১১ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ইং | ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১:৩০

ভারতে গো-রক্ষার নামে জাতিগত নিপীড়ন চলছে : হেফাজত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গরু রক্ষার নামে ভারতীয় হিন্দুরা সে দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর ধারাবাহিক নির্যাতন, হত্যার ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানিয়েছেন বাবুনগরী।

পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার যেন প্রতিবেশী দেশটিতে জাতিগত মুসলিম নিধন বন্ধে ভারত সরকারকে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে তাগিদ দেয়।’

বিবৃতিতে বাবুনগরী বলেন, ‘ভারত বিশ্বের অন্যতম প্রধাণ গরুর মাংস রফতানিকারক দেশ। তারা পৃথিবীর মোট গরুর মাংসের ২৫ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে এবং বছরে চার বিলিয়ন ডলার আয় করে। অথচ হিন্দু সমাজের বাইরে অহিন্দুদের জন্য সবচেয়ে সস্তা প্রোটিনের উৎস গরুর গোস্ত নিষিদ্ধ করে মানুষের খাদ্যাভ্যাসকেও নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে ভারত সরকার।’

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘শুধু এখানেই থেমে থাকলে কথা ছিল না। তারা নিয়মিত বিরতিতে গো হত্যার অভিযোগে, গরু বহনের অভিযোগে নির্মমভাবে পিটিয়ে মারছে মুসলমানদের। এবং আশ্চর্যজনকভাবে এ সন্ত্রাসের টার্গেট হচ্ছে মুসলমানরা, যদিও মুসলমানরাই একমাত্র সম্প্রদায় নয়, যারা গরুর গোস্ত খায়। এ গরুর ইস্যুটাকে মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপরে সহিংসতার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এবং সবচেয়ে উদ্বেগজনক হচ্ছে, সরকারি পর্যায়েও এ সহিংসতা উস্কে দেওয়ার জন্য হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিবিদেরা হিংসাত্মক কথা বলেন।’

বিবৃতিতে হেফাজত মহাসচিব আরো বলেন, ‘বিজেপি শাসিত এবং বিজেপি প্রভাবিত এলাকায় প্রতিদিনই গো-রক্ষাবাহিনীর তাণ্ডবের শিকার হচ্ছেন মুসলিম ও দলিতরা। গো-রক্ষার নামে সর্বত্র সন্ত্রাস ও ভয়ের রাজত্ব তৈরি করা হচ্ছে। গো-হত্যা আদতেই হয়েছে কিনা, তার সত্যাসত্য বা প্রমাণ-অপ্রমাণের কোনো বালাই নেই। গো-রক্ষাবাহিনীর দুষ্কৃতকারীরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে বা গুজব রটিয়ে আক্রমণ করছে নিরীহ মুসলিম ও দলিতদের। আর তাদের এ বেআইনী ও অপরাধমূলক কাজের সাফাই গাইছে আরএসএস এবং বিজেপি নেতারা।’

বাবুনগরী বলেন, ‘গো রক্ষার বিষয়টা সামনে আনা হয় হিন্দু জাতিগোষ্ঠীর প্রভাব বলয় তৈরির বাসনা থেকেই। গো রক্ষার নামে যা করা হচ্ছে, তা একই সাথে মুসলমান ও দলিত-বিরোধী এবং ফলতঃ এটা ব্রাহ্মণ্যবাদ প্রতিষ্ঠার চিন্তা। বর্তমানে এ হিন্দুত্বের ধারণায় পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং গো-রক্ষার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভাবেই মুসলমান-বিরোধী একটি বৈশ্বিক হিন্দু জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজে লাগানো হচ্ছে। আমরা ভারতের সাম্প্রতিক গোরক্ষার রাজনীতিতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গো-রক্ষার উন্মত্ততায় অহরহ চলতে থাকা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধে আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ তদন্ত করে ভারতীয় রাজনীতির সহিংসতা থেকে সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়কে হিন্দুত্ববাদিদের জাতিগত নিপীড়ন থেকে রক্ষা করার জন্য আমরা উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :জুলাই ৮, ২০১৭ ৩:২০ অপরাহ্ণ