২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:১৩

১৩ জুন রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের চিত্র ভয়াবহ

শাহ আলম, রাঙামাটি:
১৩ জুন রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের চিত্র ভয়াবহ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ দলের বিশেযজ্ঞরা। বুধবার দুপুরে ১৩ জুন পাহাড় ধসে রাঙামাটির বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে দেয়া ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তারা।
মঙ্গলবার প্রথম কার্যদিবসে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বৈঠক করে রাঙামাটির ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান। এ দিন সন্ধ্যায় স্থানীয় প্রশাসনিক, সামরিক, বেসামরিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, বিশ্লেষক, গবেষক, অভিজ্ঞদের নিয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মতবিনিময় সভা করেন জরিপ দলের সদস্যরা। এরপর বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১৩ জুন পাহাড় ধসে রাঙামাটির বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন তারা। এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান তরুণ কান্তি ঘোষ, সদস্য (পরিকল্পনা) নুরুল আলমসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সঙ্গে উপস্থিত চিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৩ জুন পাহাড় ধসের ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ভূ-তত্ত্ব ও পরিবেশবিদ, বিশ্লেষক, গবেষকসহ স্থানীয় অভিজ্ঞদের নিয়ে একটি ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ দল গঠন করা হয়। ‘ভূমিধসের কারণ চিহ্নিতকরণ ও ভবিষ্যতে করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক ২৭ সদস্যের জাতীয় মূল কমিটির সঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারসহ রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, স্থানীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি, পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রতিনিধি ও মেয়রদের কো-অপট করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা স্থানীয়দের মতামতসহ ব্যাপক গবেষণা ও জরিপ চালিয়ে ওই পাঁচ জেলায় পাহাড় ও ভূমিধসের কারণ চিহ্নিত করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে। প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ দিতে হবে। এরপর প্রতিবেদনটি প্রথম কার্যদিবসের ১৫ দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে দাখিল করতে হবে।
বুধবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে দুপুরে রাঙামাটি সার্কিট হাউসে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের দেয়া ব্রিফিংয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কমিটির আহবায়ক সত্যব্রত সাহা বলেন, এ মুহুর্তে হঠাৎ করে যেমন পাহাড় ধস ঠেকানো সম্ভব নয়, তেমনি হঠাৎ পাহাড় কাটাসহ পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসও বন্ধ করা যাবে না। এজন্য দরকার স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। আর সেটিকে মাথায় রেখে বিস্তারিত গবেষণা ও জরিপ শেষে পাহাড়ধস মোকাবেলায় স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সরাসরি প্রত্যক্ষ করলাম। এখানে দেখা গেছে ১৩ জুন পাহাড় ধসে রাঙামাটির চিত্র একেবারে ভয়াবহ। পাহাড়, কাপ্তাই লেকের পাড়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সব জায়গায় ভূমিধসের ব্যাপক আঘাত হেনেছে। যা দেখে আমরা নিশ্চিত হতে যে পুরো রাঙামাটি শহর মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এখানে শুধু জনবসতির মাটিকাটা পাহাড় নয়, প্রাকৃতিকভাবে রক্ষিত অক্ষত পাহাড়ও ধস হয়েছে। তবে মানবসৃষ্ট ক্ষতিকারক কর্মকান্ডই এর মূল কারণ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এরপরও যথেষ্ট গবেষণা ও জরিপের দরকার।
তিনি বলেন, পাহাড় ভাঙন আরও হবে। হঠাৎ তা করা যাবে না। মোকাবেলায় আমাদের প্রথম সুপারিশ হবে যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে তাদের প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত নিরাপদে সরিয়ে নেয়া। পাহাড় ধসের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য স্থায়ী সমাধানে মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসে সম্পূর্ণ বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে। যারা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করছে তাদেরকে উচ্ছেদ করতে হবে। এজন্য আইনের কড়াকড়িসহ নতুন করে আইন প্রণয়নেরও দরকার আছে।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে পাহাড়ধস প্রতিরোধে স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুসারে প্রতিরক্ষামূলক প্রকল্প এবং পরিকল্পিত বসবাসের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি প্রকৃতির ওপর নির্বিচার অত্যাচার বন্ধে কড়া আইন প্রয়োগ করতে হবে। অনুমতি ছাড়া কোথাও পাহাড় কাটা, বন উজাড়, যেখানে সেখানে বসতবাড়ি বা স্থাপনা নির্মাণ করে বাস করতে দেয়া যাবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম বলেন, পাহাড় ধস মূলত মানবসৃষ্ট কারণে ঘটছে। বিস্তারিত তথ্য ও তত্ত্বের ভিত্তিতে গবেষণায় বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। পাহাড় ধসে জনগণের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করতে হরে দরকার বিজ্ঞানভিত্তিক পরামর্শ। এখানে স্থায়ীভাবে পাহাড় ধসের দুর্যোগ কীভাবে মোকাবেলা করা যায়- তা বের করে আনতে হবে। মানুষের আবাসস্থল গড়তে হবে পাহাড়ের ভারসাম্য রক্ষা করে।

দৈনিক দেশজনতা /এমএম

প্রকাশ :জুলাই ৬, ২০১৭ ৫:১৫ অপরাহ্ণ