আন্তর্জাতিক সংবাদ
সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি ও অর্থ ব্যয় কমিয়ে আনতে চাইছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর প্রশাসন চাইছে, জঙ্গিবাদসহ বৈশ্বিক সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে মিত্ররা খরচ এবং নিজেদের অংশগ্রহণ আরও বাড়াক।
সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির খসড়া গত শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হাতে আসে। ১১ পৃষ্ঠার ওই খসড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয়বহুল ‘সবিস্তার’ সামরিক প্রতিশ্রুতি এড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এতে স্বীকার করা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদের হুমকি কখনোই পুরোপুরি দূর করা সম্ভব নয়।
কয়েক মাসের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন এই নীতি প্রকাশ করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই খসড়ায় বলা হয়, ‘বৈশ্বিক জিহাদি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করার পাশাপাশি সন্ত্রাসবিরোধী লক্ষ্য অর্জনে মার্কিন “রক্ত ও সম্পদের” খরচ কমানোর দিকেও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন আমাদের।’ এতে আরও বলা হয়, ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের লক্ষ্য অর্জনে ব্যয়বহুল, বড় পরিসরের সামরিক অভিযান এড়ানোর উপায় খুঁজে বের করব আমরা এবং সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে রুখতে সহযোগীদের আরও দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারে ক্রমবর্ধমানভাবে জোর দেব।’
নতুন এই খসড়ায় স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে, ‘কোনোভাবেই সন্ত্রাসবাদকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করা সম্ভব নয়।’
হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র মাইকেল অ্যান্টন এ ব্যাপারে বলেন, সার্বিকভাবে অগ্রসর হওয়ার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পুরো জাতীয় নিরাপত্তা নীতিই ঢেলে সাজাতে চাইছে প্রশাসন। এর মধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী মিশনগুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হলেও ২০১১ সালের পর এ ব্যাপারে কোনো নীতিই প্রণয়ন করা হয়নি।
মাইকেল অ্যান্টন আরও বলেন, ‘নতুন এই নীতিতে আমাদের জাতি, নাগরিক, বিদেশের মাটিতে স্বার্থ এবং মিত্রদের জন্য প্রধান হুমকি হয়ে ওঠা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে দমনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, এই নীতিতে অর্জনযোগ্য ও বাস্তবিক লক্ষ্য এবং নির্দেশনা থাকবে।
২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় ইসলামি চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য বড় ইস্যু ছিল। নির্বাচনী বিজয়ী হয়ে গত ২০ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার পর তিনি উত্তরসূরি বারাক ওবামার প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী সামরিক অভিযান বাড়ানোর পরিকল্পনাই অনুসরণ করছিলেন। সেই সঙ্গে ইয়েমেন ও সোমালিয়ায় সন্ত্রাসীদের ওপর আঘাত হানতে পেন্টাগনকে আরও বেশি ক্ষমতা দিয়েছিলেন তিনি।
বর্তমানে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইয়েমেনসহ আরও কয়েকটি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাসদস্যরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াইয়ে রয়েছে। খসড়ায় এসব অভিযানের ব্যাপারে তেমন কোনো উল্লেখ না থাকায় বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে সামরিক অভিযান এড়ানোর লক্ষ্য ট্রাম্প কীভাবে অর্জন করেন, তা-ই এখন দেখার বিষয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে অল্পসংখ্যক সেনা সিরিয়া ও ইরাকে যোগ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যদি আপনি কোথাও অতিরিক্ত (সেনা ও সরঞ্জাম) যোগ হতে দেখেন, তাহলে সেগুলো এই (খসড়া) নীতিতেও অন্তর্ভুক্ত হবে।’