দৈনিক দেশজনতা ডেস্ক:
করলার ঔষধি গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আস্ত একটা ফার্মেসিই বলা যায় এই সবজিটিকে।
নিয়মিত করলা খেলে রোগবালাই ১০০ হাত দূরে থাকে বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা।
করলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে দেহের নানা কঠিন সমস্যার ক্ষেত্রে। বিটার মেলন বা ‘করলা’ নামের এই সবজিটি ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য মারাত্মক কিছু শারীরিক সমস্যা দূর করতে পারে।
করলা তিতা হলেও অনেকের প্রিয় সবজি। ভাজি, ভর্তা আর ব্যঞ্জনে করলার কদর অনেক। তবে তিতা স্বাদের কারণে অনেকে আবার এটা খেতে চান না। কিন্তু কেবল স্বাদের কথা ভেবে স্বাস্থ্যের কথা ভুলে বসাটাও তো ঠিক নয়।
তারুণ্য ধরে রাখে
করলা উচ্চ রক্তচাপ ও চর্বি কমায়। এর তিতা রস কৃমিনাশক। এটি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। এ ছাড়া এটি ভাইরাসনাশকও। রক্তশূন্যতায় ভুগছেন—এমন রোগীর উত্তম পথ্য করলা। পরীক্ষিতভাবে প্রমাণিত যে, করলা স্ট্যামিনা ও এনার্জি লেভেল বাড়ায়। করলার সবচেয়ে বড় গুণ এটি বার্ধক্য ঠেকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তাই করলা খেয়ে ধরে রাখুন তারুণ্য।
রক্ত পরিষ্কারক
করলা হিমোগ্লোবিন তৈরি করে শরীরে রক্তের উপাদান বাড়ায়। করলার ভিটামিন সি ত্বক ও চুল ভালো রাখে এবং ম্যালেরিয়া জ্বরে স্বস্তি দেয়। মাথাব্যথারও উপশম করে করলা। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ (টক্সিন) বের করে দেয় এবং রক্ত পরিষ্কার করে। স্ক্যাভিজের মতো রক্তরোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
শ্বাসরোগ দূর করে
করলার রসে আছে অনেক গুণ। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের দূষণ দূর করে। পানির সঙ্গে মধু ও করলার রস মিশিয়ে খেলে অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস ও গলার প্রদাহে উপকার পাওয়া যায়।
শক্তিবর্ধক
করলার রস শক্তিবর্ধক হিসেবেও কাজ করে। এটি স্ট্যামিনা বাড়ানোর পাশাপাশি ভালো ঘুমে সহায়তা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
করলা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কোনো ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরকে লড়তে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
করলায় রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও রক্তের চিনি কমানোর উপাদান। ডায়াবেটিসের রোগীরা রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত করলা খেতে পারেন।
হজমে গতি আনে
করলার বড় গুণ হচ্ছে এটি হজমের জন্য উপকারী। হজমের সমস্যা এবং কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে করলার জুড়ি নেই। পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা দূর করতে তাই নিয়মিত করলা খেতে পারেন।
ক্যান্সার নিরাময়ে
দ্য নেভাদা সেন্টার ফর অল্টারনেটিভ এন্ড অ্যান্টি এইজিং এর মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ফ্রাংক শ্যালেনবার্গার গবেষণায় দেখতে পান, করলার রস পানিতে মাত্র ৫% দ্রবীভূত হয়, যা প্রমাণ করে যে, এটি অগ্নাশয়ের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে। করলার প্রায় ৯০ থেকে ৯৮% পর্যন্ত ক্যান্সারের কোষ ধ্বংসের ক্ষমতা রয়েছে।
দ্য ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডোর একটি গবেষণায় দেখা যায়, করলা অগ্নাশয়ের টিউমার প্রায় ৬৪% কমিয়ে আনতে সক্ষম।
ড. শ্যালেনবার্গার তার গবেষণায় আরো দেখতে পান যে, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, ত্বকের ইনফেকশন এবং পাকস্থলীর নানা সমস্যা প্রতিরোধে করতে পারে শুধুমাত্র এই একটি সবজি ‘করলা’।
কীভাবে খাবেন করলা
চিংড়ি, ডাল দিয়ে কিংবা কেবল মুচমুচে ভাজা যেমনই হোক করলা সমান স্বাদের। আলু-করলা বা আলু-উচ্ছের ভাজি খাবারকে আনন্দদায়ক করে তোলে। করলা দিয়ে খাবার শুরু করা বাঙালির শত বছরের ঐতিহ্যও বটে। তিতা বলে পরিত্যাগ না করলে করলা তার প্রতিদান দেবেই।
বাজার থেকে ভালো করলা কেনার পর ঠাণ্ডা পানিতে ভালো করে ধুয়ে নরম ব্রাশ দিয়ে আলতো ঘষে পরিষ্কার করে নিন।
১. যে কোনো আমিষ খাবারের সাথে বা অন্যান্য সবজির সাথে ভাজি করে খেতে পারেন। তবে ভাজিটা যেন একেবারে শুষ্ক না হয়।
২. শুধু করলার রস দিয়ে জুস তৈরি করে পান করতে পারেন।
৩. আচার তৈরি করে খেতে পারেন।
৪. করলার শুকনো গুঁড়ো তৈরি করে রেখে আইসড বা দুধ চায়ে মিশিয়ে পান করতে পারেন।
দৈনিক দেশজনতা /এমএম