২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:৪৮

নৌকার বিসর্জনের বাজনা বাজতে শুরু করেছে :রুহুল কবির রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

‘শেখ হাসিনার অধীনে সহায়ক সরকার হবে’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্য দেশকে গভীর বিপদের দিকে ঠেলে দেয়ার ইঙ্গিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন কখনো সুষ্ঠু হবে না।

রিজভীর দাবি, শেখ হাসিনার অধীনে যদি সহায়ক সরকার হয়, তাহলে সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে একতরফাভাবে নৌকা মার্কা প্রার্থীদের জন্য সহায়ক। অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সেটি সহায়ক হবে না। একইসাথে এবার নৌকার বিসর্জনের বাজনা বাজতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এসব বলেন।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য জনগণের মর্মে আঘাত করেছে। তার বক্তব্য দেশকে গভীর বিপদের দিকে ঠেলে দেয়ার ইঙ্গিত। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, জনগণ স্বৈরাচারি মোঢ় অহমিকার পুনরাবৃত্তি হতে দেবে না।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আবারো একতরফা নির্বাচনের স্বপ্ন শাসকগোষ্ঠিকে ভুলে যেতে হবে। অবৈধ ক্ষমতার দম্ভে অতিকায় স্বেচ্ছাচারী রূপ ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তাই ডাইনোসোরের মত খুব দ্রুতই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শেখ হাসিনার অধীনে অতীতের নির্বাচনসমূহে চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ওইসব নির্বাচনে ভোটারদের শান্তিপূর্ণ ভোট প্রদানের কোনো সুযোগ ছিলো না। সেখানে ছিলো বারুদের গন্ধ, লাশের মিছিল ও রক্তের ¯্রােত। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের একটি খেতাব এখন সর্জন স্বীকৃত ফেনী মার্কা নির্বাচন। জনগণ আর সেই নির্বাচন দেখতে চায় না। এবারের নির্বাচন নিয়ে কোন নীল নকশা হলে, জনগণ যে প্রত্যাঘাত করবে তা আওয়ামী লীগের জন্য চিরস্বরণীয় হয়ে থাকবে। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের আওয়াজ দিয়ে আওয়ামী নেতারা আত্মপ্রসাদ পেতে পারে, কিন্তু সাথে সাথে তাদের দিকে যে আত্মক্ষয়ের লাঞ্চনা তাড়া করছে সেটি তারা উপলব্ধি করতে পারছে না।

রুহুল কবির রিজভী ক্ষমতাসীন দলের উদ্দেশে বলেন, সংবিধানের দোহাই দিয়ে কোনো লাভ হবে না, সংবিধান কোনো হিমালয় পর্বত নয় যে তাকে নড়ানো যাবে না। দেশ ও জনগণের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করা যায়, সংবিধান সংশোধনও সংবিধানের বিধান।

তিনি বলেন, যেভাবে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজিত হয়েছিলো, আওয়ামী লীগ যেভাবে সবার মতামত এমনকি নিজ দল ও জোটের সিনিয়র নেতাদের মতামত উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী নিজের স্বার্থে সংবিধান সংশোধন করে সেটি বাতিল করেছেন। ঠিক সেইভাবেই দল-নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার সংবিধানে সংযোজন করতে কোনো আইনগত বাঁধাই নেই। দল নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের দাবি গণতন্ত্রগামী সকল রাজনৈতিক দলসহ আপামর জনসাধারণের।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ব্যক্তির ইচ্ছা পুরণের চৌর্যবৃত্তি, ভোট ডাকাতি, রক্তাক্ত সন্ত্রাসী উঞ্ছবৃত্তি ও একতরফা নির্বাচনে চক্রান্ত দেশবাসী সকল শক্তি দিয়ে প্রতিহত করবে। সুখ স্বপ্নে বিভোর ভোটার বিহীন সরকারের সৃষ্ট সাময়িক অবক্ষয় ধবংস-হতাশা পেরিয়ে গণতান্ত্রিক শক্তি শাসকের শঠতা ও মিথ্যাচার প্রতিহত করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে লড়াই করে যাবে। আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনা অধীনে হবে না, সেই নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করবে না।

তিনি আরো বলেন, এখনো সময় আছে সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক- এটা আমরা কামনা করি। একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে যাতে সকলে অংশগ্রহণ করতে পারে, সেক্ষেত্রে দল নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে- এটা আমরা প্রত্যাশা করি। এর অন্যথা হলে জনগণ তার পথ বেছে নেবে।

এছাড়া ঈদের সময়ে সাবেক এমপি হাফিজ ইবরাহীমসহ নেতৃবৃন্দ ভোলার বোরহানউদ্দিনে স্থানীয় বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের বাবার কুলখানি অনুষ্ঠান ক্ষমতাসীন দলের হামলায় পন্ড, বরিশালে দলের কেন্দ্রীয় নেতা মেজবাহউদ্দিন ফরহাদ হিজলা বাজার থেকে নেতা-কর্মীদের নিয়ে নিজের বাবার কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাত্রাপথে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলা এবং ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপি‘র যুগ্ম মহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিমের গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুরের রামগঞ্জে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের শাস্তি দাবি করেন রিজভী।

দৈনিক দেশজনতা/এন আর

 

প্রকাশ :জুন ২৮, ২০১৭ ৬:৫০ অপরাহ্ণ