নিজস্ব প্রতিবেদক:
যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন কবলিত দরিদ্র জেলা জামালপুরে সুবিধা বঞ্চিত ছিন্নমূল শিশুদের মাঝে নেই ঈদ আনন্দ। বাব-মা’র হাত ধরে ধনীর দুলালেরা দু’হাতে ঠাসা শপিং ব্যাগ নিয়ে মার্কেট-বিপণী বিতানগুলোতে যখন ঘুরে বেড়ায় ঈদ বাজারে কেনাকাটার উৎসবে। সেই দৃশ্য দেখে সুবিধা বঞ্চিত শিশুরা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে। ওদের মাঝে নেই ঈদ আনন্দ।
নতুন জুতা-কাপড় কিনে দেওয়ার সামর্থ নেই ছিন্নমূল এসব শিশুদের বাবা মা’র। আর তাই পরের কেনাকাটা দেখেই মনে ঈদের আমেজ নিয়ে মার্কেট গুলোর এদিক সেদিকে ঘুরাফেরা করছে। ঈদ বাজারে অবস্থা সম্পন্ন ছেলে মেয়েদের কেনাকাটার উৎসব দেখে ওদের চোখেমুখে না পাওয়ার বেদনা ফুটে উঠেছে।
আমাগো বাপ মা যদি নয়া জামা কাফঁর কিনন্যা দিবার পাইতো, কতো মজাইনা অইতো ? ফটিক, কাদের, মনু, ছালাম, মাজন ও মজনুসহ ওরা ১০ জন ছিন্নমূল শিশু এমন করেই তাদের আক্ষেপ প্রকাশ করেন। থাকে বটতলা, গেটপাড় রেল বস্তি ও মুসলিমাবাদ বস্তিসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে। একাধিক নদী ভাঙনের শিকার হয়ে বাবা-মা’র হাত ধরে এখানেই ওদের আশ্রয়। কারো বাবা-মা দিন মুজুরি, হোটেল রেস্তোরার বয় ও মানুষের বাড়িতে ঝি এর কাজ।
অনেকের বাবা ইট ভাঙা, রিকশা ও ঠেলাগাড়ি চালনাসহ কায়িক শ্রমে জড়িয়ে আছে। সমর্থ নেই ঈদে সন্তানের হাতে নতুন জামা কাপড় তুলে দিতে। এসব দরিদ্র পরিবারের শিশুরা এসেছিল ঈদ মার্কেটে কেনাকাটার উৎসব দেখতে। শহরের কথাকলি মার্কেটে পরিবর্তন ডটকমের সাথে কথা হয় বটতলা রেলবস্তির দশ বছর বয়সী ফটিকের সাথে।
আক্ষেপের সুরে বলে, নয়া জামা কাফর কিনমু ট্যাহা পামু কই, দেখবার আইছি, বাপে ইস্কা চালায়, ঘরে দুই মা ও বাই বোন মিল্যা ছয় জন। আমগো ঠিক মতন খাওন দিবার পাইনা, নয়া কাফর চোপড় দিবু ক্যামনে? আল্লা ক্যারে আমগো গরিব বানাইছে। স্যার হুদা (শুধু) দেখবার আইনাই, কেউ যদি কিছু দেয় হেয় আশায় মার্কেটে ঘুরিতাছি। কথাগুলো বলতে বলতে দু’চোখ বেয়ে অঝোরে পানি পড়ছে শিশুটির।
ঈদের দিন ক্যামনে কাটে জানতে চাইলে শিশুটি বলে, সেমাই সুজিঁ খাই, নয়া কাফর যদি জুটে তাইলে পড়ি নাইলে পুড়ান কাফর পইরাই এদিক সেদিক ঘুইরা বেড়াই। মানষের আনন্দ দেহি ঈদ চইল্যা যায়। শিশু ফটিকের মতো ছিন্নমূল শিশু কাদের, মনু, ছালাম, মাজন ও মজনুসহ ঈদ আনন্দ বঞ্চিত শিশুগুলো নতুন জুতা কাপড় কিনতে না পেরে এভাবেই আক্ষেপের সুরে এমন সব কথা বলেছে।
এ ব্যাপারে শিশু সুরক্ষা নেটওর্য়াক জামালপুরের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ইসলামের আলোকে ধনি গরিবের ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির কথা থাকলেও দরিদ্র এ জেলায় বাস্তবতার চিত্র ভিন্ন। যাদের আছে তারা অপচয় করছে আর সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের কপালে জুটছে না এক টুকরো নতুন কাপড়। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে এসব ছিন্নমূল শিশুরা ঈদের আনন্দ অনেকটাই ভাগাভাগি করে নিতে পারবে এই হোক আমাদের সামাজিক অঙ্গিকার।
রমজানের শেষের দিনে ইফতারির পর পশ্চিম আকাশে যখন চাঁদ উঠবে, চাঁদ দেখে ঈদের আনন্দে ভাসবে পুরোদেশ পাটকা-বাজিতে আলোক উজ্জল হয়ে উঠবে আকাশ আর বেজে উঠবে ‘রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। ঘরে বইরে আনন্দের বন্যা। সেই ঈদ আনন্দের চাঁদও ওদের কাছে ঝলছে যাওয়া এক ফাঁলি রুটি। যখন ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা তখন ছিন্নমূল এসব পরিবারের ঘরে চলে কান্নার রোল। এ কান্না নতুন জামা কাপড়ের বায়নার। এসব শিশুদের অসহায় বাবা-মা সন্তানের আবদার মেটাতে না পেরে দু:খ্যে কষ্টে উল্টো পিটুনি দেয়। ঈদ পূর্ব এমনই চিত্র ছিন্নমূল মানুষের ঘরে ঘরে।
সমাজের বিত্তবানরা যেন এসব ছিন্নমূল শিশুদের প্রতি একটু সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেয়। পাশে দাঁড়ায় সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের। তাহলে, ঈদে এসব ভাগ্য বিড়ম্বিত শিশুদের গাঁয়ে উঠবে নতুন জামা। ফিরে পাবে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির সুযোগ। মুখে ফুটবে খুশির ঝিলিক।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ