লাইফ স্টাইল ডেস্ক:
শরীরের কথা ভেবে বৃষ্টিকে অপছন্দ করেন যারা, তারা জেনে নিন, অল্প-বিস্তর বৃষ্টিতে ভিজলে একেবারেই শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না। বরং মন ও মস্তিষ্ক একেবারে চাঙ্গা হয়ে যায়। কীভাবে এমনটা হয়, চলুন জেনে নেওয়া যাক। প্রসঙ্গত, একটানা ১০-১২ মিনিটের বেশি বৃষ্টিতে ভিজবেন না যেন, তাহলে কিন্তু শরীর বিদ্রোহ করলেও করতে পারে। আর বৃষ্টিতে ভেজার পর মনে করে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা লিকার চা অথবা গ্রিন টি খেয়ে নেবেন, তাহলেই দেখবেন শরীর খারাপ কাছেও ঘেঁষতে পারবে না।
১.
বৃষ্টির পানিতে কোনও ভেজাল থাকে না। তাই তো সেই পানি শরীরে লাগলে কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাই থাকে না। প্রসঙ্গত, বৃষ্টির পানি মাটিতে, নদী-নালায় মেশার পর নোংরা হয়ে যায়, তার আগে নয়! সেই কারণেই তো বিশ্বের অনেক দেশে বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখা হয়। পরে প্রয়োজন মতো তা পান করা হয়ে থাকে।
২.
একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে বৃষ্টির সময় হাওয়া-বাতাস খুব বিশুদ্ধ হয়ে যায়। তাই তো ওই সময় শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করা প্রতিটি বায়ু আমাদের দেহের উপকারে লাগে। শুধু তাই নয়, বৃষ্টির সময় পরিবেশে উপস্থিত টক্সিক উপাদানের ক্ষতি করার ক্ষমতাও খুব কমে যায়। ফলে এই সময় বাড়ির বাইরে থাকলে সব দিক থেকে শরীরের ভালই হয়। তবে যেমনটা অগেও অলোচনা করা হয়েছে যে ১০-১২ মিনিটের বেশি বৃষ্টিতে ভেজা চলবে না। এর বেশি হলে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া আর কোনও ক্ষতি যদিও হয় না।
৩.
সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে বৃষ্টির পানি পরিষ্কার পাত্রে সংগ্রহ করে খেলে শরীরের উপকার হয়। সেই সঙ্গে একাধিক রোগের প্রকোপও হ্রাস পায়। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন, যে পাত্রে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করছেন সেই পাত্র যেন জীবাণুমুক্ত হয়, না হলে কিন্তু শরীরের ভাল হওয়ার পরিবর্তে খারাপই হবে বেশি।
৪.
বারিবর্ষণের সময় পরিবেশে উপস্থিত জলীয় বাষ্প ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভাল হয়। শুধু তাই নয়, বৃষ্টির পর জলীয় বাষ্প বেড়ে যাওয়ার কারণে পরিবেশে উপস্থিত একাধিক ক্ষতিকর জীবাণুর কর্মক্ষমতা কমে যায়। ফলে এই সময় শরীরের কোনও ক্ষতি হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না।
৫.
বৃষ্টির পর কেমন মাটি থেকে সোঁদা গন্ধ বেরোয় দেখেছেন। এই গন্ধটাকে মন-প্রাণ দিয়ে শরীরে অন্দের নিয়ে যাবেন, দেখবেন নিমেষে মন ভাল হয়ে যাবে। গবেষকরা এই গন্ধকে ‘পেট্রিকোর’ নামে ডেকে থাকেন। প্রসঙ্গত, বৃষ্টি পড়া মাত্র মটিতে উপস্থিত এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া বিশেষ এক ধরনের কেমিক্যাল রিলিজ করে। যে কারণে এমন সোঁদা গন্ধ বেরোতে শুরু করে।
৬.
বেশ কিছু গবেষক মনে করেন বৃষ্টির পানি চরিত্রে অ্যালকেলাইন। অর্থাৎ এই পানি পান করলে শরীরের অন্দরে জমে থাকা টক্সিক উপাদান বেরিয়ে যায়। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। এখানেই শেষ নয় অ্যালকালাইন রক্তের পি এইচ লেভেলকে স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসে। ফলে শরীরে অ্যাসিডির মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে একাধিক রোগের প্রকোপ হ্রাস পায়।
৭.
আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বৃষ্টির পানি অ্যালাকালাইন হওয়ায় ক্যান্সারের কষ্ট কমাতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। যদিও এই যুক্তির স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
৮.
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৩ চামচ বৃষ্টির পানি খেলে অ্যাসিডিটি এবং গ্যাস-অম্বল হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতারও উন্নতি ঘটে।
৯.
অনেককে বলতে শুনেছি বৃষ্টিতে ভেজার পর শ্যাম্পু না করলে নাকি চুলের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এই ধারণা কিন্তু মোটেও ঠিক নয়। কারণ বাস্তবে একেবারে উল্টো ঘটনা ঘটে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃষ্টির পানি বিশুদ্ধ হয়। ফলে এই পানি দিয়ে চুল ধুলে মাথার ত্বকে থাকা একাধিক ব্যাকটেরিয়া এবং ময়লা ধুয়ে যায়। ফলে চুলের সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি খুশকি সহ নানাবিধ রোগের প্রকোপও কমে।
১০.
কখনও লক্ষ্য করেছেন কিনা জানা নেই। তবে বৃষ্টিতে ভেজার পর আমাদের ত্বক আরও উজ্জ্বল এবং সুন্দর হয়ে যায়। কারণ সেই একই! বৃষ্টির পানি ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই স্কিন তার হারিয়ে যাওয়া ঔজ্জ্বল্য ফিরে পায়।
১১.
বেশ কিছু কেস স্টাডি করে দেখা গেছে তুমুল বৃষ্টিতে ৫ মিনিট ভিজলে স্ট্রেস লেভেল একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে শরীরের ক্লান্তিও দূর হয়।
সাবধানতা: গর্ভবতী মহিলারা ভুলেও বৃষ্টিতে ভিজবেন না যেন! এমনটা করা এই সময় শরীরের পক্ষে একেবারেই ভাল হবে না।
খেয়াল রাখবেন: বৃষ্টির পানি খাওয়ার আগে দেখে নেবেন যেখানে সেটি স্টোর করেছেন সেটি পরিষ্কার কিনা। না হলে কিন্তু কোনও উপকারই পাবেন না। উল্টো শরীরের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।
দৈনিকদেশজনতা/এন এইচ