আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
কাতারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের ওপর সাইবার হামলার পেছনে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নকারী প্রতিবেশি দেশগুলোর হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দোহা। চলমান সঙ্কটের জন্য এই সাইবার হামলাকে দায়ী করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার দোহায় এক প্রেস কনফারেন্সে কাতারের এটর্নি জেনারেল আলী বিন ফেতেইজ আল মারি এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে হ্যাকিংয়ের বিষয়টি কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নকারী দেশগুলোর মধ্য থেকে করা হয়েছে।’
প্রথমবারের মতো কোনো দেশের বিরুদ্ধে সাইবার হামলার জন্য কাতারের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত করা হলো।
২৪ মে কাতার নিউজ এজেন্সির ওয়েবসাইট হ্যাক হয় বলে কাতারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। এতে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির একটি বিস্ফোরক মন্তব্য পোস্ট করা হয়; যা এই অঞ্চলের কূটনৈতিক সঙ্কটের পিছনে মূখ্য ভূমিকা পালন করে।
এতে ইরান, ফিলিস্তিনি ইসলামিস্ট গ্রুপ হামাস, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে সংবেদনশীল রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করা হয়।
কাতারের বাইরের সংবাদ সংস্থা কর্তৃক এই মন্তব্য দ্রুত বাজেয়াপ্ত করা করা হয়। তবে দোহার পক্ষ থেকে বলা হয়, এগুলো মিথ্যা ছিল।
মারি বলেন, ‘এই হ্যাকিংয়ের জন্য আই-ফোন উৎপাদনকারী দেশগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে এবং তার প্রমাণ আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এসব দেশগুলোর প্রতি অভিযোগের আঙ্গুল নির্দেশ করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।’
মারি যদিও তার এই অভিযোগের পিছনে নির্দিষ্ট কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জোর করা হলে তিনি জানান, প্রতিবেশি দেশগুলো থেকে এই হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে।
তিনি জানান, এই হ্যাকিংয়ের পিছনে একাধিক দেশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
ওই সাইবার হামলার ঠিক কয়েক দিন পরেই সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মিশর ও অন্যান্য মিত্র দেশগুলো ৫ জুন কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। তারা অভিযোগ করেন যে, দোহার চরমপন্থী সংগঠনগুলোকে সমর্থন প্রদান করছে। কিন্তু কাতারের পক্ষ থেকে এই দাবি অস্বীকার করা হয়েছে।
কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতার পাশাপাশি অন্যান্য প্রদক্ষেপও দেশগুলোর পক্ষ থেকে নেয়া হয়। এর মধ্য কাতারের একমাত্র ল্যান্ড সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়, দেশগুলোর আকাশসীমায় কাতারের বিমানের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয় এবং তাদের বিমানবন্দরগুলো থেকে কাতারি নাগরিকদের গমন প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়।
একই সঙ্গে কাতারের নাগরিকদের ১৪ দিনের মধ্যে তাদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয় হয় এবং দোহাতে বসবাসরত সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রায় ১১ হাজার নাগরিককে নিজ নিজ দেশে ফিরে আসার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেধে দেয়া হয়। গত সোমবার এই ডেডলাইন অতিক্রম করেছে।
হ্যাকের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট ফোন নম্বর খুব শিগগিরই তারা প্রদান করতে সক্ষম হবেন বলে মারি জানান।
কাতারের তদন্তকারীরাও সৌদি নেতৃত্বাধীন সহযোগী দেশগুলোতে ব্যবহৃত ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীর সন্ধান পেয়েছেন বলে তিনি জানান।
মারি বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে তথ্য পাঠিয়েছি এবং আমরা তাদের প্রতিক্রিয়া পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।’
তিনি আর বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের কাছে অত্যন্ত স্পষ্ট।’
এফবিআই এবং ইউনাইটেড কিংডম থেকে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। এরপর কাতার সরকারও তা তদন্তের আদেশ দেন।
মার্কিন একটি গণমাধ্যমের রিপোর্ট দাবি করা হয় যে, রাশিয়ার হ্যাকাররা এর জন্য দায়ী। তবে, মস্কো এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সূত্র: এএফপি
দৈনিক দেশজনতা /এমএম