাজার টাকাও দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই টাকার দেখা মেলেনি। আগস্টে এক বছর হয়ে গেলে আমরা পরিচালনার দায়িত্ব ছেড়ে দেবো।’

বনানীর চলন্ত সিঁড়ির বিষয়ে আহসান হাবীব বলেন, ‘বনানীর সিঁড়ির দেখভালের খরচ আলাদা। এটা তিন বছর আগে লাগানো হয়েছিল। এর খরচ টেন্ডারের মাধ্যমে ডিএনসিসি দিয়ে থাকে। প্রতিবছর ৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা খরচ দেয়। সেখানেও আমাদের দু’জন অপারেটর আছে।’

রবিবার বনানীর ফুটওভার ব্রিজে গিয়ে দেখা গেছে, সেটিরও পূর্ব পাশের সিঁড়িটি বন্ধ। তালা দিয়ে রাখা হয়েছে। পশ্চিম পাশেরটি চলছে। এ বিষয়ে ম্যানেজার হাবীব বলেন, ‘তিন বছর ধরে চলছে। বেল্টের ড্রাইভ ক্ষয় হয়েছে। এর আগেও একবার হয়েছিল, তখন আমরা ওয়ার্কশপে নিয়ে সারিয়ে দিয়েছি। প্রতিটি ড্রাইভ মেরামত করতে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আমরা ডিএনসিসিকে এটা ঠিক করতে বলেছি। তারা বলছে, সারিয়ে দিন, আমরা টাকা পরে দেবো। কিন্তু এর আগে কয়েকবার বিভিন্ন কাজ করেছি। সেই টাকা পাইনি। আমরা ডিএনসিসিকে বলছি, ‘আমরা অফার লেটার দিয়েছি, আপনারাও ওয়ার্ক অর্ডার পাঠান। তাহলে কাজ করব।’ কিন্তু তারা দেয়নি। এই সিঁড়ি মেরামত করলে চালানো যাবে। ডিএনসিসি এটি খুলে কাজ করার অনুমতি দেয়নি।’

তিনি বলেন, ‘ডিএনসিসি এই সিঁড়িগুলো চালানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। কারণ এটি দেখভালের অর্থ বরাদ্দ থাকলেও যন্ত্রাংশ কেনার জন্য কোনও বরাদ্দ নেই। এই বরাদ্দ না থাকলে তারা চলন্ত সিঁড়ি চালাতে পারবে না।’

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ডিএনসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সৈয়দ আনোয়ারুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কয়েকবার ফোন ও মেসেজ দিলেও তিনি কোনও উত্তর দেননি।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে বনানী ও ২০১৬ সালে বিমানবন্দরের ফুট ওভারব্রিজে স্থাপন করা হয় চলন্ত সিঁড়ি। ডিএনসিসির অর্থায়নে এই প্রকল্পের দায়িত্ব পায় বিমানবাহিনীর ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড। তারা নিজেরা না করে চট্টগ্রামের আটলান্টিক মেরিন কোম্পানিকে সাব-কন্ট্রাক্ট দেয় এ কাজের জন্য। আটলান্টিক মেরিন আবার সিঁড়িগুলো কিনে নেয় হরাইজন টেকনো লিমিটেডের কাছ থেকে। দু’টি ফুট ওভারব্রিজের চার চলন্ত সিঁড়িই বর্তমানে দেখভাল করছে হরাইজন টেকনো।

M/H

প্রকাশ :মে ১০, ২০১৭ ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ