এম.এ.জাফর লিটন, সিরাজগঞ্জ:
যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে গত ২ সপ্তাহে শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের পাঁচিল পূর্বপাড়ার শতাধিক ঘর-বাড়ী নদীগর্ভে বিলীণ হয়ে গেছে। এতে গৃহহারা হয়েছে প্রায় সহস্রাধিক মানুষ। সেই সাথে আরও নতুন করে ২শত পরিবার ভাঙ্গনের প্রহর গুনছে।
সরে জমিনে ঘুরে গতকাল মঙ্গলবার সকালে যমুনা নদীর তীরবর্তী পাচিল পূর্বপাড়া গ্রামে ভয়াবহ ভাঙ্গনের চিত্র লক্ষ করা গেছে। গৃহহারা পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে ঠাঁই নিয়েছে বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে। কেউ অদূরে নিরাপদে আত্মীয় স্বজনবাড়ীতে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যমুনা নদীতে পানি আকষ্মিক বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙ্গন শুরু করে। ভাঙ্গনের আশঙ্কায় সামর্থবানরা দ্রুত বাসস্থান গুটিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেলেও অধিকাংশই ঘর-দরজা,গাছপালা চোখের সামনেই নদীগর্ভে বিলীণ হতে দেখেছে।
হাটপাচিল পূর্বপাড়ার গাজী বেপারী (৬২) জানান, গত এক সপ্তাহ পূর্বে তাঁর বসতভিটা নদীগর্ভে চলে যেতে দেখেছেন , আর গতকাল মঙ্গলবার ভিটেবাড়ীর সামান্য অংশটিও ভাঙ্গনের দৃশ্য দেখলেন। কিছুই করার নেই, শুনেছি সরকারি ভাবে বেড়ি বাঁধ নির্মাণ করা হবে, কিন্তু কবে ? এরকম আরও অনেক গ্রাম নদীগর্ভে চলে যাওয়ার পর ।
খোরশেদ বেপারী (৪৫) জানান, গত কয়েক বছরের ভাঙ্গনে যমুনা নদী এই গ্রামের আশে পাশের গ্রাম বিলীণ করে মানচিত্র থেকে মুছে দিয়েছে। হযরত বেপারী জানান, এক যুগ পূর্বেও যমুনা নদী পাচিল গ্রাম থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থান করতো। আর বর্তমানে যমুনা নদী পাচিল গ্রামের সিংহভাগ ঘ্রাস করে নিয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত মানুষগুলোর মাঝে হাহাকার ও হতাশা লক্ষ করা গেছে। প্রতিদিন সারা বেলা নদী ভাঙ্গন অব্যাহত রাখলেও তা প্রতিরোধে কার্যত কোন পদক্ষেপ নেই। তাই ভাঙ্গনের ভয়ে পূর্ব থেকেই লোকজন বাসস্থান গুটিয়ে নিয়ে নিরাপদে সরে যাচ্ছেন। কেই বাড়ীর চারপাশে লাগানো পরিবেশ বান্ধব গাছ-গাছালী সস্তা মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
কামাল বেপারী জানান, গত ১ মাস যাবত নদী ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কোন লোক ছুটে আসেনি। এমনকি চেয়ারম্যান মেম্বর কেউ। সরকারী -বেসরকারী কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ত্রান বিতরণ ও সাহায্য সহযোগীতার আশ্বাস পাইনি কেউ। শেষ আশ্রয়স্থল ভিটে মাটি হারিয়ে অনেকেই নির্বাক নিস্তব্দ হয়ে গেছে। নদী গর্ভে ভিটে মাটি হারানো অসহায় অনেক পরিবারে ভাতের চুলা পর্যন্ত জ্বলছেনা। অনেকে ঘর-দরজা মেরামত কিম্বা তুলতে না পেরে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবনযাপনা করছে। ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবারগুলো আর্থিক সহযোগীতা আকূতি করছে প্রশাসন ও হৃদয়বান মানুষের কাছে। সেই সাথে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কঠোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে। তা না হলে আগামী কয়েকদিনে নদীটি আগ্রাসী থাবায় আরও বহু পরিবার ভিটে মাটি হারিয়ে পথে বসতে শুরু করবে।
উল্লেখ্য শাহজাদপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন কৈজুরী, গালা, সোনাতনী ইউনিয়নের কয়েকশত গ্রাম,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা, হাসপাতাল যমুনা নদীতে বিলীণ হয়ে গেছে। গৃহহারা হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ।
দৈনিক দেশজনতা /এমএম