বছর ঘুরে পবিত্র ঈদুল ফিতর আবার আমাদের দ্বারে উপস্থিত। আজ চাঁদ উঠলে কাল হবে ঈদ। না হলে ২৭ জুন বাংলাদেশে পালিত হবে ঈদুল ফিতর। মহাআনন্দের এই দিন উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ এডভোকেট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দেশবাসীর উদ্দেশে বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা দেশবাসী ও বিশ্বের সব মুসলমানকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে কামনা করেছেন সবার সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।
ঈদুল ফিতর ইসলাম ধর্মবলাম্বীদের সবচেয়ে বড়ো ধর্মীয় উৎসব। একমাস সিয়াম সাধনার পর অনাবিল আনন্দের বার্তা দিয়ে উপস্থিত হয় ঈদুল ফিতর। এদিনে ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবাই এক সাথে এক কাতারে দাঁড়িয়ে আদায় করে ঈদের নামাজ। ঘরে ঘরে চলে সেমাই-জর্দা, ফিরনি, পেলাও কোর্মাসহ নানাবিধ উপদেয় খাদ্যের মাধ্যমে অথিতি আপ্যায়ন। হিংসা, বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে এ দিনে সবাই কোলাকুলি করে মিলেমিশে একাকার হয়ে যান। ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দের এক অনন্য সাধারণ মেলবন্ধন সৃষ্টি করে ঈদুল ফিতর। পবিত্র ঈদুল ফিতর শুধু একটি ধর্মীয় উৎসবই নয়, তা মানুষকে মানবিক উৎকর্ষ সাধনের দিক নির্দেশনাও দেয়। ছোট, বড় ভেদাভেদ ভুলে এক সাথে এক কাতারে নামাজ আদায় সাম্য মৈত্রীর বাণীকেই উর্ধে তুলে ধরে। এ ছাড়া এই ঈদে সামর্থ্যবানদের ওপর যাকাত ও ফিতরা প্রদানের নির্দেশ রয়েছে আল্লাহর। যাকাত ও ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে সমাজের অপেক্ষাকৃত দরিদ্র ও দুস্থ মানুষদের ঈদের আনন্দে শামিল করার মধ্য দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব। প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য তার প্রতিবেশীর খোঁজ খবর নেয়া। ঈদের দিনে যাতে কেউ অভুক্ত না থাকে, বঞ্চিত না হয় ঈদের আনন্দ থেকে, সেদিকে দৃষ্টি দেয়া সকলের দায়িত্ব।
বাংলাদেশে এবার ঈদুলফিতর এসেছে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে। হাওড়ে অকাল বন্যা, উপকূলে ঘূর্ণিঝড় এবং সর্বেেশষ পার্বত্য জেলা সমূহে পাহাড় ধসের ঘটনা এক বেদনাবিধুর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ওইসব ঘটনায় স্বজনহারা মানুষ আজো বিলাপ করছে। বাড়ি-ঘড় সহায়-সম্বল হারিয়ে তারা আজ নিঃস্ব, অসহায়। এ ঈদের আনন্দ তাদেরকে হয়তো স্পর্শই করবে না। পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, আইন শ”ংখলার চরম অবনতি,সৃষ্টি করেছে অসহনীয় এক পরিবেশ। জিনিপত্রের অগ্নিমূল্যের কারণে মানুষের প্রত্যাহিক জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ যখন দুষ্কর, সেখানে ঈদের আনন্দে অতিরিক্ত খরচ করা অনেকের পক্ষেই হয়তো সম্ভব হবে না। ফলে ষোল কোটি মানুষের এক বিশাল অংশ যে এবার ঈদুল ফিতরের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে সে কথা না বললেও চলে। তবে, আমরা যদি সচেতন হই, মানুষের সহায্যের জন্য নিজের হাত প্রসারিত করি, তাহলে ওইসব অসহায় মানুষের কাছেও এ ঈদকে অর্থবহ করে তুলতে পারি। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর বিত্তবান ব্যক্তিরা এ ক্ষেত্রে মানবিক এ দায়িত্বটি পালন করতে পারেন।
এদিকে ঈদে ঘরমুখো মানুষের সে বিড়ম্বনার খবরতো আছেই। সরকারের কর্তাব্যক্তিদের হাকডাক অনেক শোনা গেলেও ঈদযাত্রীদের ভোগান্তির কোনো অবসান হয়নি। দেশের সড়ক মহাসড়কের অবস্থা যানবাহনের অপ্রতুলতা. দ্বিগুন তিনগুন ভাড়া ঘরমুখো মানুষকে ফেলেছে কঠিন পরিস্থিতির মুখে। বাস, লঞ্চ, ট্রেনের ছাদে বসে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও মানুষ গ্রামের দিকে ছুটছে স্বজনদের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে।
ঈদুল ফিতর আনন্দের আবেশ ছড়িয়ে দিয়েছে সর্বত্র। দুঃখ কষ্টকে বুকে চেপে ঈদের দিনটিকে উপভোগ করতে সচেষ্ট হবেন সবাই। আমাদের সামাজিক সংস্কৃতি সেটাই বলে। একটি আনন্দ উৎসব তখনই পরিপূর্ণতা পায়, যখন তা সার্বজনীন রূপ লাভ করে। ঈদুল ফিতর একটি সার্বজনীন ধর্মীয় উৎসব। তবে, তাকে পূর্ণতা দিতে হলে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সমাজের অসহায় দরিদ্র মানুষগুলোর দিকে বাড়িয়ে দিতে হবে সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত। সবাই ভাগাভাগি করে নিতে হবে ঈদের আনন্দকে। তাহলেই ঈদ আক্ষরিক অর্থেই ঈদ হয়ে উঠবে।
অনাবিল আনন্দের এই দিনে আমরা দেশবাসী সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। ঈদুল ফিতর সবার জীবনে বয়ে আনুক শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধি, এদেশের প্রতিটি গৃহে প্রবাহিত হোক শান্তি সুখের অমিয় ধারা। সবাইকে ঈদ মোবারক।