নিজস্ব প্রতিবেদক:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি রয়েছে চরম বই সংকটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের তথ্যমতে আরেকটি ভয়ঙ্কর কথা হলো বিগত ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত পাঁচ বছরে লাইব্রেরি বই কিনেছে মাত্র ৯৯৫ টি! এর সাথে যুক্ত হয়েছে গরমে ভোগান্তি। যদিও কর্মকর্তাদের রুমে এসি আছে কিন্তু রিডিং রুমগুলোতে এসি না থাকায় পাঠরত শিক্ষার্থীরা রয়েছে চরম ভোগান্তিতে। চলমান ফ্যানগুলো চলছে একেবারে ধীর গতিতে। এছাড়াও রিডিং রুমটি একেবারে বদ্ধ, নেই কোনো জানালা। নেই পর্যাপ্ত বসার জায়গা। রেফারেন্স রুম থাকলেও তাতে নেই পর্যাপ্ত বই। নেই দক্ষ জনবল। এরকম হাজারো সমস্যার মধ্যে চলছে জবি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির ব্যবস্থাপনা। সরেজমিনে এমনটিই পাওয়া গেল জবি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পরিবেশ। গরমের তাড়নায় কেউ হাত পাখা কিংবা নিজ বইকেই পাখা হিসেবে ব্যবহার করছেন। এসবের কারণ জানতে চাইলে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী বিথী পারভীন বলেন, কি করব বলেন? একে তো ছয় তলায় লাইব্রেরি তার উপর এসি তো দূরের কথা নেই পর্যাপ্ত ফ্যান। এতো গরমে তো আর পড়া-শুনায় মনোনিবেশ করা যায় না। তাই হাত পাখার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। গরমের কারণে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমেছে বলেও তিনি জানান। সরেজমিনে দেখা যায়, জবি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিটি নতুন ভবনের ৬ষ্ঠ তলার একটি ফ্লোরে চলছে গ্রন্থাগারটির কার্যক্রম। গ্রন্থাগারে প্রবেশের মুখেই রয়েছে ছোট টোকেন কাউন্টার। শিক্ষার্থীদের ব্যাগ, নিজেদের বই-খাতাসহ অন্যান্য জিনিস এখানে রেখে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। গ্রন্থাগারটির ভেতরের একটি কর্ণারে রয়েছে ক্যাটালগ বক্স। সেখান থেকে পড়ার বিষয়, গ্রন্থ ও লেখকের নাম লিখে সংশ্লিষ্ট লাইব্রেরি সহকারীকে দেওয়ার পর দেখা যায়, কাঙ্ক্ষিত বইটি পাওয়া যাচ্ছে না। পাঠকক্ষটি আবার প্রবেশপথের কাছে হওয়ায় কর্মকর্তাদের নিজেদের মধ্যে কথাবার্তায় ব্যবহারকারীদের পাঠে মনোনিবেশে বিঘ্ন ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে মোট ৩৮টি বিভাগ রয়েছে। এসব বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২২ হাজারেরও বেশি। এত সংখ্যক শিক্ষার্থীর তুলনায় গ্রন্থাগারটি অনেক ছোট। জায়গার অভাবে অল্প জায়গায় অনেক শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে বসতে হয়। এজন্য স্বতন্ত্র গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার দাবী জানিছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বাইশ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে গ্রন্থাগারটির আসন সংখ্যা মাত্র ৩৫০ টি।
কাগজে কলমে বর্তমানে লাইব্রেরিতে বই আছে প্রায় ২৮ হাজারের বেশি, রেফারেন্স বই প্রায় ৩০০০টি, দৈনিক পত্রিকা পাওয়া যায় ১৩টি এর মধ্যে ৪টিকে সংরক্ষণ করা হয়। জার্নাল আছে প্রায় ২৫০০টি, এছাড়া মুক্তিযুদ্ধেও বই আছে প্রায় ১০০০টি। তবে অনলাইন লাইব্রেরিতে বই আছে ১৫০০০০টি। যা ছাত্রের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এসব সংখ্যা কাগজে থাকলেও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রয়োজনীয় বই তারা পান না। এমনকি ক্যাটালগে যে বইয়ের নাম লেখা থাকে সেগুলোও পাওয়া যায় না।
ই-লাইব্রেরির একটি কক্ষে শিক্ষকদের জন্য ৭টি কম্পিউটারের মধ্যে তিনটিই নষ্ট। ই-লাইব্রেরির অন্য কক্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য ২৩টি কম্পিউটারের মধ্যে ৯টি অচল। আর ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও হাতে গোনা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই গ্রন্থাগারে। এছাড়া ফটোকপি মেশিন না থাকার কারণে গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের কপি করতে পারছেন না বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গ্রন্থাগারটির সার্বিক উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনও নজর নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সিদ্দীক বলেন, ‘পুরো ষষ্ঠ তলা গ্রন্থাগারের জন্য বরাদ্দ ছিল। কিন্তু গত বছরের ২৯ মে গ্রন্থাগারের পাঠকক্ষের একটি অংশ অস্থায়ীভাবে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে এক সেমিস্টারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। এতে গ্রন্থাগারটি আরো ছোট হয়ে যায়। স্থানের অভাব থাকায় গ্রন্থাগারের মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, পত্রিকা পাঠ, রেফারেন্স বইয়ের কার্যক্রম একটি কক্ষেই হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় আমাদের দাবী হচ্ছে, একটি আলাদা বিল্ডিং প্রতিষ্ঠা করে সেখানে স্বতন্ত্র গ্রন্থাগার চালু করতে হবে।”
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম ছাত্র সংগঠন গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর পরিসর কে বৃদ্ধিও জন্য দীর্ঘ দিন থেকে আন্দোলন করছে কিন্তু কার্যত কোনো ফলাফল পাচ্ছে না তারা। তবে এর আগে আন্দোলনের মুখে লাইব্রেরী সকাল আটটা থেকে বিকেল ৪ টার পরিবর্তে রাত ৮টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
লাইব্রেরি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে লাইব্রেরিতে স্থায়ী জনবল আছে ১০ জন। এদের মধ্যে ৫ জন অফিসার পদে আছেন। আর ডেইলি বেস এ আছেন ১৫ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী মানের জনবল। ডেইলি বেস এর কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা, তারা প্রতিদিনের জন্য বেতন পেয়ে থাকেন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের চাকরি স্থায়ী করার আশ্বাস দিয়েছেন।
লাইব্রেরির সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক মো. এনামুল হক পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আসলে আমাদের আইটি সেক্টরের লোক কম থাকায় নষ্ট কম্পিউটারগুলো বারবার ঠিক করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা ভালো সার্ভিসটি দেওয়ারই চেষ্টা করছি। আর নিজস্ব জেনারেটর ব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বসহ দেখবেন। প্রতিবছর কতটাকার বই কেনা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি কোনো বই কিনে না।
প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগকে টাকা ভাগ করে দেয়া হয় তারা নিজ নিজ বিভাগের সেমিনারের জন্য বই কিনে আমাদের জন্য কিছু দেয় যা আমরা সংরক্ষণ করে রাখি। তবে এবছর প্রায় ১৮ লাখ টাকার বই কেনার একটি টেন্ডার আমরা চুড়ান্ত করেছি এবং তা ভিসি স্যার স্বাক্ষর করেছেন এখন তা পরিকল্পনা দপ্তরে আছে। আমরা যদি আরো বেশি বরাদ্ধ পাই তো লাইব্রেরিকে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা করব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ভিসি ড. মীজানুর রহমান পরিবর্তন ডটকমকে জানান, ‘আমরা দেশের প্রথম অনলাইন লাইব্রেরি চালু করেছিলাম। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিকে একটি আধুনিক লাইব্রেরিতে রুপান্তরিত করার চেষ্টা করছি। এবছর আমরা টেন্ডারের মাধ্যমে বই কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
দৈনিকদেশজনতা/এন এইচ