১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ ইং | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:১০

ভেসে উঠেছে বন্যার ক্ষত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জামালপুরে বন্যার পানি নামায় ভেসে উঠেছে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটের ক্ষত চিহ্ন। ক্ষত-বিক্ষত রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও বাড়িঘর বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে। দুই সপ্তাহের বন্যায় বিধ্বস্ত হয়ে জেলার ৭টি উপজেলার ৩১৮ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা রাস্তা এখনও উপজেলাগুলোর সঙ্গে ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইসলামপুর উপজেলা। উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসান আলী জানিয়েছেন শুধু এ উপজেলায় ৮৮ কিলোমিটার রাস্তার ক্ষতি হয়েছে । রাস্তাঘাট ছাড়াও ৩ হাজারের বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন চিত্রই বিরাজ করছে বন্যায় আক্রান্ত এলাকার সর্বত্রই । পানির সঙ্গে লড়াইয়ের পর যমুনা পাড়ের সংগ্রামী মানুষগুলোকে বিধ্বস্ত ঘরবাড়িতে মেরামতের লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে ।

ইসলামপুরের চিনাডুলি ইউনিয়নের বলিয়াদহ গ্রামের মুন্না আকন্দ বলেন, পানির আঘাতে বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে এছাড়া ঘর-বাড়ি মেরামত করব সেই টাকাও হাতে নেই। কোনোমতো বিধ্বস্ত ঘর নিজেই ঠিকঠাক করে পরিবার-পরিজন নিয়ে উঠেছি। বলিয়াদহের খানপাড়ার ষাটোর্ধ্ব ভিখারিনী মোমেনা বেগমের ছাপড়া ঘর বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বাবা আমার ছাপড়া ঘর বানে ভাইস্যা গেছে। আমি অহন থাকমো কই। বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভিক্ষা চামু হগ্যলেরইতো একি অবস্থা। কোনোমতে একটু আধতো খাইয়্যা বাইচাঁ আছি। খোলা আকাশে রাইত কাটাইতাছি। এডা ইলিফের ব্যবস্থা কইরা দ্যান।’

বলিয়াদহ বাজারে দেখা হয় খানপাড়া গ্রামের সোহরাব খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমগো কিসমতে রিলিফ নাই, তালিকায় মেম্বর চেয়ারম্যানের লোকজনের নাম উঠে। আমগো লোকও নাই বলে তালিকায় নামও ওঠে না। সেখানেই সাবেক মেম্বার আবুল কাশেম জানালেন, তালিকা তৈরিতে স্বজনপ্রীতি হচ্ছে। অনেকে ২/৩টা করে রশিদ পাচ্ছেন। আর যার লোক নেই তার নাম তালিকায় উঠছে না। তিনি বলেন, ‘হাতে সিলিপ না থাকলেও ক্ষিধার জ্বালায় ত্রাণ বিতরণের কাছে চাপলেও খালি হাতে বাড়ি ফিরছে।’

জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছেন শুধু রাস্তাঘাট আর বাড়ি-ঘর নয় এবারের বন্যায় প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে । বন্যায় এ বছর জেলার ১ হাজার ১৩৪টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আব্দুল মজিদ জানালেন ৫ কোটি ২৬ লাখ ২২ হাজার টাকা মূল্যের ব্যক্তি পর্যায়ে মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হলেও ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষি ও খামারিদেরসরকারিভাবে ক্ষতিপূরণের সুযোগ নেই। এবারের বন্যায়  জামালপুর জেলার ৭টি উপজেলার ৪৮টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। আড়াই লাখ মানুষকে ১০ দিনের বেশি সময় ধরে পানিবন্দি অবস্থায় লড়াই করে থাকতে হয়েছে । এ ব্যাপারে জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবির পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমরা বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করি কোনো সমস্যা হবে না।’

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :জুলাই ২২, ২০১৭ ১২:০০ অপরাহ্ণ