নিজস্ব প্রতিবেদক:
বছরের পর বছর ব্যবসায়িক লোকসানে থাকলেও গত একমাসে অব্যাহত উত্থানে রয়েছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত অধিকাংশ লোকসানি কোম্পানি। লোকসানি কোম্পানিগুলোর উত্থান অব্যাহত থাকায় বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে উত্থান পতন থাকবেই। কিন্তু দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরের অস্বাভাবিক উত্থান বাজারের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এতে করে বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তারা বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ শুধু কোম্পানির দর বাড়ার নোটিশ প্রদানে সীমাবদ্ধ থাকায় বাজারে থেকে কারসাজি দূর করা যাচ্ছে না। লোকসানি কোম্পানিগুলোর অস্বাভাবিক শেয়ার দর বাড়ার নেপথ্যে কারা আছে তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আবু আহমেদ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, যে সব কোম্পানি বছরের পর বছর লোকসান করছে, বিনিয়োগকারীদের কোনো ডিভিডেন্ড দিতে পারছে না। এমন কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর এক মাসে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়া অস্বাভাবিক। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইচ্ছে করলেই এ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
তিনি বলেন, সুষ্ট তদন্তের মাধ্যমে লোকসানি কোম্পানিগুলোর অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। নতুবা বাজারের বড় বিপর্যয় আসতে পারে।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, গত এক মাসের উত্থানে প্রকৌশল খাতের তালিকাভুক্ত আজিজ পাইপসের শেয়ার দর বেড়েছে ৭৫.৩৮ শতাংশ। এ ছাড়া গত বছর ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি ও গত কয়েক বছর যাবত লোকসানে রয়েছে এমন কোম্পানিগুলোর ৯টির শেয়ার দর বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি।
আজিজ পাইপস :
অব্যাহত লোকসানে থাকায় একযুগেও বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড না দিলেও বিগত ১ মাসে আজিজ পাইপসের দর বেড়েছে ৭৫.৩৮ শতাংশ। ১৮ জুন কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৬৮.৭ টাকা। কিন্তু ১৬ জুলাই দিনশেষে তা ১১৯.৮ টাকায় স্থিতি পেয়েছে।
অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ :
৩০ জুন ২০১৬ সমাপ্ত হিসাব বছরে ডিভিডেন্ড প্রদান না করায় জেড ক্যাটাকরিতে রয়েছে বস্ত্র খাতের অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ। কিন্তু গত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ২৩.৫৭ শতাংশ।
তথ্য সূত্র বলছে, গত ১৯ জুন কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ১২.৩ টাকা। কিন্তু ১০ জুলাই ২৩.৫৭ শতাংশ বেড়ে ১৫.২ টাকায় দাঁড়িয়েছিল।
বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স :
মুনাফার ক্রম নিম্নমুখী প্রবণতায় লোকসানে জড়িয়ে যাওয়ায় ২০১৪ সালের পর ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স। কিন্তু বিগত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩৩.৩৩ শতাংশ। ১৯ জুন কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৯.৩ টাকা। কিন্তু ১৬ জুলাই কোম্পানিটির সমাপনী বাজার দর ছিল ১২.৪ টাকা।
ঢাকা ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং :
চলতি মূলধনের অভাবে ৩০ জুন ২০১৬ সমাপ্ত হিসাব বছরে ২৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা লোকসান গুনেছে বস্ত্র খাতের ঢাকা ডাইং। হঠাৎ লোকসানে জড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক বিক্রয় চাপে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বনিম্ন ৬.৬০ টাকায় নেমে গিয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতিক সময়ের উত্থানে কোম্পানিটির শেয়ার ফেসভ্যালু অতিক্রম করেছে। গত ১৮ জুন কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৮.৪ টাকা। কিন্তু ১৬ জুলাই তা ১০.৪ টাকায় স্থিতি পায়। অর্থাৎ একমাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ২৩.৮০ শতাংশ।
দুলামিয়া কটন :
অব্যাহত লোকসানে বিগত ৫ বছরে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি বস্ত্র খাতের দুলামিয়া কটন। এরই মধ্যে কোম্পানিটি ২৬ কোটি ২৩ লাখ টাকার পুঁঞ্জিভূত লোকসানও হয়েছে। তবে বিগত ১ মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩৬.৫৮ শতাংশ। ১৮ জুন কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৮.২ টাকা। কিন্তু ১৬ জুলাই তা ইস্যু মূল্যের ওপর উঠে ১১.২ টাকায় স্থিতি পেয়েছে।
কে অ্যান্ড কিউ (বাংলাদেশ) :
স্বল্পমূলধনী কে অ্যান্ড কিউ (বাংলাদেশ) অব্যাহত লোকসানে ১০ কোটি ৫৪ লাখ টাকার পুঁঞ্জিভূত লোকসানে রয়েছে। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ০.৯৯ টাকা। কিন্তু বিগত ১ মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩৪.৯৯ শতাংশ। গত ২০ জুন কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৫৬.৩ টাকা। কিন্তু ১৬ জুলাই শেষে কোম্পানিটির দর সর্বোচ্চ ৭৬ টাকায় উঠেছিল। অর্থাৎ এ সময় দর বেড়েছে ১৯.৭ টাকা।
মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক :
২০০১ সালে তালিকাভুক্তির পর বিগত ১৬ বছরে বিনিয়োগকারীদের কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের কোম্পানি মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক। বরং অব্যাহত লোকসানে ১৬ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনধারী কোম্পানিটির পুঁঞ্জিভূত লোকসনা ৬২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। কিন্তু বিগত ১ মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩৫.৯৬ শতাংশ। এ সময় কোম্পানিটির শেয়ার বিগত ১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরে উঠেছে। বিগত ১৯ জুন কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ১১.৪ টাকা। এদিকে ১৬ জুলাই শেষে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ১৫.৫ টাকা।
মেঘনা পিইটি :
তালিকাভুক্তির পর থেকে লোকসান গুনলেও বিগত এক মাসে দর বেড়েছে ২৯.৫৯ শতাংশ। এ সময় কোম্পানিটির শেয়ার বিগত ১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরে লেনদেন হয়েছে। বিগত ২০ জুন কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৯.৮ টাকা। এদিকে ১৬ জুলাই শেয়ারটির সমাপনী দর ছিল ১২.৭ টাকা।
রহিমা ফুড :
ব্যবসায়িক অদক্ষতায় ২০১৪ সালের পর থেকে লোকসান গুনছে রহিমা ফুড। কিন্তু সম্প্রতি মালিকানা পরিবর্তন হওয়ায় লোকসানি হলেও অব্যাহত উত্থানে রয়েছে রহিমা ফুড। বিগত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ২৭.৫৭ শতাংশ। গত ১৯ জুন কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ১৩৪.৯ টাকা। কিন্তু ১৬ জুলাই শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ১৭২.১ টাকায় লেনদেন হয়েছে।
সিনো বাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ :
মুনাফায় থাকা শর্তেও ৩০ জুন ২০১৬ সমাপ্ত হিসাব বছরে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি বিবিধ খাতের সিনো বাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ। ফলে অব্যাহত দর পতনে ভুগেছে কোম্পানিটি। কিন্তু বিগত এক মাসের অধিকাংশ সময়ে টানা দর বৃদ্ধিতে চলতি বছরের সর্বোচ্চ দরে স্থিতি পেয়েছে কোম্পানিটির শেয়ার। ২৯ জুন কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৪২.৮ টাকা। কিন্তু এর পর সামান্য কারেকশনে টানা উত্থানে ১৬ জুলাই কোম্পানিটির সমাপনী বাজার দর ছিল ৫৬.১ টাকা। অর্থাৎ এ সময় কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৩১.০৭ শতাংশ।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ