২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:১৯

আওয়ামী লীগ বন্যার্তদের ত্রাণও লুট করছে : রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের বিভিন্ন স্থানে বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ক্ষমতার অত্যুজ্জ্বল আলোকে ধাঁধিয়ে গিয়ে দুর্নীতির মুকুট মাথায় নিয়ে তুঘলকি কায়দায় দেশ চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, গতকালের দেশের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কেন্দ্র দখল ও ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পুরনো চেহারা দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার হয়েছে। এছাড়া মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বনানোর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

আজ শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভারত থেকে আসা উজানের পানি ও বৃষ্টিতে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। বিশেষ করে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, জামালপুর, সিলেট, মৌলভীবাজারসহ ১৩টি জেলায় ভয়াবহ বন্যায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব জেলাগুলোর বন্যাদুর্গত বানভাসি মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে। সরকারের দুই-একজন মন্ত্রী ফটোসেশন করে ঢাকায় ফিরে আসছেন। আর স্থানীয় প্রশাসন যৎসামান্য ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে গেলেও তা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে ত্রাণের দেখা পাচ্ছে না বানভাসি বন্যাদুর্গত মানুষ। এছাড়া, বাড়িঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে হচ্ছে বন্যাদুর্গতদের।

বন্যা নিয়ে বানভাসী অসহায় মানুষের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র প্রসঙ্গে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, বন্যাদুর্গতদের পাশে নেই সরকার। মন্ত্রী-এমপিরা ঢাকায় বসে আরাম-আয়েশে জীবনযাপন করছেন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই তারা বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন অনুভব করছে না। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে বিএনপি নেতাকর্মী ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে ত্রাণ নিয়ে বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জোর আহবান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন চালের দাম বৃদ্ধির জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা দায়ী। তিনি বলেছেন, ‘হাওর অঞ্চলে অকালবন্যার পর থেকেই অসাধু ব্যবসায়ীরা চাল মজুদ করেছিল। আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি, চালের সংকট হবে না। গত ২৮ জুন সংসদে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সব মিলিয়ে এক কোটি ছয় লাখ ৫৮ হাজার ৮২১ মেট্রিক টন খাদ্যের মজুদ রয়েছে আমাদের। কাজেই খাদ্যের অভাব হবে না।

কিন্তু আমরা বাস্তবে কি দেখলাম, চালের দাম কমেনি, বরং বেড়েছে। দেশের বাজারে চালের দাম এখন অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সরকার চালের দাম নিয়ন্ত্রণে নিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এখন তিন বেলা ভাত জোটাতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে সীমিত আয়ের মানুষ। এখনও খুচরা বাজারে মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকার নিচে কোনো চাল নেই। একটু ভালো সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। সরকারি হিসাব অনুযায়ীই গত এক মাসে সাধারণ মানের মোটা চালের দাম বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি। আর এক বছরে দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। সরকারি সংস্থা টিসিবিও বলেছে চালের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। সব ধরনের চালের দাম গত এক মাসে ৪ থেকে ৮ শতাংশ এবং এক বছরে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন চালের দাম বৃদ্ধির জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরাই দায়ী। ব্যবসায়ীদের দায়ী করে সরকারের ব্যর্থতা আড়াল করা যাবে না। কারণ এরা সরকারি দলের লোক। মন্ত্রী-এমপি বা দলের শীর্ষ নেতাদের আত্মীয়। গরীব মানুষদের মেরে লুটের টাকার ভাগ সরকারি উচ্চ মহলেও যায় তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন না।

রিজভী বলেন, গণমাধমে দেখলাম মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানানোর হিড়িক পড়েছে। সেখানে ৩৫৪৬ বাংলাদেশী সেকেন্ড হোম গড়েছেন। সেকেন্ড হোম গড়ার এ সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশ থেকে এ টাকা পাচার হয়েছে। গণমাধ্যমে বলা হয়েছে যারা মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম গড়ে তুলছেন তারা প্রভাবশালী। সুতরাং সাধারণ মানুষের আর বুঝতে বাকী নেই কারা মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম গড়ে তুলছেন। দুর্নীতির আদি প্রবর্তক ও আবিষ্কর্তা হচ্ছে আওয়ামী লীগ।

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্দয় জুলুম এবং আওয়ামী লীগ অভিন্ন সত্তা। মূলত আওয়ামী লীগের উন্নয়নের কোনো অগ্রগতি নেই, কিন্তু জুলুমের উগ্রগতি সর্বত্র বিরাজমান। গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৫৭টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকালের স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও পূর্বের মতো আওয়ামী ভোটারবিহীন সরকারের সন্ত্রাসীরা সকাল থেকে ভোট কেন্দ্র দখল করে জালভোট প্রদানের মহৌৎসবে মেতে ওঠে। জালভোট দিতে গিয়ে বরিশালে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আটক হয়েছে আওয়ামী লীগের এক নেতা। বরিশালে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের হামলায় সাধারণ ভোটাররা ভোট প্রদান দূরে থাক, ভোটকেন্দ্রে আসতেও পারেনি। বিএনপির এজেন্টদেরকে মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটকেন্দ্র কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সকাল থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে মারধর করে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে জালভোট প্রদানের যজ্ঞে মেতে ওঠে আওয়ামী নেতাকর্মীরা। এসময় নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা জালভোট প্রদানে আওয়ামী নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সেই রক্তাক্ত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি গতকালও দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে।

রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কখনোই যে অবাধ, সুষ্ঠু ও ভয়ভীতিমুক্ত নির্বাচন সম্ভব নয় তা গতকাল আবারো প্রমাণিত হয়েছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কখনোই যে তাদের সহিংস আচরণ থেকে সরে আসার দল নয় তা জনগণের নিকট পরিস্কার। নির্বাচন নিয়ে এই অনাচারগুলোই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার। এই কারণেই কী দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার মহোদয়কে উপেক্ষা করে পদোন্নতি ও মাঠ প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে? এই ঘটনায় আগামী নির্বাচনগুলো নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বেশ কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের স্কীম বা ছক ক্ষমতাসীনদের পক্ষেই করা হচ্ছে বলে জনগণ বিশ্বাস করে।

তিনি জানান, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী এম কে আনোয়ার গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি তার আশু রোগমুক্তি কামনায় দেশবাসীসহ বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে দোয়া চেয়েছেন।

এছাড়া ছাত্রদল ঢাকা মহানগর (পশ্চিম) এর সহ-সাধারণ সম্পাদক মো: সাদিকুর রহমান ভূঁইয়া সোহাগের নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার গ্রামের বাড়িতে তল্লাশীর নামে বাড়ীর আসবাবপত্র ভাংচুর এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে অশালীন আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের হুমকি-ধামকি দিয়েছে পুলিশ। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান রিজভী।

দৈনিক দেশজনতা/এন আর

 

প্রকাশ :জুলাই ১৪, ২০১৭ ৭:৪৮ অপরাহ্ণ