২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:২৬

সিলেটে দীর্ঘমেয়াদি বন্যা, দুর্ভোগ চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সিলেটের সাতটি উপজেলায় দীর্ঘমেয়াদি বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে এসব উপজেলার প্রায় সকল রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর। এমনকি কয়েকটি উপজেলা পরিষদও বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও পানির নিচে। বন্যাদুর্গত এলাকায় পানিবন্দী মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ। ফলে পানিবন্দী মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন। এদিকে, বন্যার কারণে সিলেটের ১৭৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৩ হাজার হেক্টর জমির ফসলও।

সিলেটের বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ওসমানীনগর, গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে। টানা বর্ষণ ও ভারতের পাহাড়ি এলাকা থেকে নেমে আসা ঢলে এসব উপজেলার কোথাও এক মাস ধরে, কোথাও দুই সপ্তাহ ধরে বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে এসব এলাকার কয়েক লাখ মানুষ হয়ে পড়েছেন পানিবন্দী। বন্যা দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বন্যাদুর্গত মানুষ। এরকম অবস্থায় পর্যাপ্ত ত্রাণ না পাওয়ায় তাদের হাহাকার আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

সরেজমিনে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়, গত প্রায় এক মাস ধরে এ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার তলিয়ে রয়েছে পানির নিচে। ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ও তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে।

ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মুনিম বলেন, ‘রাস্তাঘাট ও ইউপি পরিষদ কার্যালয় তলিয়ে যাওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সেবা প্রদান করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ইউপি পরিষদ কার্যালয়ে আসছেন না। ’

সরেজমিনে বালাগঞ্জ উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়, এ উপজেলায় গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বন্যা দেখা দিয়েছে। কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়। এ নদীর পানি না কমায় এ দুই উপজেলায় বন্যাও কমছে না। বালাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের প্রতিটি কক্ষে পানি ঢুকে পড়েছে। এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বারান্দা পর্যন্ত পানি রয়েছে। বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় ও উপজেলা ডাকবাংলোও রয়েছে পানির নিচে। পানির মধ্যেই কোনরকমে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।

বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ সিংহ জানান, বন্যার পানি না কমায় পানিবন্দী অবস্থায় অফিস করতে হচ্ছে। এতে উপজেলার কর্মকর্তারা এবং সেবাগ্রহীতারাও দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন।

বালাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আবদাল মিয়া বলেন, ‘উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের ৮০ ভাগ এলাকা বন্যাদুর্গত। সরকার থেকে যে ত্রাণ পাওয়া যাচ্ছে, তা খুবই অপ্রতুল। ’ তিনি সরকারের কাছে আরও বেশি ত্রাণ সহায়তার দাবি করেন। একইসাথে বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

উপজেলা চেয়ারম্যান আবদাল মিয়া আরো বলেন, কুশিয়ারা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নামতে পারছে না। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি বন্যা দেখা দিয়েছে। এর সমাধানের জন্য কুশিয়ারা খনন করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আনিসুর রহমান জানান, বন্যার পর থেকে এলাকায় ডায়রিয়া, জ্বর ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। কিন্তু হাসপাতালের চারদিকের রাস্তা ডুবে থাকায় মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে হাসপাতালে যাওয়া লোকজনকে পোহাতে হচ্ছে সীমাহোন দুর্ভোগ।

এদিকে, বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ এখন ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন। বন্যাকবলিত অল্প সংখ্যক মানুষ ত্রাণ পেলেও সিংহভাগ মানুষের কাছেই ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। ফলে এসব মানুষ রয়েছেন চরম দুর্ভোগের মধ্যে। বন্যাদুর্গত কিছু এলাকায় মানুষের কাছে ত্রাণের চাল পৌঁছালেও আগুন জ্বালিয়ে চাল সিদ্ধ করার সুযোগ না থাকায় অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। ত্রাণ হিসেবে শুকনো খাবার প্রদানের দাবি তাদের।

এদিকে, রবিবার সিলেট জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জানানো হয়, বন্যার কারণে সিলেটের ১৭৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ১৬১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বন্যায় নষ্ট হয়েছে ৩ হাজার হেক্টর আউশ ও আমনের ফসল। এছাড়া বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৮৯টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :জুলাই ৩, ২০১৭ ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ