অনলাইন ডেস্ক :
অবৈধভাবে ইউরোপ যাবার আশায় তুরস্কে আটকে পড়েছে ২ হাজারের মতো বাংলাদেশি। এদের মধ্যে কয়েকশ ব্যক্তিকে আটক করেছে তুরস্কের পুলিশ। কিন্তু কাগজপত্রবিহীন এই অভিবাসীদের অনেকে বাংলাদেশে ফেরত যেতে চাইলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তারা পড়েছেন উল্টো সংকটে।
ইউরোপে মানব পাচারকারীদের কাছে তুরস্ক হয়ে গ্রীসে বা ইউরোপে প্রবেশ করাটা বেশ জনপ্রিয় একটি পথ, যদিও সম্প্রতি ইউরোপের সঙ্গে তুরস্কের একটি সমঝোতার পর এই এই রুট কঠিন হয়ে উঠেছে। দালালদের মাধ্যমে ইউরোপে যেতে গিয়ে তুরস্কে আটকে পড়েছে অনেক বাংলাদেশীও।
তুরস্কে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আল্লামা সিদ্দিকী বলছেন, ”আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি যে, এখানে বিভিন্ন সময়ে আসা বাংলাদেশি নাগরিক চারশো বা একটু বেশি, তারা অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের জন্য বিভিন্ন জায়গায় আটক অবস্থায় আছেন। তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য আমরা সর্বান্তকরণ চেষ্টা করছি।”
তিনি বলছেন, ”এই দেশে মোট ২ হাজার বাংলাদেশি আসছেন বলে আমাদের অনুমান। তবে এটা কতটুকু সত্যি বলতে পারছি না, শুধু আমরা অনুমান করছি।”
রাষ্ট্রদূত মি. সিদ্দিকী বলছেন, ”এটা আমরা সবাইকে সতর্ক হওয়ার জন্য বলছি যে, তুরস্ক হয়ে ইউরোপে যাওয়া সম্ভব নয়, এটা অসম্ভব একটি প্রয়াস যা বিপদজনক, এরকম চেষ্টা না করার জন্য আমরা সবাইকে অনুরোধ করছি।”
দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলছেন, এদের অনেকে এখনো ইউরোপে যাবার জন্য মরীয়া। এদের অনেকেই ইরান, লেবানন বা জর্ডানের বৈধ চাকরি ছেড়ে দিয়ে এই পথে নেমেছেন। একদিকে তুরস্কে তারা যেমন শোষণের শিকার হচ্ছেন, তেমনি তাদের ব্যবহার করছে অপরাধী চক্রও। কিন্তু এদের মধ্যে যারা ইউরোপ যাবার আশা ছেড়ে দিয়ে এখন দেশে ফেরত যেতে চান, তারাও পড়েছেন উল্টো বিপদে।
কারণ কাগজপত্র বিহীন এই বাংলাদেশীদের ট্রাভেল পারমিট দিতে পারছে না দূতাবাস, কারণ যাচাই না করে এই পারমিট না দেয়ার একটি পরিপত্র জারি করেছে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফলে বিপদে পড়েছেন রাইসুল ইসলামের মতো অনেক বাংলাদেশি। প্রায় পাঁচ বছর আগে ইউরোপে যাবার আশায় দুবাইয়ের বৈধ চাকরি ছেড়ে কোন কাগজপত্র ছাড়া তুরস্কে আসেন রাইসুল ইসলাম। এরপর এখানেই আটকে পড়েন। তুরস্কের একটি ছোট শহরে এখন শ্রমিক হিসাবে কর্মরত রয়েছেন।
রাইসুল ইসলাম বলছেন, ”বাড়িতে মা অসুস্থ, আমার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়েছে আট বছর আগে। এখন দেশে যেতে চাই। কিন্তু দূতাবাস কাগজপত্র দিচ্ছে না। তারা বলছে, যাচাই করার জন্য আমার তথ্য সব দেশে পাঠানো হয়েছে। এনএসআইয়ের রিপোর্ট এসেছে, কিন্তু এসবির রিপোর্ট আসেনি।”
“পুলিশের লোকজন আমার বাড়িতে গিয়ে কয়েক দফায় টাকা নিয়ে এসেছে, এই ঈদের আগেও গেছে। কিন্তু ছয়মাস হয়ে গেলো, তাদের রিপোর্টের জন্য আমার দেশে যাবার কাগজপত্র হচ্ছে না।” তিনি বলছেন, তার শহরেই এরকম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন আরো ১৭জন বাংলাদেশি। তারাও কাগজের আশায় আশায় মাসের পর মাস ঘুরছেন। প্রত্যাবাসনে শ্লথগতির কারণে তুরস্কে মানবিক সংকটের আশঙ্কা করছে বাংলাদেশের দূতাবাস কর্মকর্তারা।
দূতাবাস সূত্র বলছে, অবৈধ অভিবাসীদের তথ্য বাংলাদেশে পাঠানোর পরেও, মাসের পর মাস চলে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের যাচাইকরণ তথ্য দূতাবাসে আসছে না।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিবাসন বিষয়ক অতিরিক্ত সচিব রাখাল চন্দ্র বর্মণ বলছেন, ”তাই এটা পুরনো একটি পদ্ধতি যে, বিদেশে আটকে পড়া কোন বাংলাদেশির বিষয়টি যাচাই করে দেখা যে, সে বাংলাদেশি কিনা। বাংলা তো অনেক দেশের লোক বলে। তাদের মধ্যে ভারতীয় বা মিয়ানমারের লোকজনও থাকতে পারে। তাদের তো আর আমরা ফেরত আনবো না।”
তিনি বলছেন, ”ওরা (দূতাবাস) তালিকা পাঠায়, সেই তালিকা এসবি-এনএসআইয়ের মাধ্যমে যাচাই করে দেখা হয় যে তারা বাংলাদেশের নাগরিক কিনা। তারা বাংলাদেশের নাগরিক হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলে দেয়া হয়। আমরা সাথে সাথেই অ্যাকশন নিয়ে থাকি।”
কিন্তু যে জটিলতা এবং দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে তিনি বলছেন, ”এরকম কোন অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। লিখিত কোন অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই দেখবো।” তবে আঙ্কারার দূতাবাস সূত্র বলছে, এই সমস্যার বিষয়ে ঢাকায় কয়েক দফা চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, কিন্তু তাতে পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি। ফলে আমলাতান্ত্রিক এই জটিলতায় মাসের পর মাস বিদেশের মাটিতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন অসংখ্য ভাগ্যান্নেষী বাংলাদেশি। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ