নিজস্ব প্রতিবেদক:
পাষণ্ড স্বামীর নির্মম নির্যাতন আর হত্যা চেষ্টার ঘটনায় গৃহবধূ কামরুন্নাহার (৩৫) এর অবস্থা এখন সংকটাপন্ন। বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৯ নম্বর মহিলা ওয়ার্ডের মেঝেতে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে দেখাগেছে তাকে। চোখ মেলে সবাইকে দেখার শক্তিও যেন হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। গত বুধবার সকালে নির্যাতন ও বিষ খাইয়ে হত্যা চেষ্টার পর থেকেই ওই গৃহবধূ অচেতন অবস্থায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার খিলা ইউনিয়নের বান্দুয়াইন গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। নির্যাতিত গৃহবধূ কামরুন্নাহার ওই এলাকার মৃত আবদুল মতিনের ছেলে আবদুল করিমের স্ত্রী। গৃহবধূ কামরুন্নাহারের পরিবারের অভিযোগ, পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে প্রেমিকাকে বিয়ে করে কামরুন্নাহারকে হত্যার উদ্দেশে তার স্বামী আবদুল করিম এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। আবদুল করিম পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ার কারণে বছর দুয়েক আগে স্থানীয়ভাবে লাকসাম উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল খালেক দয়াল, স্থানীয় খিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল-আমিন ভূঁইয়াসহ স্থানীয়রা গ্রাম্য শালিস বসিয়ে করিমকে সতর্ক করে দেন। এতেও তিনি সংশোধিত হননি। অবশেষে ওই প্রেমিকাকে গোপনে বিয়ে করেন করিম। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকতো। স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০০১ সালে উপজেলার খিলা ইউনিয়নের বান্দুয়াইন গ্রামের আবদুল মতিনের ছেলে আবদুল করিমের সঙ্গে একই ইউনিয়নের পশ্চিম বাতাবাড়িয়া গ্রামের মো. ইউনুস মিয়ার মেয়ে কামরুন্নাহারের সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর করিম সৌদি আরবে পাড়ি দেয়। গত কয়েক বছর আগে বিদেশে থাকা অবস্থায় নিজ গ্রামের এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন করিম। এরপর ২০১৪ সালে দেশে এসে বান্দুয়াইন বাজারে মুদি দোকান দেন তিনি। একই সঙ্গে ওই পরকিয়া প্রেমিকাকে গোপনে বিয়েও করেন তিনি। কামরুন্নাহারের ভাই হাসান আহমেদ সালেহ পরিবর্তন ডটকমকে জানান, ২০১৪ সালে দেশে এসে গোপনে পরকিয়া প্রেমিকাকে বিয়ে করেন আবদুল করিম। আর ওই বিয়ের পর থেকেই আমার বোনকে বিতাড়িত করতে নির্যাতন চালাতে শুরু করেন। সর্বশেষ ডাল রান্নার অজুহাতে মঙ্গলবার রাতে তার বোনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে সে। এরপর আবারও বুধবার সকালে কামরুন্নাহারের উপর নির্যাতন শুরু করে। এক পর্যায়ে মুখের মধ্যে বিষ ঢেলে দিয়ে কামরুন্নাহারকে হত্যার চেষ্টা করে। পরে বিষয়টি টের পেয়ে স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসকরা তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান। তবে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত আবদুল করিমের মুঠোফোনে বৃহস্পতিবার সকালে ফোন করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই মুঠোফোনের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন করা হলে একপর্যায়ে ফোনটি বন্ধ করে দেন করিম। স্থানীয় খিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল-আমিন ভূঁইয়া পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ঘটনাটি আমার নিজ বাড়ির। একেবারেই অমানবিক একটি ঘটনা। তিনিও এ ঘটনায় জড়িত করিমের শাস্তির দাবি জানান। এ ব্যাপারে মনোহরগঞ্জ থানার ওসি মো.সামছুজ্জামান পরিবর্তন ডটকমকে জানান, লোকমুখে গৃহবধূ নির্যাতনের খবর পেয়েছি। স্বজনদের থেকে এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৈনিক দেশজনতা/ আই সি