লাইফ স্টাইল ডেস্ক:
পবিত্র রমজানে দীর্ঘ একমাস রোজা রেখে ঈদ উদযাপন করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। কিন্তু রোজায় মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন প্রণালীতে যে পরিবর্তন আসে তা শেষ হয় ঈদের দিনে। তাই এ দিন সতর্কতার সঙ্গে খাবার খেলে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
ঈদের দিন প্রায় প্রতি বাড়িতেই মিষ্টি ও মিষ্টান্নের ব্যবস্থা করা হয়। যেমন—সেমাই, পুডিং, হালুয়া, জর্দা, পায়েস, কাস্টার্ড ইত্যাদি। এর পাশাপাশি ঝালযুক্ত খাবারও থাকে।
ঈদের দিন নারিকেলের ব্যবহার শহরের চেয়ে গ্রামেই বেশি। সেমাই বা গুড়ের পায়েসের সঙ্গে নারিকেলের ব্যবহার দেখা যায়। এ ছাড়া মুরগি, খাসির মাংস ও পোলাও রান্নার ক্ষেত্রে নারিকেলের দুধ ব্যবহার করা হয়। নারিকেল সহজপাচ্য, ক্যালরি ও চর্বিসমৃদ্ধ। সুস্বাদু তো বটেই। তবে যাদের রক্তে কোলেস্টেরল ও ট্রাই গ্লিসারাইডের পরিমাণ বেশি এবং যারা হৃদরোগে আক্রান্ত, তাদের নারিকেল না খাওয়াই ভালো।
মিষ্টি খাবার তৈরিতে অথবা পোলাও-বিরিয়ানির ক্ষেত্রেও পেস্তা বাদাম, কিশমিশের ব্যবহার হয়। এগুলো যেমন পুষ্টিকর, তেমনি খাবারের স্বাদ ও শোভা বাড়ায়। ঈদের রান্নায় দুধ ও দইয়ের ব্যবহারও হয়ে থাকে। দুধের প্রোটিন উত্কৃষ্ট মানের। মানুষের অন্ত্রে অনেক সময় জীবাণু সংক্রমণের ফলে উদ্বায়ু, কোষ্ঠকাঠিন্য, গজানো, পচন ইত্যাদির সমস্যা দেখা যায়। দইয়ের ভেতর ল্যাক্টোবেসিলি বুলগেরিকাস নামের ব্যাকটেরিয়া এই অসুবিধাগুলো দূর করতে সহায্য করে।
রান্নার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত, খাদ্যের পুষ্টিমান যেন বজায় থাকে। যেহেতু ঈদে মাংস রান্নাও বেশি হয়, তাই খেয়াল রাখতে হবে মাংস যেন ভালো করে সিদ্ধ হয়, না হলে হজমের সমস্যা হবে।
এবার ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে বর্ষাকালে। তবুও আবহাওয়া বেশ গরম। তাই এই গরমের সময়টা মাথায় রেখেই খাবারের মেন্যু নির্বাচন করা উচিত।
ঈদের খাবারের আয়োজনে ফালুদা, লাচ্ছি, ফলের সালাদ, ফলের জুস ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে। এতে দেহের প্রশান্তির পাশাপাশি পেটের আরাম হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন ফল দিয়ে কাস্টার্ড অথবা আস্ত ফল অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এতে খনিজ লবণ ও ভিটামিনের অভাব পূরণ হয়।
ঈদের ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবারগুলো বেশ গুরুপাক। এ জন্য এসব খাবার তৈরি করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে বেশি ঝাল-মসলা ও ঘি-ডালডার ব্যবহার না হয়। এ ছাড়া যাদের পেটের সমস্যা আছে, তাদের রোস্ট বা রেজালার পরিবর্তে কোরমা খাওয়া যেতে পারে। পোলাও, বিরিয়ানি খেতে অসুবিধা থাকলে পোলাওর চালের ভাত বা ফ্রায়েড রাইস করেও খাওয়া যেতে পারে। ডায়াবেটিসের জন্য যাঁদের চিনি, গুড় খাওয়া নিষেধ, তাঁরা বিকল্প চিনি দিয়ে মিষ্টান্ন তৈরি করে খেতে পারেন।
এই ঈদে মোটামুটি ভালোই গরম থাকছে বলে গরমে হজমে সমস্যা হওয়ার প্রবণতাও বেশি থাকতে পারে। এ জন্য অবশ্যই খাবারের মেন্যুতে পর্যাপ্ত পানীয় রাখুন। খাওয়ার পর অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। পানীয়ের মেন্যুতে রাখতে পারেন মাল্টা, আনারস কিংবা তেঁতুলের টকমিষ্টি শরবত, মাঠা ও দইয়ের লাবাং, লাচ্ছি ইত্যাদি। এসব খাবার খেতেও সুস্বাদু আর পুষ্টিকর। খাওয়ার আধা ঘণ্টা পর টক দইয়ের সঙ্গে সামান্য চিনি ও লবণ দিয়ে ব্লেন্ডারে মাঠা তৈরি করে নিতে পারেন। এতে গ্যাসের সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন। চাইলে ঠাণ্ডা পানিতে লেবুর রস, চিনি ও লবণ দিয়ে শরবত বানাতে পারেন। লেবুর শরবত গরমে প্রশান্তি দেবে, হজমেও সহায়তা করবে।
খাবার গ্রহণে সতর্কতা
ঈদের দিন যত ভালো ও সুস্বাদু খাবারের আয়োজন থাকুক না কেন, মাত্রাজ্ঞান রেখে কিছুটা বিরতি দিয়ে, নিজ নিজ স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খাবার গ্রহণ করা উচিত। যেমন—যাঁদের হৃদরোগ আছে, তাঁদের চর্বি ও ঘি পরিহার করতে হবে। যাঁদের কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাঁদের মাছ-মাংস কম খেতে হবে। যাঁদের ডায়াবেটিস আছে তাঁরা চিনি দিয়ে রান্না করা খাবার থেকে বিরত থাকুন। যাঁদের গ্যাসের সমস্যা আছে তাঁরা নারিকেল দিয়ে তৈরি খাবার খালি পেটে খাবেন না। এ ছাড়া দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার ও অতি ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকুন।
এক মাসের অনভ্যস্ত পাকস্থলী হঠাৎ করে অনেক খাবারের চাপ সহ্য করতে পারে না বলে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেক সময় হাসপাতালে ভর্তি হতেও দেখা যায়। এ জন্য খাবার হবে পরিমিত, স্বাস্থ্যসম্মত ও সহজপাচ্য। তবেই ঈদের আনন্দটুকু উপভোগ করা যাবে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ