২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ২:৪১

ফরহাদ মজহার সরকারের টার্গেটের শিকার : রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিশিষ্ট কবি, বুদ্ধিজীবী ও রাষ্ট্র চিন্তক ফরহাদ মজহারকে অপহরণের বিষয়টিকে সরকারের টার্গেটের শিকার বলে মন্তব্য করেছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী । সেইসাথে ফরহাদ মজহারকে অপহরণের ঘটনার সাথে সরকারের কেনো এজেন্সি জড়িত বলে দলটির অভিযোগ। অবিলম্বে তাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানায় বিএনপি।

আজ সোমবার বিকেলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, এদেশের প্রখ্যাত কলামিস্ট, গবেষক, কবি এবং প্রতিথযশা বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার ভোর ৫টায় তার বাসা থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরই তাকে অপহরণ করা হয়েছে। পরিবার সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে যে তথ্য পেয়েছি, তা হৃদয়বিদারক, অমানবিক এবং সারা জাতির জন্য ভীতি ও শঙ্কার। আমরা যেটা মনে করি, সরকারের অজান্তে এ ঘটনা ঘটেনি। সরকারের কোনো এজেন্সি বা কোনো টিম এ ঘটনার সাথে জড়িত। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে এই ঘৃণ্য অপহরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

রিজভী বলেন, অপহরণের ২৪ মিনিট পরে তার (ফরহাদ মজহার) পরিবার ও স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে এবং তাকে ফরহাদ মজহারকে দিয়ে বলা হয়, আপনারা টাকা যোগাড় করেন এবং সেই টাকা দিলে পরে ছেড়ে দেয়া হবে। একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন এই টাকার পরিমাণ প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। আমি এখনো যথার্থভাবে তার পরিবারের কাছ থেকে জানতে পারিনি, কত টাকা চেয়েছেন। এ হচ্ছে পরিস্থিতি। এরপর পুলিশকে ঘটনা জানানো হলে তারা যে মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করেছেন, তা ট্র্যাক করার চেষ্টা করে। তারা ট্র্যাক করে দেখেছেন যে, কখনো গাড়িটি মানিকগঞ্জের দিকে আছে, আবার পরবর্তিতে বলেছেন যে মাগুরা-যশোরের দিকে আছে। বিষয়টা রহস্যজনক।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি, এই অপহরণের উদ্দেশ্য হচ্ছে আর যাতে কেউ কলম না ধরতে পারে, আর যাতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে না পারে, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ যে গুমরে গুমরে মরছে, এটা যেন বানময় হয়ে খবরে কাগজে অথবা অন্য কোথাও প্রকাশিত হতে না পারে। নিস্তব্ধ নিরব হয়ে যায় যেন মানুষ।আর তাই পরিতৃপ্তি সহকারে এই দুঃশাসনের অধিকত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী রাজত্ব করে যাবেন। আমি আবারো বলছি ফরহায মজহারকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিন। নইলে এদেশের মানুষ ক্ষোভে প্রতিবাদে ফেটে পড়বে।

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ফরহাদ মজহারের মতো একজন বিদগ্ধ মানুষ, একজন শুভচিন্তক মানুষ এই দুর্সিহ দুঃসময়ের মধ্যেও যার ক্ষুরধার লেখনি আজকের সংগ্রামরত-আন্দোলনরত মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করছে, তাকে এমনি সামাজিক কোনো মুক্তিপণের আদায়ে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অপরহরণকারী গোষ্ঠী এটা করতে পারে না। সরকার তার যে লেখনি, তা যে চিন্তা, তার যে মনন, এটিকে ভয় পেয়ে অনেকদিন ধরেই মনে হয় টার্গেট করেছিলো, আজকে সেই টার্গেটটা সম্পন্ন করার তারা চেষ্টা চালিয়েছে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সুপ্রিম কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছেন এর ফলে জনগণের মধ্যে যে আশাবাদ গভীরভাবে প্রতিথ হয়েছে। সামনের দিনের গণতন্ত্র এবং ন্যায় বিচার নিশ্চয়তার জন্য মানুষের মধ্যে যে তীব্র অনুভুতি তৈরি হয়েছে- এটাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য, চোখটাকে অন্যদিকে সরিয়ে দেয়া কারণ হতে পারে। অথবা গতকাল মাহমুদুর রহমান ও ফরহাদ মজহার সাহেবরা যে ন্যায় সঙ্গত বিষয়ে যে বক্তব্য তুলে ধরেছেন এটাও কারণ হতে পারে অথবা দীর্ঘদিনের যে টার্গেট তাকে বাস্তবায়ন করার জন্য আজকে এই জঘন্য অমানবিক দুরাচারমূলক কাজ করেছে।

অপহরণের সরকারের কোনো এজেন্সিকে আপনি সন্দেহ করছেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা তো আমরা বলতে পারবো না। এ ধরণের ঘটনাগুলো আমরা এর আগেও দেখেছি যে অপহরণের সাধারণ যে বৈশিষ্ট বা প্রকৃতি একই রকম। আপনারা দেখুন এম ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হীরু, চৌধুরী আলমের কথাই বলুন-ন্যাচারটা এই রকমই।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাইক্রোবাসে নিয়ে যাচ্ছেন, কালো গ্লাস ঢাকা মাইক্রোবাসে তারা তুলে নিচ্ছে, তারা আবার অস্বীকার করছে। তারা আবার নাটক করে দেখাচ্ছেন দেখি আমরা খোঁজ নিচ্ছি, খোঁজ করছি।

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই জরুরি সংবাদ সম্মেলন হয়।

এসময় দলের যুগ্মমহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দৈনিক দেশজনতা/এন আর

 

প্রকাশ :জুলাই ৩, ২০১৭ ৬:৩৩ অপরাহ্ণ