রোজার শেষে আসে পবিত্র ঈদ। ঈদের সঙ্গে ভ্রমণ এবং ভোজনের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বলা যায় ঈদের সঙ্গে ভ্রমণ এক অবিচ্ছেদ্য বিষয়। একইভাবে ঈদ মানে খাবারের সম্ভার। এই ভ্রমণে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ভ্রমণের সময় কেউ যাতে অসাবধানতাবশত আঘাতপ্রাপ্ত না হয়, বাইরের খাবার খেয়ে ও পানি পান করে অসুস্থ হয়ে না পড়ে সে বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত। তা না হলে পুরো ঈদের আনন্দ আগেভাগেই মাটি হয়ে যেতে পারে। ভ্রমণের সময় প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় সঙ্গে নিতে হবে। বাস, ট্রেন ও লঞ্চে ভ্রমণে জানালার পাশে অতিরিক্ত বাতাসের ঝাপটা থেকেও সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ধরনের ছোটখাটো বিষয়ও মাথায় রাখা উচিত। ঈদভ্রমণে ওষুধ ঈদের ভ্রমণে অধিকাংশই গ্রামের বাড়িতে যান। যেখানে অনেক সময় সাধারণ ওষুধও পাওয়া যায় না। তাই সম্ভাব্য অসুস্থতার কথা বিবেচনায় রেখে সাধারণ কিছু ওষুধপত্র সঙ্গে নিয়ে যাওয়া খুবই বুদ্ধিমানের কাজ। সামান্য কাটাছেঁড়ায় স্যাভলন, ব্যান্ডেজ ইত্যাদি লাগে-এগুলো সঙ্গে নেওয়া ভালো। এগুলো কোনো কঠিন কাজ নয়। একটি ফার্স্টএইড বক্স নিজের মতো তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে। যারা নিয়মিত ওষুধ খান, তারা ঈদভ্রমণে সঙ্গে করে ওষুধ নিয়ে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রোগী না হয়ে ভ্রমণে প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধপত্র আপনার সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া উচিত সাধারণ কিছু রোগের জন্য। ঈদে স্বাস্থ্যচিন্তা পেটের গণ্ডগোল, পেটে গ্যাস, বদহজম, সাধারণ সর্দি-কাশি, বমি, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, মাসিকের ব্যথা ইত্যাদির জন্য প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ সঙ্গেই রাখতে পারেন। এসব ওষুধ সঙ্গে রাখার আরেকটি কারণ হল, প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসব ওষুধ অধিকাংশ সময়েই পাওয়া যায় না। কাজেই ভ্রমণের আগে সেসব ওষুধ সঙ্গে নেওয়া যেতে পারে। ওষুধের এই তালিকা তৈরিতে আপনার পারিবারিক চিকিত্সকই আপনাকে সাহায্য করতে পারবেন। একই সঙ্গে কয়েকটি হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্সসহ আপনার পরিচিত কয়েকজন চিকিত্সকের ফোন নম্বর টুকে নিতে ভুলবেন না। অসুখ নিয়ে ঈদ আমাদের দেশে উত্সব মানেই খাবার-দাবার। এটাই ঐতিহ্য। ঐতিহ্য থাকবে, তবে শরীরটার দিকেও লক্ষ রাখতে হবে। উত্সবে অনেক কিছুকেই প্রশ্রয় দেই, কিছুটা দিতেও হয়, তবে এক দিনের জন্য হলেও নিজের রোগের কথা ভোলা যাবে না। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা যদি এখন মিষ্টান্ন বেশি খান, তেল, চর্বি, মসলা দিয়ে রান্না করা মাংস অন্যদের মতোই উপভোগ করেন, তাহলে বিপদ হতে পারে। ঈদে ডায়াবেটিক ও কিডনি রোগী উত্সব মানেই খাবার-দাবার। তাই ডায়াবেটিস থাকলে সতর্ক থাকতে হবে। ডায়াবেটিস আছে বেশ কিছু দিন, এবার কিডনি একটু ধরেছে। ক্রিয়েটিনিন মান বাড়তি। ডাক্তার বলেছেন ৪০ গ্রামের বেশি প্রোটিন নয়, মাছ বা মাংস দিনে মাত্র দুই টুকরো। তিনি যদি খাসির মাংসের বাটি নিয়ে বসেন এবং দুই বেলাই চার-ছয় টুকরো গলাধঃকরণ করেন দিন কয়েক, তাহলে সমস্যা তো হতেই পারে। আর তখন উত্সবের পুরো আনন্দ মাটি হয়ে যাবে। নিজের তো বটেই, স্বজনদেরও। ঈদে হার্টের রোগীর সাবধানতা উচ্চ রক্তচাপের রোগী, রক্তেও কোলেস্টেরল বেশি। ওষুধ খাচ্ছেন রক্তচাপ কমানোর জন্য, সেই সঙ্গে রক্তে চর্বি কমানোর। তাকে যদি ঈদে দুই-তিন বেলা বিরিয়ানি, রেজালা, গরুর মাংস ভুনা খেতে দেওয়া হয়, সেই সঙ্গে আচার, তাহলে বিপদ তো হতেই পারে। আচার যে খুব লোনা এবং রক্তচাপ বেশি হলে খাওয়া বেশ বারণ, তখন তা আর মনে থাকে না। এর সঙ্গে নুন মেশানো ইলিশের শুঁটকি, তাহলে সাঁই সাঁই করে উঠবে রক্তচাপ! ঈদে পরিমিত ভোজন উত্সবের আনন্দে তারা খাবেন বটে, তবে রয়েসয়ে। টেবিল-চামচের এক চামচ বিরিয়ানি চলবে। এক-আধটা মোরগ বা খাসির টুকরো চলতে পারে। পায়েস চেখে দেখলে চলে। উত্সবের স্বাদ তো নেওয়া হল, তবে অতিরিক্ত নেওয়া হল না। কেউ যদি বলেন, নিন না আরও, তখন বিনয়ের সঙ্গে ‘না’ বলুন। পরিমিত ভোজন কেবল ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীর জন্য কেন, সবার জন্য ভালো। বেশি খাওয়া ভালো নয় জীবনের সর্বত্র মাত্রা ছাড়লেই বিপদ হয়। তাই আনন্দ তো করবই, খাব, ফুর্তি করব। তবে মাত্রা ছাড়িয়ে নয়, পরিমিত। যাদের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ, তাদের জন্য পরিমিত আহার বড়ই প্রয়োজন। ঈদের দিন খাবেন তবে অল্প করে। সারাদিনে তিনবারে যেটুকু খেতেন, সেটুকুই ছয়বারে খাবেন। এতে সবার বাসায় খাওয়াও হল আর শরীরটাও ঠিক থাকল।দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ
ঈদের স্বাস্থ্যের সাত সতেরো
নিজস্ব প্রতিবেদক: