আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
উদ্যত এক কাঁচির ছায়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে ভারতের মানুষের জীবনে। তাদের ভাবনায় কাঁচি, মননে কাঁচি, কথায় কাঁচি, ভাষায় কাঁচি, খাদ্যাভ্যাসে কাঁচি, শিল্পকলায় কাঁচি, সৃষ্টিশীলতায় কাঁচি। কাঁচি যখন এত বড়, তখন চলচ্চিত্র জগৎ যে তার নাগালের বাইরে থাকবে না, সে বলাই বাহুল্য। কিন্তু এমন একটি তথ্যচিত্রের ওপর দাপট দেখাল সে কাঁচি বিতর্ক শুধু দেশের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ রইল না, ছড়িয়ে পড়ল বাইরেও। ‘গরু’র মতো স্পর্শকাতর, ‘গুজরাত’-এর মতো স্মৃতিবিদারক শব্দ রয়েছে তথ্যচিত্রটিতে। শাসকের পক্ষে অস্বস্তিকর আরো বেশ কিছু উচ্চারণ রয়েছে সম্ভবত। শব্দগুলো বেরিয়েছে আবার অমর্ত্য সেনের মুখ থেকে। অমর্ত্য সেন, যিনি এখনও সাহসীদের মতো ভাবতে পারেন এবং সে নিজস্ব ভাবনার নির্ভীক প্রকাশও ঘটাতে পারেন। অমর্ত্য সেন, যিনি আজও রাজাকে তার বস্ত্রহীনতার কথা মনে করিয়ে দিতে পারেন। এমতাবস্থায় অমর্ত্য সেনকে নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রে সমসাময়িক কালের বিশ্লেষণ থাকলে রাজার অস্বস্তি যে হবে সে কথা জানাই ছিল। অতএব কাঁচি চলাও প্রত্যাশিত ছিল। প্রত্যাশিত ঘটনা মানেই যে স্বাভাবিক ঘটনা, তা কিন্তু নয়। নাগরিকের জীবন ও গতিবিধির ওপর সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার যে প্রয়াস ও প্রবণতা রোজ একটু একটু করে বাড়ছে ভারতে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই অমর্ত্য সেনকে নিয়ে তৈরি হওয়া সুমন ঘোষের তথ্যচিত্রের ওপর খড়গ নেমে আসাকে প্রত্যাশিত বলে মনে হয়। কিন্তু কোনো স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক পরিসরে এ ছবির প্রকাশ বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে না। বাধা যখন দেওয়া হল, রিলিজ যখন আটকে গেল, তখন বুঝে নিতে হবে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক পরিবেশটা আর নেই। এ মুহূর্তে অমর্ত্য সেনরা আরো বেশি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন। বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকে ফেলার চেষ্টা করে শাসক তাদের প্রাসঙ্গিকতা আরো বাড়িয়ে দেন। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, এভাবে অমর্ত্য সেনদের কণ্ঠরোধ করা যায় না। ভারতীয় গণতন্ত্র কোনোভাবেই এর অনুমতি দেয় না। কিন্তু অনুমতির তোয়াক্কা না করেই আজ কণ্ঠরোধের চেষ্টা চলছে। অনুমতির তোয়াক্কা না করেই নাগরিকের ওপর রাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বড় অবমাননার শিকার কিন্তু ভারতীয় গণতন্ত্রই হচ্ছে।
দৈনিক দেশজনতা / আই এম :