নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রাম মহানগরীর বিদ্যমান ড্রেনেজ ব্যবস্থার মধ্যে ৪০শতাংশই নিষ্ক্রিয়। কখনো কখনো এই ব্যবস্থা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত সক্রিয় করা গেলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মহিউদ্দিন আহমদ সংবাদমাধ্যেমকে জানান, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে নিতে হলে ড্রেনেজ ব্যবস্থার ৮০ থেকে ৯০শতাংশ পর্যন্ত সক্রিয় করতে হবে। মূলত ২৭টি ছোট বড় খাল ও ছড়া দিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর পানি নিষ্কাশন করা হয়। এর বাইরে আছে ১৬০৫ কিলোমিটার বিভিন্ন আকৃতির নালা।সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিমালিকানায় নির্মাণ করা এইসব নালা, প্রাকৃতিক খাল ও ছড়াগুলো নানা কারণে প্রকৃত ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী পানি নিষ্কাশন করতে পারছে না। যার ফলে নগরীর বিশাল এলাকা বর্ষা মওসুমে জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে। জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। প্রতিদিন চার হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী করপোরেশনের ১শ বর্গ কিলোমিটার এলাকার নালা নর্দমা পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত।এছাড়া করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের অধীনে ঠিকাদারদের নিয়োগ করা শতাধিক কর্মী খাল ও নালা পরিষ্কারের কাজে করছে।সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মহিউদ্দিন আহমদ বলেছেন, নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য খাল ও নালাগুলোকে যত বেশি সম্ভব ধারণ ক্ষমতার উপযোগী রাখার চেষ্টা চলছে।তিনি জানান, বর্তমানে এগুলো ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত সক্রিয় আছে। জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে নিতে হলে ড্রেনেজ ব্যবস্থার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ সক্রিয় রাখতে হবে।কারণ হিসেবে তিনি জানান, কোথাও কোথাও খাল বেদখল হয়ে একেবারে সরু হয়ে গেছে। কোথাওবা খালের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তি মালিকানার জায়গায় নির্মাণ কাজের জন্য খাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কোনো কোনো জায়গায়।
তিনি বলেন, ‘মহেশ খালের বঙ্গোপসাগরের সাথে যুক্ত মুখটা একেবারেই বন্ধ হয়ে আছে। নগরীর পানি নিষ্কাশনের গুরুত্বপূর্ণ এই খালটি বলতে গেলে একমুখী। বর্জ্য ও অন্যান্য কারনে এই খালের হালিশহর এলাকায় বাঁকের সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে একটি বাঁক কেটে সোজা করে দেয়া হচ্ছে।’তিনি আরো বলেন, ‘পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ১৫ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। প্রকল্পের অধীনে মহেশখালের আটটি স্থানে খনন চলছে। চাকতাই খাল থেকে পাচ বছরে এক লাখ ঘনমিটার মাটি অপসারিত হবে, যার মধ্যে প্রথম বছরেই প্রায় ২৫ হাজার ঘনমিটার মাটি অপসারিত হয়েছে।’‘এর সুফল পাওয়া শুরু হয়েছে। চাকতাই – খাতুনগঞ্জে জোয়ারের পানি গত বছরের চেয়েও কম উঠছে। ষোলশহর মুরাদপুর এলাকায় জলাবদ্ধতার সময় কমে এসেছে,’ যোগ করেন লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মহিউদ্দিন আহমদ।তিনি আরো বলেন, ‘নগরীর ষোলশহর এলাকায় চশমা খালের দুটি শিল্প কারখানার কারণে পানি নিষ্কাশন ঠিকভাবে হচ্ছে না। ফলে সমগ্র ষোলশহর এলাকার বাসিন্দাদেরকেই জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’লে: কর্ণেল মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘চট্টগ্রামে যেসব খাল ও নালা নর্দমা আছে তাতে ঘন্টায় ১০ কোটি ঘনমিটার পানি নিষ্কাশন সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। তাছাড়া ভারী বৃষ্টিপাত হলে, অর্থাৎ ঘন্টায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলে নগরীতে ১৪ কোটি ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয়। ফলে যথাসময়ে পানি নিষ্কাশন অসম্ভব হয়ে পড়ে।নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা পুরোপুরি কার্যকর না থাকার পেছনে তিনটি বড় কারণ চিহ্নিত করেছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার ড্রেনেজ কানসালটেন্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির।বোর্ডের সাবেক প্রধান এই প্রকৌশলী বলেন, ‘প্রথম কারণ হচ্ছে পাহাড়ী এলাকা হওয়ার কারণে দ্রুত বৃষ্টির পানি নীচে নেমে আসে, যা নিম্নাঞ্চলকে প্লাবিত করে। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে অধিকাংশ পাহাড় থেকে পানির সাথে বিপুল পরিমাণ বালি এসে বিদ্যমান খাল ও নালাকে ভরাট করে দিচ্ছে। তৃতীয় কারণ হচ্ছে জোয়ারের পানি।’
হুমায়ুন কবির বলেন, ‘চট্টগ্রামের ২৭টি খালের ২২টি যুক্ত আছে কর্ণফুলী নদীতে ও ৫টি যুক্ত হালদায়। রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় এইসব খাল দিয়ে এক-দুই ঘন্টার পানি নিষ্কাশনের জন্য ৫/৬ঘন্টা লেগে যাচ্ছে। দুই তিন ঘন্টায় জোয়ারের যে পানি নগরীতে প্রবেশ করছে তা বের হতে সময় লাগে ৬/৭ ঘন্টা।’‘সবগুলো খাল কম বেশি সক্রিয় থাকলেও এগুলোর পানি ধারণ ও প্রবাহের ক্ষমতা কমে গেছে আশংকাজনক হারে,’ উল্লেখ করেন তিনি।প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির আরো বলেন, ‘চট্টগ্রামের ২৭টি খালের দৈর্ঘ্য ১৬০কিলোমিটারের মতো। এরমধ্যে ১৬৪টি স্থানে অবৈধ দখলদার রয়েছে। খালগুলোর উপর নির্মিত ২১ ব্রিজের কারণেও স্বাভাবিক পানি প্রবাহ হচ্ছেনা।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ