২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ২:০৬

লোহাগাড়ার হাসপাতাল ও ডায়াগনাস্টিক সেন্টার যেন মরণফাঁদ

লোহাগাড়া প্রতিনিধি:

রমরমা ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে লোহাগাড়ার অবৈধ ও প্রশ্নবিদ্ধ বেসরকারী হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। লোহাগাড়ায় এমন সেন্টারের সংখ্যা ৩০ টিরও উপরে। অধিকাংশ সেন্টারের নেই সরকারী অনুমোদন। কোথাও কোথাও ডায়াগনস্টি সেন্টারের অনুমোদন নিয়ে সাজিয়ে বসেছে হাসপাতালের ব্যবসা। ভর্তি করা হয় রোগী ভাড়া করে আনা হয় চিকিৎসক। এমন ফাঁদে পড়ে নানান হয়রানির শিকার হচ্ছেন লোহাগাড়াবাসী, সাইনবোর্ড সর্বস্ব এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মনীতির বালাই নেই। হাতুড়ে টেকনিশিয়ান দ্বারাই চালানো হয় রোগ নির্ণয়ের যাবতীয় পরীক্ষা। তারা মনগড়া রিপোর্ট তৈরী করে ঠকাচ্ছে নিরীহ মানুষকে। রোগী মারার কারখানা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে লোহাগাড়ার অনেক হাসপাতাল। নানান সমালোচনার মাঝেও চালিয়ে যাচ্ছে এসব অবৈধ হাসপাতাল ব্যাবসা। বেশ কয়েকবার ভাংচুর এবং মানববন্ধন করেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এক একটা হাসপাতাল যেন মনে হয় এক একটা ডাস্টবিন। প্রতিনিয়ত রক্তমিশ্রিত ব্যান্ডেজ, মাংসের টুকরা ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ও অন্যান্য আর্বজনা ফেলা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে খোলা স্থানেই। নিয়ম অনুযায়ী এগুলো ইনসিনেটরে পোড়ানোর কথা অপরদিকে, এই বর্জ্য অপরিকল্পিত ভাবে খোলা জায়গায় ফেলে রাখার কারণে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে মারাত্নক ভাবে। লোহাড়ায়া বেশিরভাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সরকারী অনুমোদন প্রাপ্ত সার্টিফিকেটধারী দক্ষ টেকনিশিয়ার পর্যন্ত নেই। চিকিৎসা সেবার নামে চলছে অনৈতিক বাণিজ্য। জীবন মৃত্যু নিয়ে খেলা করছেন এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। লোহাগাড়ায় যেখানে সেখানে গড়ে ওঠা ডায়াগনিস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল ব্যবসা চলছে দেদারছে। আর এতে প্রতিনিয়তই গ্রাম-অঞ্চল থেকে আসা সহজ-সরল রোগী ও তার পরিবার প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। শুধু অর্থই নয়, চলে রোগীদের জীবন নিয়ে খেলাও। কোনো কোনো হাসাপাতালে চিকিৎসকের কাজ করেন নার্সরা। লোহাগাড়া সদরে বেশ কয়েকটি হাসাপাতালে যেখানে চিকিৎসক নেই, প্রশিক্ষিত সেবিকা নেই, নিম্নমানের ওষুধ আর দুর্গন্ধময় পরিবেশে সাস্থ্য সেবার নামে এসব হাসাপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রশাসনের সামনেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে সেবার মানের চেয়ে অর্থ আদায়ই এসব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রধান উদ্দ্যেশ্য। এসব কথিত হাসপাতালে অবহেলায় বিভিন্ন সময় একাধিক রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও এরা পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কোন যোগ্য ও দক্ষ টেকনিশিয়ন না থাকায় সঠিক রোগ নির্ণয় করতে ব্যার্থ হয় এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ফলে এদের রিপোর্ট অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুল। চিকিৎসা সেবা বলতে কোথাও কিছু নেই। ডাক্তাররা রোগীদের বলেই দিচ্ছেন এখানে ভালো ব্যবস্থা নেই। ওমুক হাসপাতালে যান, ওখানে আমি বসি, ভালো করে দেখে দিব। বাধ্য হয়ে রোগী বা তার আপনজনরা তাই করছেন। কিন্তু এতেও শেষ রক্ষা হচ্ছেনা, রোগীদের রোগ তো সেরে উঠছেনই না, বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগ আরও জটিল আকার ধারণ করছে। সামান্য পেটের অসুখ পর্যন্ত সারাতে পারেন না আমাদের ডাক্তাররা। সরকারী হাসপাতালের ডাক্তাররা ভবন ভাড়া নিয়ে খুলে বসেছেন নিজেরই হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
লোহাগাড়া উপজেলা সাস্থ্য অধিদপ্তর ও প্রশাসনের কাছে লোহাগাড়াবাসীর প্রশ্ন এসব মনিটর করার কি কোন প্রয়োজন নেই? এভাবে কি কোনও দেশে চিকিৎসা কার্যক্রম চলে? ডাক্তার, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চিকিৎসাব্যবস্থা কি কেবলই বাণিজ্যের জন্য? এ নৈরাজ্যের শেষ কোথায়।

দৈনিক দেশজনতা /এমএম

 

প্রকাশ :জুলাই ৪, ২০১৭ ৬:৪৮ অপরাহ্ণ