২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১:০৮

চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে জানুন

স্বাস্থ্য ডেস্ক:

বাংলাদেশে প্রথম ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাই নবাবগঞ্জে প্রথম এ ভাইরাসের প্রার্দুভাব দেখা যায়। পরবর্তীতে ২০১১ সালে ঢাকার দোহার উপজেলায় এই রোগ দেখা যায়। তবে এর পরে বিচ্ছিন্ন দু’একটি রোগী ছাড়া এ রোগের বড় ধরনের কোনো বিস্তার আর বাংলাদেশে লক্ষ্য করা যায়নি। বর্ষার পর পর যখন মশার উপদ্রব বেশি হয় তখন এ রোগের বিস্তার বেশি দেখা যায়।

চিকুনগুনিয়া ভাইরাস কী?

চিকুনগুনিয়া ভাইরাস টোগা ভাইরাস গোত্রের ভাইরাস। মশাবাহিত হওয়ার কারণে একে আরবো ভাইরাসও বলে। ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাস ও একই মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং প্রায় একই রকম রোগের লক্ষণ দেখা যায়।

রোগের লক্ষণ সমূহ : (১) হঠাৎ জ্বর আসা সঙ্গে প্রচণ্ড গিঁটে গিঁটে ব্যথা।  অন্যান্য লক্ষণ সমুহের মধ্যে- (২) প্রচণ্ড মাথাব্যথা (৩) শরীরে ঠাণ্ডা অনুভূতি (Chill) (৪) বমি বমি ভাব অথবা বমি (৫) চামড়ায় লালচে দানা (Skin Rash) (৬) মাংসপেশিতে ব্যথা (Muscle Pain)

সাধারণত রোগটি এমনি এমনিই সেরে যায়, তবে কখনও কখনও গিঁটের ব্যথা কয়েক মাস এমনকি কয়েক বছরের বেশি সময় থাকতে পারে।

বাহক : এডিস ইজিপ্টি ((Ades aegypti) এবং এডিস এলবোপিকটাস (Ades albopictus) মশার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়।  মশাগুলোর শরীরের ও পায়ের সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ দেখে সহজেই চেনা যায়।

যারা ঝুঁকির মুখে : এ মশাগুলো সাধারণত পরিষ্কার বদ্ধ পানিতে জন্মায় এবং যাদের আশপাশে এ রকম মশা বৃদ্ধির জায়গা আছে, সে সব মানুষেরা বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে।

কীভাবে ছড়ায় : প্রাথমিকভাবে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত এডিস ইজিপ্টাই অথবা এডিস অ্যালবুপিক্টাস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়।  এ ধরনের মশা সাধারণত দিনের বেলা (ভোর বেলা অথবা সন্ধ্যার সময়) কামড়ায়।  এছাড়াও চিকুনগুনিয়া ভাইরাস আক্রান্ত রক্তদাতার রক্ত গ্রহণ করলে এবং ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার সময়ে অসাবধানতায় এ রোগ ছড়াতে পারে।

ব্যাপ্তিকাল : ৩-৭ দিন (তবে ২-২১ পর্যন্ত হতে পারে)।

প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ : এ রোগ প্রতিরোধের কোনো টিকা নাই। ব্যক্তিগত সচেতনতাই চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রধান উপায়।

মশার কামড় থেকে সুরক্ষা : মশার কামড় থেকে সুরক্ষাই চিকুনগুনিয়া থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায়।  শরীরের বেশির ভাগ অংশ ঢাকা রাখা (ফুল হাতা শার্ট এবং ফুল প্যান্ট পরা), জানালায় নেট লাগানো, প্রয়োজন ছাড়া দরজা জানালা খোলা না রাখা, ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা, শরীরে মশা প্রতিরোধক ক্রিম ব্যবহার করার মাধ্যমে মশার কামড় থেকে বাঁচা যায়। শিশু, অসুস্থ রোগী এবং বয়স্কদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

মশার জন্মস্থান ধ্বংস করা : আবাসস্থল ও এর আশপাশে মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে।  বাসার আশপাশে ফেলে রাখা মাটির পাত্র, কলসী, বালতি, ড্রাম, ডাবের খোলা ইত্যাদি যেসব জায়গায় পানি জমতে পারে, সেখানে এডিস মশা প্রজনন করতে পারে।  এসব স্থানে যেন পানি জমতে না পারে সে ব্যাপারে লক্ষ রাখা এবং নিয়মিত বাড়ির আশপাশে পরিষ্কার করা।  সরকারের মশা নিধন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা।

যেহেতু এ মশা আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত থেকে জীবাণু নিয়ে অন্য মানুষকে আক্রান্ত করে, কাজেই আক্রান্ত ব্যক্তিকে যাতে মশা কামড়াতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া।

রোগ নির্ণয় : উপরোল্লিখিত রোগের লক্ষণসমূহ দেখা দিলে, ওই ব্যক্তির চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণের আশংকা থাকে। উপসর্গগুলো শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে ভাইরাসটি (Serology Ges এবং RT-PCR) পরীক্ষার মাধ্যমে সনাক্ত করা যায়।

বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিটিউট (আইইডিসিআর)-এ চিকুনগুনিয়া রোগ নির্ণয়ের সকল পরীক্ষা করা হয়।

চিকিৎসা : চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসা মূলত উপসর্গ ভিত্তিক। এর কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম নিতে হবে, প্রচুর পানি ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে এবং প্রয়োজনে জ্বর ও ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ট্যাবলেট এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে ওষুধ খেতে হবে।

গিটের ব্যথার জন্য গিঁটের উপরে ঠাণ্ডা পানির স্যাঁক এবং হালকা ব্যায়াম উপকারী হতে পারে। তবে প্রাথমিক উপসর্গ ভালো হওয়ার পর যদি গিঁটের ব্যথা ভালো না হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে।  কোনো কারণে রোগীর অবস্থা অবনতি হলে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :জুলাই ৪, ২০১৭ ১২:০৮ অপরাহ্ণ