২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ২:১৫

নওগাঁয় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি খামার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নওগাঁর রানীনগরে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে পল্লীশ্রী নিকেতন নামে একটি প্রদর্শনী খামার। এই প্রদর্শনী খামারের বিভিন্ন প্রকল্প দেখে উপজেলার অনেক বেকার যুবকরা এখানকার সার্বিক সহায়তায় গড়ে তুলছেন ছোট ছোট খামার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তাই জেলার মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি এ খামারটির কথা। রানীনগর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামে প্রায় ৩০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে এই প্রদর্শনী খামারটি। অত্র এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের মাঝে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দেওয়ায় হচ্ছে এই খামারের মুল লক্ষ্য। এতে কৃষকরা অতি অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে এই প্রযুক্তি ও পদ্ধতিগুলোকে ব্যবহার করে আরো অধিক লাভবান হবে বলে মনে করেন খামার কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের মে মাসে এই খামার তৈরির কাজ শুরু করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম। এই এলাকার কৃষকদের মাঝে আধুনিক ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই মূলত তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে এই প্রদর্শনী খামারটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। বর্তমানে এই খামারে দেশি-বিদেশি ব্রাহ্মা, ফিজিয়ান, সিন্ধুসহ বিভিন্ন প্রজাতির গরু পালন ও কম সময়ে মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। অতি অল্প সময়ে উৎপাদিত হচ্ছে গরুর মাংস ও দুধ। গরুর সেটের টিনের ওপর প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে পানির ঝর্না তৈরি করা হয়েছে। এতে করে গরু-ছাগলকে গরমের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অতিরিক্ত কোনো বৈদ্যুতিক ফ্যানের প্রয়োজন হবে না। ঝর্নার পানি একবার প্রবাহিত করলে ২-৩ ঘণ্টা সেট ঠাণ্ডা থাকে। এতে করে সাশ্রয় হবে অর্থ ও বিদ্যুৎ। সেই সাথে কৃষকদের মাটি পরীক্ষার জন্য স্থাপন করা হয়েছে সয়েল টেস্ট ল্যাবরেটরি। যেখানে কৃষকরা বিনামূল্যে তাদের জমির মাটি পরীক্ষা করাতে পারবেন। এখানে দেশি-বিদেশি মেশ, ভেড়া ও গারল পালন করা হচ্ছে। এছাড়া তার্কি পাখি, চিনা মুরগি ও দেশি-বিদেশি কবুতর পালন করা হচ্ছে। গরুর গোবর থেকে তৈরি করা হচ্ছে বায়োগ্যাস আর গোবরগুলোকে জৈব সার হিসাবে বিক্রি ও ব্যবহার করা হচ্ছে। খামারে থাইলান্ডের কেঁচো দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে কম্পোস্ট সার। এই সারগুলো বিক্রি হচ্ছে ২০/২৩ হাজার টাকা টন হিসাবে। এখান থেকে এই বিদেশি কেঁচোগুলো সরবরাহও করা হচ্ছে বাহিরে। খামারে চাষ করা হচ্ছে মাশরুম। অতি অল্প সময়ে এই মাশরুম চাষ করে অধিক লাভ করা সম্ভব। পুষ্টিতে ভরপুর এই মাশরুম নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বাইরে বিক্রি করা হচ্ছে। এই মাশরুম দিয়ে বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু তরকারি রান্না করা যায়। খামারে রয়েছে হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন দেশি-বিদেশি মাছের হ্যাচারি। যেখানে বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদন করা হয়। যা এলাকা ছাড়াও বাইরে সরবরাহও করা হচ্ছে। খামারের পুকুরের পাশ দিয়ে চাষ করা হয়েছে বিভিন্ন ঔষধি ও ফলদ গাছ এবং সবজি। সবকিছু তৈরি করা হয় রাসায়নিক কেমিক্যাল ও সার ছাড়াই। এছাড়া আধুনিক পদ্ধতিতে পালন করা হচ্ছে কোয়েল পাখি। এই পাখির ডিম ও মাংস এই খামার থেকে কম মূল্যে সরবরাহ করা হয়।

খামারে বর্তমানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক গরু, বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল, পাঠা ও তার্কি পাখিসহ বিভিন্ন জাতের পাখি রয়েছে প্রায় ৮ হাজার। বর্তমানে এই খামারে এলাকার প্রায় ৫০জন বেকার মানুষের স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুয়োগ হয়েছে। প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা আসেন এই খামার দেখার জন্য।

জেলার আত্রাই উপজেলা থেকে খামার দেখতে করতে আসা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমি উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে বেকার রয়েছি। তাই এই খামারটি দেখতে এসেছি। এই খামারের বিভিন্ন কার্যক্রম দেখলাম। এখানকার সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে আমিও একটি খামার গড়ে তুলবো। উপজেলার আবাদপুকুর এলাকার হাফিজার রহমান জানান, আমি অনেকবার এই খামারের কথা শুনেছি। তাই খামারটি দেখতে এসেছি। আমার অনেক দিনের ইচ্ছা এটার মত একটি উন্নত জাতের বিদেশি গরুর ফার্ম গড়ে তোলার।

এ বিষয়ে খামারের মালিক স্থানীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম বলেন, আমার নির্বাচিত এলাকা আত্রাই ও রাণীনগর উপজেলার মানুষ খুবই অবহেলিত। তাই এই এলাকার বেকার যুবকদের উৎসাহ আর কৃষকদের মাঝে আধুনিক ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তিগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে আমি এই খামারটি গড়ে তুলেছি। এলাকার কৃষকরা এই খামারটি পরিদর্শন করলে অবশ্যই আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির কিছু না কিছু শিখবে আর বেকার যুবকরা অনুপ্রাণিত হয়ে গড়ে তুলবে ছোট ছোট খামার। এতে এক সময় এই এলাকা উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে যাবে। এতে করে অনেক বেকার সমস্যা দূর হবে।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :জুলাই ৩, ২০১৭ ২:০০ অপরাহ্ণ