নিজস্ব প্রতিবেদক:
মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও বৃষ্টির কারণে কাউয়াদিঘী হাওরে পানি বেড়ে গেছে। এ কারণে নতুন করে আরো ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ৪০ হাজার হেক্টর আয়তনের হাকালুকি হাওরকে ঘিরে আছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা এবং সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা।
কুশিয়ারা নদী, হাকালুকি, কাউয়াদীঘি ও হাইল হাওরে পানি বাড়ার কারণে মৌলভীবাজার জেলার ৫টি উপজেলা বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, রাজনগর ও সদর উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। এসব বানভাসি মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বুধবার রাত থেকে বৃষ্টির কারণে মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরে পানি বেড়ে গেছে। এতে জেলার রাজনগর ও সদর উপজেলার ৫০ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কাউয়াদীঘি হাওরের বন্যায় রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর ও পাঁচগাঁও ইউনিয়নের প্রায় পুরোটা এবং মুন্সিবাজার, মনসুরনগর, রাজনগর সদর ও উত্তরভাগ ইউনিয়নের আংশিক প্লাবিত হয়েছে। মৌলভীবাজার সদর ইউনিয়নের একাটুনা ও আখাইলকুরা ইউনিয়নের কাউয়াদীঘি হাওর সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকাও প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কাউয়াদীঘি হাওর থেকে কুশিয়ারা নদীর পানি সামান্য নিচে। মনু নদ প্রকল্পের কাশিমপুরে স্থাপিত পাম্প হাউসের গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খুব একটা পানি কমছে না। বৃষ্টি হলেই পানি বাড়ছে।
মৌলভীবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান (২৫ জুলাই মঙ্গলবার) স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মৌলভীবাজারের ৫টি উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ২৫টি ইউনিয়নে ২৯৪টি গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৭০ জন। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৪৮টি, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৫৩,৩৪২টি, ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ৫,৬৪৩ হেক্টর, ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ৫২৫টি, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৬,৯০৮টি, ১২টি আশ্রয়কেন্দ্র ১৩২টি পরিবার, আশ্রয় কেন্দ্রে লোক সংখ্যা ৬৪০জন, মৃতের সংখ্যা ১০ জন, বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯৯টি।
মৌলভীবাজার দুর্যোগ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আশরাফ আলী বলেন, হাইল হাওর, কাউয়াদীঘি ও হাকালুকি হাওরের বন্যার পানি কমছে। জেলায় বন্যায় কত মানুষ ও কী পরিমাণ সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার সর্বশেষ তথ্য আমরা সংগ্রহ করেছি। ত্রাণ বিতরণ বা আত্মসাতের কোনো তথ্য বা অভিযোগ থাকলে তা সঙ্গে সঙ্গে জানানোর অনুরোধ করেছেন এ কর্মকর্তা।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ইন্দ্র বিজয় শংকর চক্রবর্তী বলেন, বৃহস্পতিবার শেরপুরে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ও শেওলা পয়েন্টে বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ও সিলেটের শেওলা পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারার পানি কমায় হাকালুকি হাওর পাড়ে পানি কমছে।
তিনি আরো বলেন, বৃষ্টির কারণে কাউয়াদীঘি হাওরের একটু পানি বেড়েছে। তবে হাওরে বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমেছে। কাউয়াদীঘি ও হাকালুকি হাওর পাড়ের গ্রামগুলোয় যাতায়াতের একমাত্র বাহন নৌকা।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ