২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১০:৪৮

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেলের নামে আরব বাংলাদেশ ব্যাংক বা এবি ব্যাংকের ৩৮৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিএনপি নেতা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার দুদকের উপপরিচালক শেখ আবদুস ছালাম বনানী থানায় এই মামলা করেন বলে জানান দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, মোরশেদ খান ও তার স্ত্রী ছাড়াও সিটিসেলের প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিবিটিএল) কর্মকর্তা ও ব্যাংকের সংশ্লিষ্টদের আসামি করা হয়েছে মামলায়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন পিবিটিএলের ভাইস চেয়ারম্যান আসগর করিম, পরিচালক নাছরিন খান, প্রধান নির্বাহী মেহবুব চৌধুরী; এবি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন কাইজার আহমেদ চৌধুরী, এম ফজলুর রহমান, শামীম আহম্মেদ চৌধুরী, মসিউর রহমান চৌধুরী, এবি ব্যাংকের ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেণ্ট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা সালমা আক্তার, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মহাদেব সরকার সুমন, এসভিপি ও রিলেশনশিপ ম্যানেজার সৈয়দ ফরহাদ আলম, আরশাদ মাহমুদ খান, মো. জাহাঙ্গীর আলম, সিনিয়র অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (অপারেশন বিভাগ) শাহানুর পারভীন চৌধুরী, এভিপি ও শাখা ব্যবস্থাপক জার ই এলাহী খান ও  রিলেশনশিপ অফিসার মো. কামারুজ্জামান।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, এম মোরশেদ খানের প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড (পিবিটিএল)নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করে এবং অসৎ উদ্দেশ্যে এবি ব্যাংকের চারটি বোর্ড সভায় জামানত ছাড়াই ব্যাংক গ্যারান্টি পায়। এর সঙ্গে এবি ব্যাংকের কর্মকর্তারাও জড়িত ছিলেন। এই গ্যারান্টি ব্যবহার করে পিবিটিএল আটটি ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছে। উল্লিখিত ঘটনার সার্বিক বিশ্লেষণে এটাই প্রমাণিত হয় যে, এম মোরশেদ খান অন্যায়ভাবে আর্থিক লাভের জন্য প্রতারণা, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে প্যাসিফিক টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ব্যাংক গ্যারান্টির আবেদন করলেও তা কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই করা হয়নি।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, দুদকের তদন্তে এবি ব্যাংকের মোট ৩৮৩ কোটি ২২ লাখ ১০ হাজার টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে। তাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় একটি নিয়মিত মামলা করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

এদিকে, দেনার দায়ে গত বছরই বন্ধ হয়ে যায় দেশের প্রথম মোবাইল ফোন প্রতিষ্ঠান সিটিসেল। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (বিটিএল) নামে টেলিকম সেবা পরিচালনার লাইসেন্স পায় সিটিসেল। পরের বছর হংকং হাচিসন টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে বিটিএল নাম বদলে হয় হাচসন বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (এইচবিটিএল)।

১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় আবার পরিবর্তন আসে। তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের মালিকানাধীন প্যাসিফিক মটরস ও ফারইস্ট টেলিকম মিলে এইচবিটিএল-এর শেয়ার কিনে নেয়। কোম্পানির নাম বদলে হয় প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড, ব্র্যান্ডিং শুরু হয় সিটিসেল নামে। বিএনপি সরকারের সময় এ কোম্পানি একচেটিয়া ব্যবসা করে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আরও কোম্পানিকে লাইসেন্স দেওয়া হলে তাদের একচেটিয়া ব্যবসার অবসান ঘটে এবং ব্যবসা পড়তির দিকে যায়। এরপর এই কোম্পানিতে ২০০৪ সালে বিনিয়োগ করে সিঙ্গাপুরের সিংটেল। কিন্তু ব্যবসা আর প্রসার ঘটেনি।

সর্বশেষ তথ‌্য অনুযায়ী, এ কোম্পানির ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক মোরশেদ খানের প্যাসিফিক মোটরস লিমিটেড।

দৈনিক দেশজনতা/এন আর

 

প্রকাশ :জুন ২৮, ২০১৭ ৬:২১ অপরাহ্ণ