কুমিল্লা প্রতিনিধি:
কুমিল্লার চান্দিনার রাতুল আলম এবার ১৩ বছর বয়সেই এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এ বছর প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষায় ফলাফলে চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সে জিপিএ ৪.০৮ পেয়েছে। ওই কলেজ থেকে নিয়মিত ১৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সফলতা অর্জন করে একমাত্র রাতুল। বাকিরা সবাই পেল করেছে৷ রাতুল জেলার চান্দিনা উপজেলা সদর হাসপাতাল রোড এলাকার ডা. মোর্সেদ আলমের বড় ছেলে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রাতুলের জন্ম ২০০৪ সালের ২১ জানুয়ারি। ২০০৯ সালে মাত্র ৫ বছর বয়সেই পঞ্চম শ্রেণির লেখাপড়া শেষ করে ওই শিশু। যে বয়সে শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি শুরু হওয়ার কথা সেই বয়সে রাতুলকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করাতে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ঘুরে বেড়ান তার বাবা-মা। শিক্ষকদের সব প্রশ্নের উত্তর রাতুল দিতে পারলেও সরকারি বিধি না থাকায় ২০১০ সালে ৬ বছর বয়সে পঞ্চম শ্রেণিতে তাকে ভর্তি করা সম্ভব হয়নি। ফলে ২০১১ সালে পাশের দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর ভয়েজার ইংলিশ মিডিয়াম নামের একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ওই বছরই প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় পাস করে রাতুল।
২০১২ সালে চান্দিনার কেরনখাল উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ওই বছর জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষায় পাস করে ২০১৩ সালে সে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে ১১ বছর বয়সে একই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় ‘এ’ গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয় শিশু রাতুল। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজে ভর্তি হয়ে ২০১৭ সালে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে সে ‘এ’ গ্রেড পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করে। এতে রাতুল এলাকায় ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। তবে জিপিএ-৫ না পাওয়ায় হতাশ রাতুল। নির্ধারিত পয়েন্ট না থাকায় মেডিকেলে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার। এ নিয়ে শিক্ষা পদ্ধতিকে দায়ী করেন তার অভিভাবক।
রাতুলের বাবা ডা. মোর্সেদ আলম বলেন, ‘ রাতুল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে যায়নি। ছোটবেলায় বাসায় তার পড়ালেখা শুরু হয় মুখে কথা ফোঁটার পর থেকেই । মাত্র ৫ বছর বয়সেই সে পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজি, গণিত থেকে শুরু করে পুরো সিলেবাস শেষ করে ফেলে। তাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করতে চেয়েছিলাম ২০১০ সালে। কিন্তু দেশের শিক্ষা পদ্ধতিতে ৬ বছরের নিচে কোনো শিশুকে প্রথম শ্রেণিতেই ভর্তি করা সম্ভব না, বিধায় রাতুলকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির অনুমতি দেননি তৎকালীন চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। বাধ্য হয়ে পরের বছর ভর্তি করাই দাউদকান্দি উপজেলা থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ।’
তিনি আরো বলেন, ‘২০১২ সালের মধ্যে সে অষ্টম শ্রেণির সিলেবাস সমাপ্ত হলে ওই বছর তাকে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি করানোর জন্য যেখানেই গিয়েছি সেখানেই বিড়ম্বনায় পড়েছি। অবশেষে তার জন্ম সনদ, অষ্টম শ্রেণির পাসের সনদ ও সিভিল সার্জনের ডাক্তারি সনদ নিয়েও অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন করতে পারিনি। বাধ্য হয়ে তার নির্ধারিত বয়সের চেয়ে আরো চার বছর বাড়িয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়েছে। সে বছর জেএসসি পাস করে তার আর থেমে থাকতে হয়নি । রাতুল আলম ২০১৫ সালে এসএসসি ও ২০১৭ সালে এইচএসসি পাস করে ।’
‘রাতুলের নির্ধারিত পয়েন্ট না থাকায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে মেডিকেলে ভর্তি । আমার বিশ্বাস রাতুল মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলে সে উত্তীর্ণ হতো। রাতুলের বাবার অভিযোগ বয়স জটিলতায় আমার ছেলের মতো দেশের আরো অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী তাদের মেধা যাচাই করতে পারছে না,’ । তাই শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন চেয়েছেন ডা. মোর্সেদ আলম।
চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘রাতুল এর বয়স ১৩ বছরের বেশি হবে না। কিন্তু শিক্ষা পদ্ধতির কারণে তার বয়স বাড়াতে হয়েছে। সার্টিফিকেটে তার বয়স বাড়ালেও তাকে যে কেউ দেখলেই প্রকৃত বয়স অনুমান করতে পারবে। রাতুল আমাদের কলেজ থেকে এ বছর একমাত্র পাস করা ছাত্র। আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষ তার জন্য দোয়া করি।’
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি