নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঐতিহাসিক চলনবিল, যা বাংলাদেশের বড় বিলগুলোর মধ্যে একটি। এর ভৌগোলিক অবস্থান ও সীমানা বিশাল। সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোর এই তিনটি জেলার প্রায় নয়টি উপজেলায় এই বিল বিস্তৃত। ছোটবড় অনেক বিস্তৃত ডোবা, খাল ও জলাশয় নিয়ে গঠিত এ চলনবিল। বর্ষাকালে যেদিকে চোখ যায় শুধুই জলরাশি। জলরাশি জুড়ে ঢেউয়ের খেলা। আবার শুষ্ক মৌসুমে দিগন্ত রেখায় সবুজের আলপনা। চলনবিল প্রাণ ফিরে পায় বর্ষাকালে। এ কারণে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য এই মৌসুমে চলনবিল হতে পারে উপযুক্ত গন্তব্য।
সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও পাবনা জেলার সিংড়া, গুরুদাসপুর, তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, বনয়ারীনগর ফরিদপুর, চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার প্রায় ১২ হাজার বর্গমাইল আয়তনের বিলটি এখন অনেক ছোট হয়ে এসেছে বলে জানা গেছে।
এখানে পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো প্রাকৃতিক দৃশ্য ও বহু প্রত্নতাত্ত্বিকি ঐতিহাসিক স্থানও রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, তাড়াশ উপজেলার বিনসাড়ায় বেহুলা লক্ষীণদারের জিয়নকুপ ও পিতা বাছিয়া বানিয়া সওদাগারের বাড়ি, উপজেলা সদরে রায় বাহাদুরের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি, নওগায়ে তাপস শ্রেষ্ঠ ওলিয়ে কামেল শাহ শরীফ জিন্দানী (রহ.) এর মাজার শরীফ।
অন্যদিকে রয়েছে চাটমোহরের শীতলাইয়ের জমিদার বাড়ি, সদরে শাহী মসজিদ, গুরুদাসপুর উপজেলার চলনবিল জাদুঘর, সিংড়ার পেট্রোবাংলা, তিসিখালী মাজারসহ অনেক দর্শনীয় স্থান।
দেশের উৎপাদিত মাছের অন্যতম প্রধান উৎস সিরাজগঞ্জের চলন বিলাঞ্চল। কিন্তু প্রতি বছর কমছে এ অঞ্চলে মাছের উৎপাদন, বিলুপ্ত হচ্ছে মাছের প্রজাতি। মাছে-ভাতে বাঙালি বাংলার চিরায়ত প্রবাদ। কিন্তু মানুষের নানামুখী হস্তক্ষেপের কারণে ইদানিং কমতে শুরু করেছে মাছের উৎস। একই সঙ্গে হুমকির মুখে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। কিছু মাছ ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
বিলুপ্তির পথে এমন মাছের সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, মানসম্মত পোনার অভাব, বিল এলাকায় প্রাকৃতিক জলাভূমির পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া, ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার এবং ডিমওয়ালা মাছ ধরা প্রভৃতি কারণে বিলুপ্ত হয়েছে দেশি প্রজাতির ২৫ রকমের মাছ।
এদিকে চলনবিলের শুঁটকি মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। স্থানীয় বাজারে সৃষ্টি, শুঁটকি সংরক্ষণাগার তৈরি আর সেই সঙ্গে সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক পদ্ধতিতে এই শুঁটকি তৈরি করতে পারলে তা বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
চলনবিলের বারুহাস এলাকার মনোহরদী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক পরিবর্তন ডটকমকে জানান, বর্তমানে দেশীয় প্রজাতির কিছু মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। এগুলো চোখে পড়ছে না।
নাদোসৈয়দপুর গ্রামের কলেজ শিক্ষক আতিকুল ইসলাম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, চলনবিলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণারত শিক্ষক গবেষকদের আসতে দেখলেও এর পরিবেশ ও ঐতিহ্য রক্ষার জন্য কাউকে আসতে দেখলাম না। তিনি জানান, সরকার ইচ্ছা করলেই এটিকে পর্যটন উপযোগী করে দেশের ঐতিহ্যবাহী সম্পদকে রক্ষা করতে পারে।
চলনবিল সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সমন্বয় পরিষদের সভাপতি হোসনে আরা পারভিন বলেন, আমরা চলনবিলকে রক্ষার জন্য এবং ভেতরে প্রবাহমান ১০-১২টি নদনদীসমূহের সংস্কার ও গতিপথ বন্ধ করে অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদ, পর্যটন কর্পোরেশনের আওতায় এনে পর্যটকদের প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদানসহ ১০ দফা দাবি জানিয়ে স্মারকলিপিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি।
তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান পরিবর্তন ডটকমকে জানান, জাতীয় কৃষি প্রযুক্তি প্রকল্পের আওতায় মৎস্য চাষিদের প্রশিক্ষণ, নার্সারি স্থাপন, জাল ও পিলেট মেশিন প্রদান, পানি পরীক্ষা, পরামর্শ ও মাঠ দিবসের আয়োজন করা হয়।
অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা এলাকার জনগণের জীবিকা নির্বাহ নিশ্চিতকরণ প্রকল্পের আওতায় অভয়াশ্রম স্থাপন, পোনা অবমুক্তি, বিকল্প আয়বর্ধক কর্মসূচি, জলাশয় পুনর্খনন, সমিতি গঠন ও তাদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ