নওগাঁ প্রতিনিধি:
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুরের নয়াপাড়া এলাকায় মাল্টি ফ্যাবস লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় নওগাঁর যুবক আমিরুজ্জামান আমির ওরফে পায়েল(২৭) নিহত হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করলেও সকালে নিহতের সংবাদ এবং মরদেহ সনাক্তের পর থেকে চলছে শোকের মাতম। নিহতের বাড়ি শহরের পার-নওগাঁ চকরামপুর মহল্লায় এবং মৃত আজিজুল ইসলামের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিম্নধ্যবৃত্ত পরিবারের সন্তান আমিরুজ্জামান পায়েল। গত ছয় বছর আগে তার বাবা মারা যান। চার সদস্য নিয়ে পরিবারের টানাপোড়ন শুরু হয়। অভাবের মধ্য দিয়েও পায়েল বগুড়া পলিটেকনিক কলেজ থেকে ইলেকট্রিক বিষয়ের উপর ডিপ্লোমা পাশ করে। এরপর ঢাকা উত্তরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি করার পাশাপাশি পাঁচ বছর থেকে মাল্টি ফ্যাবস লিমিটেডে ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকুরি শুরু করে আমিরুজ্জামান পায়েল।
গত দুই বছর আগে পড়াশুনা শেষ হলেও সেখানেই সে ফুল টাইম চাকুরি করে। আর আমিরুজ্জামান পায়েল ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। ঘটনার দিন পায়েলসহ আরো কয়েকজন সেখানে দায়িত্বরত ছিল। সোমবার সন্ধ্যার দিকে ওই কারখানায় বিকট শব্দে বয়লার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে কারখানার চারতলা ভবনের দুতলা পর্যন্ত একপাশের অংশ ধসে পড়ে। ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়টি টেলিভিশনের দেখার পর থেকে পায়েলের পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। পরে তার মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তী তার বড় ভাই পলাশ ও খালাতো ভাই মামুনুর রশিদ রাতেই ঢাকায় চলে যায়। অবশেষে মঙ্গলবার সকালে তারা আমিরুজ্জামান পায়েলের মরদেহ সনাক্ত হলে মৃত্যুর এই বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশিরা পায়েলের মা ও বোনকে ঘিরে বসে আছে। সবাই তাদের সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কোন কথাই যেন তাদের তর সইছে না। বার বার মা ও বোন মূর্ছা যাচ্ছিলেন। জ্ঞান ফেরার পর মা পুষ্প বেওয়া আবার হাউমাউ করে কান্না করছেন। আর বলছেন ঈদের মধ্যে বাবা আমার সুন্দর শাড়ি কিনে দিয়েছে। নামায পড়ার পর বাবা তার জন্য দোয়া করতে বলতো। ফোনে বাবা আর কথা বলবে না। আমার কেউ আর খোঁজ নিবে না।
প্রতিবেশি সুলতান আহম্দে বলেন, পায়েল কষ্ট করে পড়াশুনা শেষ করেছে। পোশাক কারখানায় ইঞ্জিনিয়ার পদে কয়েক বছর থেকে চাকরি করছে। সে ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। চাকরির সুবাদে পরিবারে কিছুটা স্বচ্ছলতা এসেছে। গত তিন মাস আগে তার ছোট বোন আফসানা মিম পুলনকে বিয়েও দিয়েছে। আমিরুজ্জামান পায়েলের মৃত্যুতে পরিবারটি নিঃশ্ব হয়ে গেল। যদি ওই কারখান থেকে পরিবারটিকে সহযোগীতা প্রদান করে তাহলে ভালো হতো।
পায়েলের বড় বোন আফরোজা বলেন, ঘটনার পর ভাইয়ের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সেখানে আমাদের আত্মীয় ছিল। তাকে ঘটনাস্থলে সকালে পাঠানো হলে অনেক খোঁজাখুজির পর ভাইয়ের মরদেহ সনাক্ত করে।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক ড. আমিনুল ইসলাম ঘটনাটি শুনে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে জানান, আমিরুজ্জামান পায়েলের পরিবারকে আর্থিক সহযোগীতা প্রদানের আশ্বাস দেন।
মরদেহ গাজীপুর হাসপাতাল মর্গে আছে। মরদেহ উদ্ধার করে আমিরুজ্জামান পায়েলের গ্রামের বাড়ীতে নিয়ে আসার জন্য অপেক্ষা করছেন তার পরিবারের লোকজন। এখন এলাকায় চলছে শোকের মাতম।
দৈনিক দেশজনতা /এমএম