২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:২৭

ভোলায় ঝুঁকিপূর্ণ ২৭৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ভোলার ৭ উপজেলায় নদী ভাঙন ও জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৩০ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে টেকসই বাঁধ রয়েছে মাত্র ৫৬ কিলোমিটার। এই ৫৬ কিলোমিটারের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ সিসি ব্লক স্থাপন করা হয়েছে মাত্র ২০ কিলোমিটার। বাকি ৩৬ কিলোমিটার কাজ এখনো চলমান রয়েছে। বাকি ২৭৮ কিলোমিটার বাঁধ দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৫ লাখ মানুষ। এরিমধ্য জোয়ারের পানির চাপে ভেঙ্গে গেছে প্রায় ৪১ কিলোমিটার বাঁধ। যা দিয়ে প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তাই বাঁধ সংস্কার করে উঁচু বাধ নির্মাণের দাবি উপকূলবাসীর। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডে বলছে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো সংস্কারের কাজ চলছে।

সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীবেষ্টিত জেলা ভোলা। ৭০ এর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পর জেলাকে রক্ষায় সরকারিভাবে ৩’শ ৩০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ও জোয়ারের পানির তোড়ে এরিমধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে প্রায় ৪১ কিলোমিটার বাঁধ। ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে ফসল নষ্টের পাশাপাশি তলিয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। এমন পরিস্থিতিতে বর্ষা এলে অনেকেরই ঠাই হয় বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে।

ভোলা জেলা স্বার্থরক্ষা উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ অপু জানান, প্রতিবছর উজানের পানির সাগরমুখী চাপে ভোলার মানুষ নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এসব বিষয় নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড অথবা পানি বিশেষজ্ঞরা খুব একটা চিন্তা করে না। কারণ হিসেবে তিনি জানান, জেলার ৩৩০ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে মাত্র ৫৬ কিলোমিটার টেকসই বাধ রয়েছে। এই ৫৬ কিলোমিটারের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ সিসি ব্লক স্থাপন করা হয়েছে মাত্র ২০ কিলোমিটার। বর্তমানে জেলার দৌলতখানে ৩ কিলোমিটার, মনপুরায় ৮ কিলোমিটার, তজুমদ্দিনে ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলেও জানান তিনি।

দৌলতখান ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভাঙনে চলতি বছর প্রায় ৬০০ একর জমি মেঘনায় বিলীন হয়েছে। এছাড়া চরপাতা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাহেবের খাল থেকে দক্ষিণে সৈয়দপুর পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকা ভাঙনের কবলে পড়েছে।

দৌলতখান পৌরসভার মেয়র জাকির হোসেন তালুকদার বলেন, ‘দৌলতখান উপজেলা পরিষদ এলাকা, থানা, হাসপাতালসহ একাধিক বিদ্যালয় ও কলেজের ভবন একেবারে ভাঙনের মুখে পড়েছে। অরক্ষিত থাকার কারণে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের চৌকিঘাটা থেকে দক্ষিণে তিন কিলোমিটার এলাকা ভাঙ্গছে। ইতোমধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডের শতাধিক ঘরবাড়ি, দুটি মাছঘাট ও একটি মসজিদ বিলীন হয়েছে।’

মনপুরা উপজেলার বাসিন্দা সালাউদ্দিন জানান, সেখানকার মানুষ শুষ্ক মৌসুমে নিরাপদে থাকলেও বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। কারণ হিসেবে তিনি জানান বেড়িগুলো নিচু থাকার কথা। ফলে ৬-৭ ফুট পানি উঠে সেখানকার প্রায় ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। তাই টেকসই ও মজবুত বেড়িবাঁধের নির্মাণের পাশাপাশি সিসিব্লক স্থাপনের জোর দাবী জানান তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কাইছার আলম বলেন, ‘বিভিন্ন সময় ভাঙনের ফলে প্রায় ৪১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই বাঁধগুলোর মধ্যে ২০ কিলোমিটারের সংস্কারের কাজ চলছে। বাকি বেড়িবাঁধ সংস্কার ও আরো উঁচু করার জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।’

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :জুলাই ১০, ২০১৭ ৩:৪৪ অপরাহ্ণ