২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:৩৫

সিরাজগঞ্জ-৬: আ’লীগ-বি.এন.পি’র একাধিক প্রার্থী

সিরাজগঞ্জ থেকে এম. এ. জাফর লিটন:
২০১৯ সালে অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই দলীয় মনোনয়ন পেতে হাই কমান্ডে চেষ্টা তদবীর চালিয়ে যাচ্ছে। সিরাজগঞ্জ-৬ শাহজাদপুর নির্বাচনী এলাকার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ ও বি.এন.পি থেকে একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড় ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচন আওয়ামীলীগের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হলেও প্রধান বিরোধী জোট বি.এন.পি তথা ২০ দলীয় জোটের বাঁচা মরার লড়াই হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকমহল । যদিও বি.এন.পি’র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে শেখ হাসিনার অধীনে নয়, একটি নির্বাচনকালীণ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেই কেবল নির্বাচনে অংশ নেবে তাঁরা। তাঁরপরেও নির্বাচনের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে বি.এন.পি। এদিকে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেতে বর্তমান ও সাবেক এম.পি জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। তাই বর্তমান ও সাবেক এম.পি’র পক্ষ থেকে তাঁদের অনুসারীদের পৃথক পৃথক বক্তব্য পাওয়া গেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাবার ব্যাপারে আশাবাদী সরকার দলীয় বর্তমান এম.পি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি আলহাজ্ব হাসিবুর রহমান স্বপন। কারণ তাঁর নেতৃত্বেই শাহজাদপুরে আওয়ামীলীগ অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় শক্ত অবস্থানে রয়েছে। বিগত উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিটি চেয়ারম্যান পদেই জয় নিশ্চিত করে দিয়েছে হাসিবুর রহমান স্বপন।

এছাড়াও শাহজাদপুরে কোন রাজনৈতিক সন্ত্রাস কিংবা বিরোধী দলের জ্বালাও পোড়াও রাজনীতি শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে হাসিবুর রহমান স্বপন। তাই আগামী নির্বাচনে হাসিবুর রহমান স্বপনই দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য দাবীদার বলে জানালেন উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক এম.পি’র নিকটস্থ্য হিসেবে পরিচিত কৈজুরী ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম। তিনি আরও জানান, তৃণমূল আওয়ামীলীগও হাসিবুর রহমান স্বপনকেই এম.পি হিসেবে দেখতে চায়। একটি শান্তিপূর্ণ ও বিরোধী দলের সহাবস্থানের রাজনীতি শাহজাদপুরকে বাংলাদেশের জন্য রোল মডেল করেছে হাসিবুর রহমান স্বপনই। তাই শাহজাদপুরের জন্য হাসিবুর রহমান স্বপনই আগামী নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী বলে দাবী স্বপন সমর্থকদের। এদিকে সাবেক এম.পি এবং কেন্দ্রীয় যুব লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য চয়ন ইসলাম আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে আছেন বলে দাবী তাঁর সমর্থকদের। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে গত এক মাস আগে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গণ সংযোগ করেছেন। যদিও গণসংযোগ বা মতবিনিময়সভায় স্বপন সমর্থিত নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণ দেখা যায়নি। অবশ্য ওই সময় বর্তমান এম.পি ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে অবস্থান করছিলেন। তিনি দেশে এসে দলীয় অফিসে এক বর্ধিত সভায় চয়ন-স্বপন এক হয়ে কাজ করার ঘোষণা দেন। চয়ন সাহেবের মনোনয়ন বিষয়ে তাঁর নিকটস্থ্য হিসেবে পরিচিত আওয়ামীলীগ নেতা উপধ্যক্ষ আব্দুল বাছেত জানান, অতীতে শাহজাদপুরের উন্নয়নে চয়ন ইসলাম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। উন্নয়ন কর্মকান্ডে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ত রেখেছেন ফলে তৃণমূল আওয়ামীলীগে হাসিবুর রহমান স্বপনের চেয়ে চয়ন ইসলামের জনপ্রিয়তাই বেশি। কারণ চয়ন ইসলাম সব সময়ই তৃণমূল আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করেছে আশা করছি তৃণমূল আওয়ামীলীগ সে মূল্যায়ন বিবেচনা করবে। তাই চয়ন ইসলাম একাদশ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন এটা প্রায় নিশ্চিত।

এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বি.এন.পি থেকে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে আছেন সাবেক এম.পি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কামরুদ্দিন এহিয়ান খাঁন মজলিশ সারোয়ার। তৃণমূল বি.এন.পি’তে রয়েছে তাঁর আকাশ চুম্বি জনপ্রিয়তা। যদিও উপজেলা বি.এন.পি দলীয় মনোনয়ন নিয়ে একাধিক ভাগে বিভক্ত রয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকে বি.এন.পি’র দূর্গ হিসেবে পরিচিত শাহজাদপুরে দলীয় কর্মকান্ড চলছে নিরবে। ট্রেন পোড়ানো মামলায় দলের সিংহভাগ নেতা-কর্মী কারাবরণ করা আর আওয়ামীলীগের আধিপত্যে অনেকটাই কোনঠাসা বি.এন.পি’র কার্যক্রম। শুধু দলীয় কর্মসূচী অফিস কেন্দ্রীক ছাড়া তেমন তৎপরতা দেখা যায়না। কিংবা পুলিশী বাঁধায় পন্ড হচ্ছে উল্লেখযোগ্য কর্মসূচী। ফলে দলের কান্ডারী হিসেবে নেতা-কর্মীদের পাশে কাউকে দেখা যায়নি। তাই তৃণমূল বি.এন.পি’তে ক্ষোভও রয়েছে উপজেলা নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে উপজেলা বি.এন.পি’র যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা আরিফুজ্জামান আরিফ জানান, বি.এন.পি নির্বাচনমুখী দল। আর শাহজাদপুর হচ্ছে বি.এন.পি’র দূর্গ। জনগণ ভোট প্রয়োগের পরিবেশ পেলে সংসদ নির্বাচনসহ শাহজাদপুরের প্রতিটি নির্বাচনে বি.এন.পি প্রার্থীরাই জয়ী হবে। তাই যোগ্য ব্যক্তিকেই আগামীতে দলীয় এম.পি পদে দেখতে চায় নেতা-কর্মীরা। সাবেক এম.পি সারোয়ারের ঘনিষ্ঠ সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য প্রার্থী রফিকুল ইসলাম জানান, শাহজাদপুরের উন্নয়নে সারোয়ারের বিকল্প নেই। তিনি তৃণমূল বি.এন.পি নেতা-কর্মীদের প্রাণের নেতা। তাঁর সততা ও আচারণে মুগ্ধ দলের তৃণমূল। তাই আগামীতে নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে তিনিই মনোনয়নের যোগ্য দাবীদার। এদিকে সারোয়ারের পরেই দলের মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করছেন বিগত ৪ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা সাবেক মন্ত্রী ও এম.পি মরহুম অধ্যাপক ডা. এম. এ. মতিনের ছেলে এবং সাবেক মন্ত্রীর ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর ভাগিনা ডক্টর. এম.এ. মুহিত। ইতিমধ্যে তিনি শাহজাদপুরের ইফতারপার্টি সহ বি.এন.পি’র বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। এবং বিলবোর্ড দিয়ে শাহজাদপুর ছেয়ে ফেলেছেন। তাই সারোয়ারের পরেই তিনি যোগ্য দাবীদার মনোনয়নের। এছাড়াও পৌর বি.এন.পি সভাপতি তারেকুল ইসলাম আরিফ, সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম সারোয়ার মনোনয়ন চাইছেন। অপরদিকে দলীয় নিবন্ধন বাতিল হওয়া দেশের বৃহত্তম ইসলামী দল জামায়াত এখনও বি.এন.পি জোটে আছে। তাই জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে শাহজাদপুরে প্রায় অর্ধ লক্ষ ভোট ব্যাংকের অধিকারী জামায়াতে ইসলামী বি.এন.পি প্রার্থীকেই সমর্থন জানাবে। আর শেষ পর্যন্ত জোট না থাকলে জামায়াতে ইসলামী এখানেও স্বতন্ত্র প্রার্থী দিবে বলে জানান, উপজেলা জামায়াতের এক নেতা। অপরদিকে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয়পার্টি দলের দুই কেন্দ্রীয় নেতা উপজেলা জাপা সভাপতি কেন্দ্রীয় তাঁতিপার্টির সাধারণ সম্পাদক মোক্তার হোসেন ও কেন্দ্রীয় কৃষকপার্টির সাধারণ সম্পাদক সাহান চৌধুরী মনোনয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

দৈনিক দেশজনতা /এমএম

 

প্রকাশ :জুলাই ৬, ২০১৭ ৮:৪৭ অপরাহ্ণ