আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ডোনাল্ড ট্রাম্প ওবামার ব্যাপারে কেমন একটা ভিন্ন চিন্তায় আচ্ছন্ন। ওবামার ব্যাপারে তিনি অন্ধকারাচ্ছন্ন। ট্রাম্পের কাছে মনে হয় ওবামা যেন তার স্বপ্নকে খুঁজে ফিরছেন। ট্রম্পের প্রাথমিক অন্যতম প্রেরণা হচ্ছে ওবামার পদক্ষেপগুলো শুধু রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয় বরং ইতিহাসের পাতা পুরোপুরি মুছে ফেলা।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ওবামার কারণে, আরও স্পষ্ট করে বললে বলা যায় ওবামা প্রতি তার বৈরিতার করণে। ট্রাম্প শুধু ওবামার জন্মস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি বরং তার শিক্ষাগত ও সাহিত্যিক যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি (ট্রাম্প) বর্ণবাদী ‘বার্থার’-দের (জন্মগতভাবে মার্কিন নাগরিক নয় এমন মিথ্যা অপবাদকারীদের) প্রধান অভিনন্দিত নেতা এবং ওবামা যেসব স্কুলে পড়াশোনা করেছেন সেখানে আদতে তিনি পড়েছেন কিনা, এমনকি তার (ওবামার) জননন্দিত বইগুলো তিনি নিজে লিখেছেন কিনা সে ব্যাপারে ট্রাম্প সন্দেহপোষণ করেন।
ট্রাম্প প্রায়ই ওবামা সম্পর্কে মিথ্যা বলেছেন। তিনি বলেছেন, তার (ট্রাম্পের) অভিষেক অনুষ্ঠানে লোকজনের উপস্থিতি ওবামার অনুষ্ঠানের উপস্থিতির সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে, ওবামা তার ফোনে আড়ি পাতেন এবং মাত্র সপ্তাহখানেক আগে তিনি (ট্রাম্প) বলেন, ওবামা রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাত করেছেন। এটি ৭১ বছর বয়স্ক জ্যানের পুরুষ ভার্সনের মত, যা থেকে ব্রাটি বাঞ্চকে ডাকা যায়ঃ ওবামা, ওবাম, ওবামা।
ট্রাম্প ওবামা হতে চান— চান অত্যন্ত সম্মানিত মর্যাদা। হায় ! ট্রাম্প ট্রাম্পই, তবে সেটা এখন এবং সব সময়ই অকিঞ্চিতকর। ট্রাম্প বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন, তবে তিনি কখনও সাংস্কৃতিক সম্পদ অর্জন করেননি, অনন্ত তার নিজের লোকদের কাছে যাদের কাছ থেকে তিনি এটা বেশী পেতে চেয়েছেন। আর এজন্যই ট্রাম্প নিয়তই ঘ্যনঘ্যন করতে থাকেন, তাকে যথেষ্ট তারিফ ও প্রশংসা করা এবং ধন্যবাদ জানানো হচ্ছে না। তার এই মানসিক আঘাতকে পরিমাপ করা যায় ওবামার প্রতি তার মনোভাব দেখে। তিনি বলেন, ওবামা এত সেলিব্রেটি হলো কী করে? আর আমি এত অপমানিত হচ্ছি। মনে হচ্ছে গোটা বিশ্ব ওবামাকে ভালবাসে— আরও বেশী করে বললে আমেরিকাকে সু-উচ্চ শ্রদ্ধার আসনে বসায়। গত সপ্তাহে পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয় ঃ ট্রাম্প ও তার অনেক প্রধান নীতি সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে অজনপ্রিয় এবং অনেক দেশে যুক্তরাষ্ট্রের রেটিং মাত্রাতিরিক্ত হ্রাস পেয়েছে। ৩৭টি দেশে পরিচালিত পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি নতুন জরিপে দেখা গেছে আন্তর্জাতিক ঘটনা প্রবাহের ক্ষেত্রে সঠিক কাজ করার ব্যাপারে ট্রাম্পের প্রতি ২২শতাংশের আস্থা রয়েছে। এটি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পপালনে বারাক ওবামার শেষ বর্ষের ঘটনার একটি বৈপরিত্ব। সে সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমেরিকার ভূমিকাকে দিকনির্দেশনা দেয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের পূর্বসূরী আস্থা প্রকাশ করে ৬৪ শতাংশ।
ওবামা ছিলেন একটা ঘটমান বিষয়, মার্জিত ও সেরিব্রাল। তার কোন ব্যক্তিগত কেলেংকারি ছিলনা এবং অনন্য ব্যক্তিত্বে সিঞ্চিত ছিলেন তিনি। চালচলনে, কথাবার্তায় শ্বেতাঙ্গদের আধিপত্যবাদকে তিনি পরাজিত করেছেন। তিনি ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ দুর্যোগ ও হীনমন্যতা বিরুদ্ধে কল্পকাহিনীর নায়ক। তিনি ছিলেন সম্ভাব্যতার ব্যক্তিরূপ— এক সম্ভাব্য ভবিষ্যত, যার মাধ্যমে ক্ষমতার উত্তরাধিকার ও সুযোগ-সুবিধা সকলের প্রতি পূনর্বণ্টন করা হয়। তার মধ্যে ছিল প্রতিভা ও চরম শৃঙ্খলাবোধ।
এখানে জনগণের অভিব্যক্তির সঙ্গে তার কৃষ্ণাঙ্গ নিয়ে তাদের অভিব্যক্তির মিলন ঘটিয়ে প্রতিবেদনের বিস্তার ঘটানো আমার লক্ষ্য নয়। প্রাসঙ্গিক ক্রমে এটা এসেছে। কেননা ট্রাম্প একাধিকবার নিজেই এই দুটি বিষয়ের যোগসাজসের চেষ্টা করেছেন।
নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষনার ঠিক দুমাস আগে বাল্টিমোরে পুলিশের হাতে ফ্রেডি গ্রে’র হত্যাকন্ডের পর সৃষ্ট বিক্ষোভ সম্পর্কে ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেন, মহানন্দে ও খোলাখুলিভাবে বাল্টিমোরকে ধ্বংসকারী দুর্বৃত্ত গুন্ডাদের ওপর আমাদের মহান আফ্রিকান-আমেরিকান প্রেসিডেন্টের কোন ইতিবাচক প্রভাব আছে বলে মনে হয় না।
এর মাস কয়েক আগে ফার্গুসনে পুলিশের হাতে মাইকেল ব্রাউন নিহত হওয়া সেখানে বিক্ষোভের পর ট্রাম্প অভিযোগ করেন, সত্যিকারার্থে আফ্রিকান আমেরিকান কম্যুনিটির ওপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। তার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকালে তারা বেশ বেড়ে গেছে।
ট্রাম্প টুইটে আরও বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য প্রেসিডেন্ট ওবামা এত খারাপ কাজ করেছেন যে আপনারা বহু যুগ আর কোন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট দেখবেন না। স্পটতঃ ট্রাম্পের মনের দৃশ্যপটে যে কেবলই ওবামার কৃষ্ণাঙ্গ রূপ ভেসে ওঠে শুধু তাই নয়, বরং মনে হয় বর্ণবাদী মতবাদের সমর্থক যে মতবাদ বা তত্তে¡ ঐ গ্রæপের একজন সদস্যের সাফল্য বা ব্যর্থতা গ্রæপের সকলের ওপর গিয়ে বর্তায়। এই বোঝা মাথায় নিয়ে এদেশের অধিকাংশ সংখ্যালঘু এখানে কাজ করে যাচ্ছে।
ট্রাম্পের বর্ণবাদী ধারণা তার সমর্থকদের মাঝে একটি আকর্ষণীয় বিষয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় অর্থনৈতিক উদ্বেগের কল্পকাহিনী ফেদে ট্রাম্পে হোয়াইট হাউজ অভিমুখী অভিযাত্রায় কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী এই বর্ণের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এর আগে গবেষক সিয়ান ম্যাকইলিউই এবং জ্যাসন ম্যাকড্যানিয়েল অনুরূপ বক্তব্য রাখেন।
‘সংক্ষেপে আমাদের বিশ্লেষণে আভাস দেয়া হয়েছে যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেসিয়ল ইলেক্টোরেটকে পুনর্গঠিত করতে আফ্রিকান-আমেরিকানদের প্রতি বিদ্যমান ক্ষোভের পাশাপাশি আমেরিকায় বিভিন্ন বর্ণের লোকজনের আধিক্যের ব্যাপারে ক্রমবর্ধমান শঙ্কাকে সফলভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন। ট্রাম্প নেটিভিস্টদের জোরালোভাবে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অপরদিকে তিনি আরও অধিক বিত্তশালী এবং আতমাত্রায় শিক্ষিত, অসাম্প্রদায়িক ও আন্তর্জাতিক মনোভাবাপন্ন কিছু লোককে হিলারির সমর্থকদের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। বর্ণবাদী পরিচিতি ও মনোভাব আমেরিকার রাজনীতির কেন্দ্রীয় সংগ্রামভূমি হিসেবে শ্রেণী-গোষ্ঠীকে আরও কক্ষচূত করেছে।’
ট্রাম্পকে ওয়াশিংটনে পাঠানো হয়েছে ওবামার রেখে যাওয়া সব চিহ্ন মুছে ফেলতে, সেগুলো একটি ঐতিহাসিক অস্বাভাবিকতা হিসেবে দেখতে। ট্রাম্পের গোটা নির্বাচনী প্রচারাভিযানটি ছিল ওবামা যা কিছু করেছেন সেগুলো অসার হিসেবে তুলে ধরা।
প্রকৃতপক্ষে সাফল্যের অধিকাংশ (যদিও তা খুব বেশি নয়) ওবামার সাফল্যকে নিশ্চিহ্ন করার সাফল্য। এর মধ্যে রয়েছে : আন্তঃপ্রশান্ত মহাসাগরীয় সহযোগিতা এবং প্যারিস জলবায়ূ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা। মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের বন্দুক ক্রয় রোধে ওবামার যুগের পরিবর্তন ঘটানো এবং ওবামা কেয়ার বাতিল করা। এগুলো করে তিনি ভাল একটা নীতি বা পদ্ধতি দিতে পেরেছেন তা কিন্তু নয়।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ