নিজস্ব প্রতিবেদক:
কেটে নেয়া বোরো ধান গাছের গোড়া থেকে আবারও ধান উৎপাদন করে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কৃষকরা। শুধু খানসামা নয়, এই পদ্ধতিতে ধান আবাদ করেছেন আশেপাশের উপজেলার কৃষকরাও। কৃষি কর্মকর্তারা এই পদ্ধতিকে ‘রেটুন শস্য আবাদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলছেন, এটি কৃষকদের একটি বাড়তি ফসল এবং এতে কৃষকদের বিনা খরচে বাড়তি অর্থ উপার্জন সম্ভব।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামের কৃষক আজিজার রহমান গত বোরো মৌসুমে আড়াই বিঘা জমিতে বি আর-২৮ ধান চাষ করেন। গত মে মাসের শুরুতে এসব ধান কেটে তিনি ঘরে তোলেন। ধানের ফলন হয় প্রায় ১০০ মন। এরপর ওই জমিতে পড়ে থাকা ধান গাছের মুড়ি (গোড়া) নষ্ট না করে পুনরায় ধান উৎপাদন করতে যত্ন নেন এবং ধান গাছের গোড়া কাঁচা থাকায় দ্রুত নতুন কুশি বের হয়। তবে কোনো প্রকার সেচ ছাড়াই শুধু মাত্র সামান্য পরিমাণে সার প্রয়োগ আর কয়েক বার কীটনাশক স্প্রে করে চাষকৃত এসব মুড়ি ধানের মাঝারি ফলন পেয়েছেন।
এ বিষয়ে কৃষক আজিজার রহমান জানান, একই জমিতে গত দু’দিন আগে তিনি পুনরায় ধান কাটেন এবং আড়াই বিঘা জমিতে ফলন পেয়েছেন প্রায় ১৬ মন ধান। এতে নিজেই শ্রম দিয়ে ৫ কেজি সার ও কীটনাশক বাবদ তার খরচ হয়েছে মাত্র ৩শ টাকা। এতে এই ১৬ মন ধানই বাড়তি লাভ তার।
তিনি জানান, এর আগে ২০১৪ সালে তার দ্বিতীয় ছেলে শাহীনুর আলম একই পদ্ধতিতে ২৫ শতক জমিতে ধান চাষ করে এলাকায় ব্যাপক আলোচিত হয়।
এলাকাবাসী আজিমদ্দিন, জহুরুল ইসলাম ও জাহিদ হোসেন পাটোয়ারী বলেন, আমরা তো আগে এসব ধানের গোরা কেটে গরু ছাগলকে খাওয়াই তাম। কিন্তু এ বছর কাটা ধান গাছের গোড়া থেকে নতুন চারার ধান দেখে অবাক হয়েছি। অনেকে এ ধান সংগ্রহ করে লাভবান হয়েছেন।
কৃষক আজিজার রহমানের বড় ছেলে শামীম হোসেন জানান, ইরি বোরো ধান কাটার পর গাছের গোড়া (মুড়ি) থেকে নতুন কুশি বের হয়। এগুলোকে আমার বাবা নষ্ট না করে পুনরায় ধান উৎপাদনে যত্ন করেন। ধান মাড়াই করে আড়াই বিঘা জমিতে আবারও ১৬ মন ধান পেয়েছি।
অপরদিকে খানসামা উপজেলার মারগাঁও গ্রামের আফাজ মেম্বারপাড়ার রহমুল্লার ছেলে আব্দুর রহমান এ পদ্ধতিতে ধান উৎপাদন শুরু করেছেন। তার চাষকৃত প্রায় এক বিঘা জমির ধান কাটার পর ধানগাছের গোড়া থেকে কুশি বের হওয়া ধানক্ষেতে তিনি যত্ন নিচ্ছেন।
এছাড়াও উপজেলার জোনাব মাস্টার, ফজলুর রহমান ও শরৎ চন্দ্রসহ অনেকে এসব ধান চাষে ক্ষেতের যত্ন নিয়েছেন। আবার খণ্ড খণ্ড জমি থেকে ওই এলাকার লিয়াকত আলী ৬ মন, মুসা ৬ মন, আব্দুস সামাদ ৪ মন, ছলেহা খাতুন দেড় মন, তহুরা বেগম ১ মন, সুলতান আলী ২ মন, আশরাফ আলী ৩ মন, কফিল উদ্দিন ৪ মন, মজিদুল ইসলাম ৫ মন এবং আব্দুস সোবহান ২০ কেজি ধান সংগ্রহ করে বাড়তি লাভবান হয়েছেন।
এ পদ্ধতিতে ধান গাছের গোড়া (মুড়ি) থেকে ধানচাষ-এর বিষয়ে খানসামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এজামুল হক জানান, ধানের মুড়ি থেকে আবার ধান চাষ করা যায়। বিশেষ করে ব্রি ধান-২৮ ও ২৯ ধানের গোড়া কাঁচা থাকে। তাই ধান কাটার পর এসব ধান গাছের মুড়ি থেকে কুশি বের হয়। আর এসব মুড়ি থেকে পুনরায় ধান উৎপাদন সম্ভব। এ বছর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের অনেক কৃষক মুড়ি থেকে ধানচাষ করছেন। এদিকে শুধু খানসামা উপজেলা নয়, কাহারোল, চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জসহ আশেপাশের উপজেলায় কৃষকরা ধানগাছের গোড়া গরু-ছাগল থেকে রক্ষা করে পুনরায় ধান ফলিয়েছেন।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা জানান, এই পদ্ধতিতে ফসল আবাদ কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় ‘রেটুন শষ্য আবাদ’ বলা হয়ে থাকে। বিশেষ করে বোরো ধান কেটে নেয়ার পর পরবর্তী আমন আবাদের জন্য প্রায় ২ মাস সময় কৃষকরা পায়। আর এই দুইমাস সময়ের মধ্যে পড়ে থাকা জমিতে এই পদ্ধতিতে ধান আবাদ করে কৃষকরা বাড়তি ফসল পেতে পারে। এটি বেশী লাভজনক না হলেও যেসব কৃষক নিজে পরিশ্রম করেন তারা বাড়তি ফসল পেয়ে লাভবান হতে পারেন বলেও জানান তিনি।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ